মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় পদ্মা নদীর তীরবর্তী দিঘীরপাড় বাজার এলাকায় আকস্মিক নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
এতে জনমনে বিরাজ করছে আতঙ্ক। তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী ও ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে কয়েকটি দোকান ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে । অনেকেই আবার তাদের দোকান ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন ।
তাছাড়া নদীর তীরবর্তী ব্যবসায়ী ও বসবাসকারীদের অর্ধশতাধিক দোকানঘর ও বসতভিটা পদ্মা নদীর ভাঙ্গনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।গতকাল সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় দিঘিরপাড় বাজার এলাকার তীরবর্তী ব্যবসায়ীরা ভয়ে আতঙ্কে তাদের দোকান ঘর নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে বেশ কিছু দোকান ঘর নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে জানা যায়।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, নদী ভাঙ্গন দেখা দেওয়ার পরেই জিও ব্যাগ ফেলা হয় এবং ডাম্পিং করা হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন নদী ভাঙ্গন রোধে যদি অতি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে দিঘীরপাড় এলাকার অনেক অংশই নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
নদীতে প্রচুর পরিমাণে স্রোত থাকায় ভিতর থেকে মাটি সরে যাচ্ছে এবং তীরের মাটি স্রোত ও ঢেউয়ের সাথে সাথে নদীতে ভেঙে পড়ছে, ফলে তীরবর্তী বসবাসকারী ও ব্যবসায়ীদের মনে নদী ভাঙ্গনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রতি বছরেই এখানে নদী ভাঙ্গনের ঘটনা ঘটে। নদী ভাঙ্গন রক্ষায় দ্রুত সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ আমাদের সময়ের দাবি।
তবে ভাঙন ঠেকাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কার্যক্রম শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। টানা দুদিনে ভাঙন ঠেকাতে ফেলা হয়েছে পাঁচ হাজারেরও বেশি জিও ব্যাগ তবে নদীতে গভীরতা বেশি থাকায় ব্যাহত হচ্ছে কার্যক্রম।স্থানীয় সূত্র জানায়, তিন দশকের বেশি সময় ধরে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় ইউনিয়নে ভাঙন তাণ্ডব চালাচ্ছে পদ্মা। ইতোমধ্যে দক্ষিণ মূলচর, মিতারা, হাইয়ারপারের কয়েকশ বাড়িঘর, মসজিদ, আবাদি জমি গেছে নদীটির পেটে।
দিঘিরপাড় বাজারের অন্তত ২০০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়েছে। দুই বছর আগে যখন তীব্র ভাঙন দেখা দেয়, তখন কিছু জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধে চেষ্টা চালায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পরে ব্লক দিয়ে স্থায়ী বেড়িবাঁধের প্রকল্প নেওয়া হয়। চলতি বর্ষায় দিঘিরপাড় বাজার ও দক্ষিণ মূলচর গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে জিও ব্যাগ সরে গেছে। ফলে মূলচর গ্রাম ও দিঘিরপাড় বাজার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে তীরের জনপদ ও বাজার রক্ষায় জেলার লৌহজং উপজেলার খড়িয়া গ্রাম থেকে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় বাজার পর্যন্ত ৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার অংশে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪৬ কোটি টাকা। ২০২২ সালের মে মাসে এর কাজ শুরু হয়েছে।
কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভাগে প্রকল্পটি নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দিঘিরপাড় অংশের দায়িত্ব পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিগমা ইঞ্জিনিয়ারিং। তাদের ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। অথচ এখনও তারা কাজই শুরু করেনি।
সিগমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কারিগরি বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুস সালাম এ বিষয়ে দি বাংলা ইন্ডিপেন্ডেন্টের কাছে দাবি করেন, স্থায়ী বাঁধের কাজ তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শেষ করবেন। ব্লক বসানোর আগে যেসব কাজ করা দরকার, সেগুলো শেষ হয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বাকি কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
মুন্সিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, একটা জায়গার জন্য আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি কিন্তু এখনো সেরকম কোন ফলাফল পাইনি। আমরা চেষ্টায় আছি কিন্তু কোন বরাদ্দ না আসলে আমাদের কিছুই করার থাকে না।