বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি, চট্টগ্রাম জেলা উত্তর অঞ্চলের নীতিমালা বাস্তবায়ন কমিটির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

জাবেদ হোসাইন প্রকাশিত: ২৫ মে , ২০২৫ ১৫:০১ আপডেট: ২৫ মে , ২০২৫ ১৫:০১ পিএম
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি, চট্টগ্রাম জেলা উত্তর অঞ্চলের নীতিমালা বাস্তবায়ন কমিটির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি, চট্টগ্রাম জেলা উত্তর অঞ্চলের উদ্যোগে আজ হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত আল জামানে এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভাটি ছিল নীতিমালা বাস্তবায়ন কমিটির চলমান কার্যক্রমের অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম জেলা উত্তর শাখার সভাপতি অধ্যাপক প্রদীপ দত্ত। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাপুস নীতিমালা বাস্তবায়ন কমিটির চট্টগ্রাম জেলা শাখার  আহবায়ক  জনাব জহির রায়হান এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির পরিচালক পদপ্রার্থী ও বাপুস নীতিমালা বাস্তবায়ন কমিটির  চট্টগ্রাম জেলা শাখার যুগ্ম আহবায়ক  মো. সোহেল রানা।
সভায় বক্তারা উল্লেখ করেন, চলতি বছরে চট্টগ্রাম জেলায় নীতিমালা যথাযথভাবে কার্যকর হওয়ায় প্রকাশক ও বিক্রেতা সমাজের মধ্যে একটি নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বই ব্যবসার নামে চলা কিছু অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটিয়ে একটি সুসংগঠিত, স্বচ্ছ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য চট্টগ্রাম জেলা নীতিমালা বাস্তবায়ন কমিটির নিরলস পরিশ্রম ও নিষ্ঠাকে উপস্থিত সকলে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
বক্তারা আরও বলেন, নীতিমালার কার্যকারিতা তখনই পূর্ণতা পায়, যখন তা মাঠপর্যায়ে সঠিকভাবে প্রয়োগ হয়। চট্টগ্রামে বই ব্যবসার ক্ষেত্রে নীতিমালা বাস্তবায়নের ফলে বই বিক্রয়ের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা এসেছে, কমিশন নিয়ে বাড়াবাড়ি কমেছে এবং অসদস্যদের মাধ্যমে পাইকারি বই বিক্রির প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। এই বাস্তবতা নিঃসন্দেহে চট্টগ্রামের বই ব্যবসার ইতিহাসে এক প্রশংসনীয় মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে।
সভায় বক্তারা আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল স্কুল পর্যায়ে বই বিক্রির নামে কিছু প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীর দৌরাত্ম্য, যা বাজারকে অস্থির করে তোলে। অনেকে সদস্য না হয়েও সরাসরি স্কুলে গিয়ে পাইকারি হারে বই বিক্রি করছেন, যা নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
সভায় আরও বলা হয়, বই বিক্রির ক্ষেত্রে ১০% কমিশনের বিধান মেনে চলার অঙ্গীকারই পারে একটি সুষম ও সৎ ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে তুলতে। এ নীতিমালা মেনে চলার মাধ্যমে ব্যবসায়ীক স্বার্থ যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকরাও উপকৃত হবেন।
সভা শেষে উপস্থিত সকল সদস্য ও ব্যবসায়ীরা নীতিমালা মেনে চলার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন এবং ১০% কমিশনের মধ্যে বই বিক্রি অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এ সময় সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক প্রদীপ দত্ত বলেন, “আমরা সবাই যদি একযোগে নিয়ম মানি, তবে আমাদের এই শিল্প আরও সমৃদ্ধ হবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ রেখে যেতে পারবো।”
মো. সোহেল রানা তাঁর বক্তব্যে বলেন, “নীতিমালার বাস্তবায়ন শুধু একটি কাগুজে বিষয় নয়, এটি বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যবসা ও সমাজ উভয়কে উপকৃত করতে পারে। আমরা চাই, যারা নিয়ম মেনে ব্যবসা করেন তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত হোক এবং যারা নিয়ম ভাঙেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
সভা শেষে এক হৃদয়গ্রাহী পরিবেশে সকল অংশগ্রহণকারী মিলে হাতে হাত রেখে একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। চট্টগ্রামে পুস্তক শিল্পে সুস্থ প্রতিযোগিতা, নিয়মতান্ত্রিক পরিবেশ এবং সদস্যদের অধিকার রক্ষায় এই সভা নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
চট্টগ্রাম জেলা নীতিমালা বাস্তবায়ন কমিটির এই উদ্যোগ বই ব্যবসায় একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চট্টগ্রাম একদিন দেশের বই শিল্পে আদর্শ মডেল হিসেবে পরিগণিত হবে।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo