ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (CAPS)-এর যৌথ আয়োজনে এবং ৩৫টি সহযোগী সংগঠনের সহায়তায় “দূষণমুক্ত ন্যায্য নগর গঠনে নবায়নযোগ্য শক্তির ভূমিকা” শীর্ষক এক গুরুত্বপূর্ণ পলিসি ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র ডক্টর মোঃ এজাজ। তিনি বলেন, “পরিবেশ দূষণ রোধে ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার অনিবার্য। নাগরিকদের সচেতনতা এবং কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা একটি বাসযোগ্য, সবুজ ঢাকা গড়ে তুলতে পারবো।”
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, চেয়ারম্যান, Center for Atmospheric Pollution Studies (CAPS) এবং পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ডিন, Stamford University Bangladesh। তিনি তাঁর উপস্থাপনায় বলেন, “দূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার, সচেতনতা বৃদ্ধি ও সরকারের কার্যকর নীতিমালা প্রয়োজন।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, Centre for Policy Dialogue (CPD); প্রফেসর ড. আদিল মোহাম্মদ খান, সভাপতি, Bangladesh Institute of Planners (BIP); ড. এম. শাহিদুল ইসলাম, অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; মোহাম্মদ আরাজ, প্রশাসক, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন; এবং অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নাকি, স্থাপত্য বিভাগের প্রধান, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংস্থার প্রতিনিধিরা, সুপ্রিম কোর্টের সম্মানিত আইনজীবী, বিশিষ্ট গবেষক, সাংবাদিক এবং তরুণ নেতৃত্বের প্রতিনিধি। ৩৫টি সহযোগী সংগঠনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল Brighters, Mission Green Bangladesh, Eco-Network Global, Youthnet for Climate Justice, Center for Atmospheric Pollution Studies (CAPS), ActionAid Bangladesh, Bangladesh Environmental Lawyers Association (BELA), Work for a Better Bangladesh Trust (WBBT), Nature Conservation Management (NACOM) সহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা।
বক্তারা বলেন, নগরের অধিকাংশ এলাকা আজ তীব্র গরমের শিকার। ঢাকা শহরে প্রাকৃতিক জ্বালানির ঘাটতি প্রকট, যেখানে গ্রামের মানুষ টিনের ছাদে বসানো সৌর প্যানেল থেকে কিছুটা হলেও সুবিধা পাচ্ছে। অথচ শহরের একাংশ, বিশেষ করে গুলশান বা বনানীর বাসিন্দারা এসির বাতাসে বসবাস করলেও, সাধারণ মানুষ তাপপ্রবাহে দগ্ধ হচ্ছে। ঢাকার শহরে অনেক বাড়ির ছাদ খালি পড়ে থাকে, কিন্তু সেখানে সৌর প্যানেল বসানো হয়নি, ফলে বাসার মালিকরা সৌর শক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সৌর প্যানেল ব্যবহার করলে, তারা শক্তির জন্য বিল কমাতে পারতেন এবং পরিবেশের জন্য উপকারি শক্তির ব্যবহার করতে পারতেন। অথচ, গ্রামের মানুষের টিনের ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর ফলে তারা শক্তির সুবিধা পাচ্ছে। এই বৈষম্য দূর করতে ঢাকায় সৌর প্যানেলের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া জরুরি।
প্যানেল আলোচনায় বক্তারা পরিবেশ দূষণ রোধে করণীয় হিসেবে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তারা বলেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, আইন প্রয়োগের কঠোরতা, প্রযুক্তির আধুনিক ব্যবহার এবং বেশি করে সবুজায়ন করাই হতে পারে টেকসই সমাধানের পথ।
এছাড়া, বক্তারা অতিরিক্ত তাপদাহ কমানো জন্য রাস্তার মাঝখানে ডিভাইডার, বিভিন্ন ফাঁকা জায়গা, স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন স্থানে গাছ লাগানোর কথা বলেন। এর ফলে, পরিবেশের উন্নতি হবে এবং জনগণ এর সুবিধা পাবে। তারা আরও বলেন, যানজট ও শব্দদূষণ কমাতে এবং অতিরিক্ত হর্ন বাজানো রোধ করতে নতুন এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, যা যানজট কমাতে সাহায্য করবে। অতিরিক্ত হর্ন বাজানোর জন্য জরিমানা আরোপ করা হবে।
অনুষ্ঠানে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা দুর্গন্ধযুক্ত পানি, খাবার অযোগ্য পানি, যানজট, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ ইত্যাদি সমস্যাগুলির প্রতি তাদের বিরক্তি প্রকাশ করেন। জরিপে এসব সমস্যা সমাধানের জন্য অংশগ্রহণকারীরা তাদের মতামত প্রদান করেন।
এছাড়া, অতিথিদের কাছে এ বিষয়ে সমাধান প্রস্তাব করা হয়, এবং তারা এসব সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানান। অতিথিরা এসব সমস্যা সমাধানে বিশেষ গুরুত্ব দেবেন এবং দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন বলে আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে জানানো হয়, খুব শীঘ্রই ঢাকা মহানগরীতে গাছ লাগানোর কর্মসূচি শুরু হবে। বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, গৃহীত পরিকল্পনাগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হলে নগরবাসীর জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে সহায়তা করবে।