১৯ শে জুন ২০২৫ – বিশ্ব শরণার্থী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আজ কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে "আমার প্রতিবেশী, আমার বন্ধু’ শীর্ষক একটি রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী তরুণদের সম্মাননা প্রদানের জন্য একটি প্রাণবন্ত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (RRRC), জাতিসংঘ এবং মানবিক সংস্থাগুলির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় বাংলাদেশি তরুণদের তাদের শক্তিশালী লিখিত রচনা ও চিত্রাঙ্কন জন্য বিশেষ স্বীকৃতি এবং পুরষ্কার প্রদান করা হয়েছে। প্রতি বছর ২০ জুন পালিত বিশ্ব শরণার্থী দিবস হল বিশ্বব্যাপী শরণার্থীদের দুর্দশা সম্পর্কে সহানুভূতিশীলতা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদের আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়গুলিকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি বিশ্বব্যাপী স্মরণসভা। যথাযথ ভাবে, এই বছরের বিশ্ব শরণার্থী দিবসের প্রতিপাদ্য হল "শরণার্থীদের সাথে সংহতি"। এই প্রতিপাদ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি আজ, বৃহস্পতিবার (১৯ জুন ২০২৫) ক্যাম্প-৪ দরবার হলে অনুষ্ঠিত হয়।
রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের উভয় পক্ষের রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরষ্কার প্রদান করা হয়:-বাংলা রচনায় প্রথম হয়েছে সাংবাদিক মো: কামরুল হাসানের ছেলে মো: সোয়াইব বিন হাসান(বিজয়ী, বাংলা) ফায়াজুল ইসলাম (বিজয়ী, ইংরেজি), সারোয়ার শাহ (প্রথম রানার-আপ) এবং মোহাম্মদ আরজ (দ্বিতীয় রানার-আপ)। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীরা হলেন আহমেদ রাফসান (প্রথম পুরস্কার); ফিওনা নুসাইবা জুহা (প্রথম রানার-আপ); মোহাম্মদ শাহাদ (দ্বিতীয় রানার-আপ)।
প্রধান অথিতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোস্তাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারে কর্মরত জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রধান, অংশীদার সংস্থাগুলির প্রতিনিধি এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মানবিক সংস্থাগুলির সহায়তায়, স্থানীয় বাংলাদেশী এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী যুবক এবং শিশুদের সৃজনশীলতা এবং প্রতিভা লালন এবং প্রদর্শনের জন্য এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। "আমার প্রতিবেশী, আমার বন্ধু" থিমে এই প্রতিযোগিতাটি ২ জুন শুরু হয়েছিল এবং ১৪ তারিখে শেষ হয়েছিল। এতে ৮-১৬ বছর বয়সী অংশগ্রহণকারীদের শিল্পকর্মের জন্য এবং ১৬-২৪ বছর বয়সীদের প্রবন্ধ লেখার জন্য স্বাগত জানানো হয়েছিল।
প্রধান অথিতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোস্তাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন: "রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে মনে রাখতে হবে - আপনি একা নন। অনেক চ্যালেঞ্জ স্বত্তেও, স্থানীয় আশ্রয়দাতা সম্প্রদায় আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা ন্যায় বিচার এবং সমতায় বিশ্বাস করি। এটি আমাদের নীতি এবং এটি রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জন্যও একই থাকবে।"
ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি মিসেস ইয়োকো আকাসাকা বলেন: শরণার্থীদের সাথে সংহতি বলতে বোঝায়, তাদের গল্প শোনা, তাদের কণ্ঠস্বরের জন্য স্থান তৈরি করা এবং কেবল নিরাপত্তা নয়, বরং অন্তর্ভুক্তি, উদ্দেশ্য এবং আশা খুঁজে পেতে তাদের সমর্থন করা। শরণার্থীদের প্রতি আমাদের বার্তা স্পষ্ট: আপনাদের
ভুলে যাওয়া হয়নি। আমরা আপনার সমর্থনে আপনার পাশে দাঁড়িয়েছি।
আইওএম মিশন প্রধান ল্যান্স বোনো বলেন: "যখন সংহতির কথা আসে তখন বাংলাদেশ একটি উজ্জল উদাহরণ। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ কারীরা শরণার্থী জীবনের, তাদের স্থিতিস্থাপকতা এবং আকাঙ্ক্ষার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছেন। আমি তাদের এর জন্য ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানাই।"
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মিজানুর রহমান বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে রোহিঙ্গা সম্প্রদায় একদিন মর্যাদার সাথে তাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে যাবে। স্থানীয় সম্প্রদায় এখন পর্যন্ত তাদের সমর্থন করে আসছে।
আইএসসিজির প্রধান সমন্বয়কারী মিঃ ডেভিড বাগডেন বলেন, শুরু থেকেই বাংলাদেশের উদার সংহতির কারণে রোহিঙ্গা সম্প্রদায় বাংলাদেশে থাকতে পেরেছে। সরকারের পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা এবং অন্যান্য অংশীদাররাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমরা সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
২০১৭ সাল থেকে দশ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে এবং বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া এবং টেকনাফের শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে,বিশ্ব শরণার্থী দিবস বাংলাদেশের জন্য বিশেষ তাৎপর্য পূর্ণ।