তীব্র গরমে হিটস্টোকসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পাইকগাছার বিভিন্ন ইউনিয়নে সাদাসোনা খ্যাত চিংড়ি মরতে শুরু করছে। মৌসুমের শুরুতেই গ্রেড উপযোগী চিংড়ি মাছ মরে যাওয়ায় চাষীরা ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করছেন। এতে চলতি মৌসুমে রফতানিজাত চিংড়ি উৎপাদন লক্ষ্য ব্যাহত হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর।
তীব্র গরমে হিটস্টোকসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পাইকগাছার বিভিন্ন ইউনিয়নে সাদাসোনা খ্যাত চিংড়ি মরতে শুরু করছে। মৌসুমের শুরুতেই গ্রেড উপযোগী চিংড়ি মাছ মরে যাওয়ায় চাষীরা ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করছেন। এতে চলতি মৌসুমে রফতানিজাত চিংড়ি উৎপাদন লক্ষ্য ব্যাহত হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর।
অন্য বছরের তুলনায় এ বছর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে তীব্র গরমে চিংড়ি ঘেরে মাছ মরে যাচ্ছে বলে মনে করছেন চাষিরা । চিংড়ি চাষীরা ধারণা করছেন পানি স্বল্পতা ও ঘেরে পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ার কারণে চিংড়ি ঘেরে এ মড়ক দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় আর্থিক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে উপজেলার, লতা, কপিলমুনি,দেলুটি,সোলাদানা, লস্কর, চাঁদখালী,গদাইপুর, হরিঢালী, গড়ুইখালী ইউনিয়নের হাজার হাজার চিংড়ি চাষীরা।
লতা ইউনিয়নের ঘের ব্যবসায়ী প্রশান্ত কুমার মন্ডল জানান, চলতি মৌসুমে ৮০ বিঘা জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন তিনি। ঘেরে বাগদার পোনা ছাড়ার পর মাছ কেবল গ্রেড হওয়ার উপযোগী হয়েছে। কিন্তু প্রচন্ড গরমে মাছ মারা যাচ্ছে। এছাড়া নদী থেকে যে পানি ঘেরে নেয়া হয় সেটিও তুলনা মূলক বেশি তাপমাত্রার। ফলে পানি পাল্টে দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। এ কারণে চিংড়ি মাছ হিটস্টোকে মারা যাচ্ছে। একই অবস্থা পাইকগাছা উপজেলার অধিকাংশ ঘের গুলোর।
সোলাদানা ইউনিয়নের বেতবুনিয়া গ্রামের ঘের ব্যবসায়ী গাউস সরদার জানান, দুপুরের দিকে ঘেরের সমস্ত পানি গরম হয়ে যাচ্ছে । যে পরিমাণ পানি রাখলে ঠান্ডা থাকবে সে পরিমাণ পানি রাখা যাচ্ছে না । যার ফলে কোথাও মাছ আশ্রয় নিতে পারছে না । যে কারণে চিংড়ি মাছ হিটস্টোকে মারা যাচ্ছে ।
উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের ঘের ব্যবসায়ী সিরাজুল গোলদার জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ৪৫ বিঘা পরিমাণ জমির ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন। প্রচন্ড গরমের কারণে তার ঘেরে চিংড়ি মাছ মরে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন চারো দিলে প্রচুর মরা চিংড়ি উঠছে, যা সবই গ্রেড উপযোগী। এ পর্যন্ত তার ঘেরে ছাড়া অন্তত তিন কিস্তির চিংড়ি মারা গেছে।
কপিলমুনি ইউনিয়নের দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন,
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরতে শুরু করেছে। এখন আপনাকে চিংড়ি চাষে লাভবান হতে হলে চাষের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। তীব্র গরমে ঘের ও পুকুরের পানির তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি পর্যন্ত দেখা গেছে যা মাছের জন্য মারাত্মক। ঘেরের গভীরতা বাড়াতে হবে । যাতে পানি ৪ থেকে ৬ ফুট থাকে ।তিনি আরও বলেন, গরমে মাছ মারা যাওয়া ঠেকাতে ঘেরে সেড বা ছাউনি নির্মান, বিভিন্ন প্রজাতির শ্যাওলা দিয়ে পানির তাপমাত্রা কিছুটা নিয়ন্ত্রন করা যেতে পারে।
পাইকগাছা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত মল্লিক জানান, বাগদার সহনশীল তাপমাত্রা হচ্ছে ২৭-২৮ ডিগ্রি সেখানে একটানা ৩৮-৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় উপজেলার অধিকাংশ ঘেরে ১ থেকে ২ ফুট পানিতে নেমে এসেছে। অথচ এগুলোয় কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ ফুট পানি থাকার কথা। ফলে তীব্র গরমে হিটস্টোকসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ঘেরের চিংড়ি মারা যাচ্ছে। পানি বাড়ানো ছাড়া কোন উপায় নেই । তবে এরই মধ্যে চিংড়ি চাষীদের ঘেরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করার জন্য ৪ ফুটের অধিক পানি রাখা ও সেড নির্মানসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।