বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে মাঠে নামানোর প্রস্তাব দেন

এসএম মিরাজুল কবীর টিটো প্রকাশিত: ৮ আগস্ট , ২০২৪ ১৭:০৪ আপডেট: ৮ আগস্ট , ২০২৪ ১৭:০৪ পিএম
বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে মাঠে নামানোর প্রস্তাব দেন
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, মানুষের মাঝ থেকে আতঙ্ক দূর করে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশকে সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে। সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি মসজিদের মাইক থেকে আহবান জানানো হবে। প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সব দলের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করেছেন। সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে বৈষম্য দূর করতে সবাইকে সমানভাবে দেখতে হবে।

সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় বুধবার জেলা প্রশাসন আয়োজিত এক মতবিনিময় সভা  কালেক্টরেট সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে মাঠে নামানোর প্রস্তাব দেন।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, মানুষের মাঝ থেকে আতঙ্ক দূর করে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশকে সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে। সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি মসজিদের মাইক থেকে আহবান জানানো হবে। প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সব দলের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করেছেন। সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে বৈষম্য দূর করতে সবাইকে সমানভাবে দেখতে হবে।

যশোরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, আমাদের কৃতকর্মের কারণে আমাদের ওপর সমাজের মানুষ আস্থাহীন হয়ে পড়েছেন। যার ফলাফল আমরা পেয়েছি। তারপরও পুলিশ ছাড়া সমাজ চলতে পারে না। এই বাহিনীর সব সদস্য খারাপ না। কিছু সদস্য খারাপ।তিনি বলেন, যেসব পুলিশ সদস্য অন্যায় করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উদাত্ত আহবান জানাই-আমরা আপনাদের স্বজন।

দেশের কল্যাণে যাতে কাজ করতে পারি ও সমাজের মানুষ যেন নায্য অধিকার পায় সেই চেষ্টা করা হবে। এজন্য সকলের সহযোগিতা চাই। সত্যিকার ন্যায়ের ভিত্তিতে কাজ করতে পুলিশ বাহিনীকে সাজাতে চাই। আমাদের ক্ষমা করে বুকে তুলে নেবেন। রাজনীতি করে ক্ষতিগ্রস্ত হই; এটা আমরা চাই না। যশোরের মানুষের সহনশীলতায় আমাদের ওপর কোনো সংঘাত বা হামলা হয়নি।লে. কর্নেল মোস্তফা কামাল বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সবার আশ^াসের ভিত্তিতে পুলিশকে মাঠে নামাতে হবে। বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া যশোরের পরিবেশ পরিস্থিতি ভালো আছে।

জাবির হোটেলে ছাড়া সেরকম কোনো বড় ধরণের সহিংস ঘটনা ঘটেনি। সহিংসতা রোধে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ফোরাম গঠন করলে মানুষের মাঝে আতঙ্ক কমবে। তিনি বলেন, কেশবপুরে সেনা ক্যাম্প রয়েছে। ক্যাম্পটি কেশবপুর ও মণিরামপুরের মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করবে। অভয়নগরেও ক্যাস্প স্থাপন করা হয়েছে। এটি যশোর সেনা নিবাস থেকে বাকি উপজেলাগুলোর নিরাপত্তা রক্ষার কাজ করবে।  আতঙ্ক দূর করতে পেট্রোলিং ও মসজিদে মাইকিং করা দরকার।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ১৭ বছর আগে যশোর সকলের যশোর ছিল না। যশোর ছিল একটি রাজনৈতিক দলের। এ কারণে মানুষের বাক স্বাধীনতা ছিল না। সেটা মুক্ত করেছেন ছাত্ররা। সকলকে উদার হতে হবে।তিনি বলেন, সরকার পতনের আগের দিন পর্যন্ত যশোরে কোনো সংঘাত ঘটেনি। সরকার পতনের পর বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে।

আমরা বৈষম্য দূর করে গণতান্ত্রিক দেশের জন্য সংগ্রাম করেছি। সেটা সফল করেছেন ছাত্ররা। দেশের মানুষ এটি দেরিতে বোঝায় রক্তপাত ঘটেছে।তিনি বলেন, হোটেল জাবিরের ঘটনা মর্মান্তিক। এ ঘটনায় আহত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা পুলিশ ও সেনা বাহিনীকে সহযোগিতা করবো।জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, সমাজের অবক্ষয় নিয়ে আলোচনা করলে সেটি দূর হবে না। দেশের সংবিধান সংস্কার করা প্রয়োজন। শুধুমাত্র বক্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সকলকে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, যশোরে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। মানুষ নিরাপদে থাকবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় করেছি। মানুষকে নিরাপত্তা দিতে মাইকিং করা হচ্ছে। দলের সাথে সম্পৃক্ত কেউ যদি কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে; শুধুমাত্র বহিষ্কার নয় সাংগঠনিক ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিরাপত্তা দিয়ে দোকান খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশকে বাইরে আনতে হবে।

জুলাই মাসকে শোকের মাস ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু মোর্তূজা ছোট। তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই দাবি রাষ্ট্রপতির কাছে জানিয়েছেন। এই দাবি আমি সমর্থন করেছি। যশোরের মানুষ নির্ভয়ে ঘুমাতে পারছেন না। তাই সবাইকে এক হতে হবে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক জেলা আমীর মাওলানা আজিজুর রহমান বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ক্ষতিপুরণ দেয়াসহ তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো উচিত। পুলিশের দায়িত্ব চলমান ও সচল রাখতে হবে। উস্কানিমূলক কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। মানুষের মাঝ থেকে আতঙ্ক দূর করতে মসজিদ থেকে মাইকিং করতে হবে। নাশকতার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

জামায়াতে ইসলামের জেলা সেক্রেটারি রেজাউল করিম বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পুলিশকে বাইরে আনতে হবে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের চেয়ে পুলিশের কাছে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মানুষজন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।একই কথা বলেন জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মো. ইসহক। তিনি বলেন, রাস্তায় কোনো পুলিশ নেই। ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে দোকান খুলছে না। মন্দিরে পাহারা দেয়া হচ্ছে। পুলিশকে মাঠে নামাতে হবে। পুলিশ জানে নিজেদের কর্মে আজ তারা ঘরে উঠে গেছে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোরের প্রধান সমন্বয়ক রাশেদ খান বলেন, গণতান্ত্রিক ভাবে আন্দোলন করেছি। শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন পরিবেশে বজায় রাখতে সহযোগিতা করায় ধন্যবাদ জানাই। আন্দোলনের সময়ের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিচার ও শাস্তির দাবি জানাই।তিনি বলেন, সরকার পতনের পর একটি নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও লুটপাত করা হচ্ছে। এসব নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার আহবান জানাই। তিনি বলেন, কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। যেখান থেকে কল পাচ্ছি, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

এ সময় বক্তব্য রাখেন, জামায়াত নেতা শিক্ষাবিদ গাজী এনামুল হক, মাওলানা শোয়াইব হোসেন, জেলা ইমাম পরিষদের সদস্য মাওলানা নাসিরুল্লাহ, জামায়াতের জেলা আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুল, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোরের সমন্বয়ক মারুফ হোসান, ফাহিম আল ফাত্তাহ,  বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য তসলিম উর রহমান, কমিউনিস্ট লীগের জেলা নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, জাগপার প্রেসিডিয়াম সদস্য নিজাম উদ্দীন অমিত, জেএসডির জেলা সহসভাপতি ফকির শওকত, গণপরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য আশিকুর রহমান, লোকসমাজ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক শিকদার খালিদ, গ্রামের কাগজের বার্তা সম্পাদক সরোয়ার হোসেন, সংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামান,সময় টিভির জেলা প্রতিনিধি জুয়েল মৃধা, প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা মাহাবুবুর রহমান মজনু প্রমুখ।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo