তানোরে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই বিজ্ঞানাগার ব্যবহারিক শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ২৮ জুলাই , ২০২৫ ১৬:৪৭ আপডেট: ২৮ জুলাই , ২০২৫ ১৬:৪৭ পিএম
তানোরে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই বিজ্ঞানাগার ব্যবহারিক শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা

 রাজশাহীর তানোর উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানাগার না থাকায় ব্যবহারিক বিজ্ঞান শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। যেখানে বিজ্ঞানাগার রয়েছে, সেখানেও নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ। ফলে, বিজ্ঞান বিষয়ে হাতে-কলমে শেখার সুযোগ না থাকায় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিজ্ঞানভীতি তৈরি হচ্ছে, কমছে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী সংখ্যা।
তানোর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় রয়েছে ৬০টি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ১টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও ২২টি মাদ্রাসা। তবে, এর মধ্যে মাত্র তিনটি বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার থাকলেও তা কার্যত অচল। একই চিত্র উপজেলার ১৭টি কলেজের ক্ষেত্রেও। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানাগার না থাকায় মূলত বিজ্ঞান বিষয়ের ব্যবহারিক ক্লাস নেয়া হয় না। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অনেক বিদ্যালয়ের অবস্থা জরাজীর্ণ। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে বা ভাঙাচোরা আলমারিতে বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য কিছু যন্ত্রপাতি রাখা থাকলেও, সেগুলোর কোনো কার্যকর ব্যবহার নেই। অনেক শিক্ষার্থী জানেই না, তাদের স্কুলে কোনো বিজ্ঞানাগার রয়েছে কি না।
সুকদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুকুমার চন্দ্র দাস বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ে কোনো বিজ্ঞানাগার নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে। শুধু তানোর নয়, উপজেলার প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেরই একই অবস্থা। কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রাব্বানী বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার থাকলেও নতুন কারিকুলামে ব্যবহারিক শিক্ষার গুরুত্ব না থাকায় সেটি সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। ৮০ দশকের কারিকুলামে যেখানে ব্যবহারিক বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হতো, তা ফিরিয়ে আনা উচিত।
তানোরের একাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানাগারের জন্য আলাদা বরাদ্দ থাকলেও তা পূর্ণমাত্রায় ব্যয় হয় না। অনেক সময় তা অন্য খাতে ব্যয় করা হয়। এ কারণে বিজ্ঞানাগার উন্নয়নের কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না।
এক শিক্ষক বলেন, “কক্ষ সংকটের কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানাগারের কেমিক্যাল ও যন্ত্রপাতি আমার ব্যক্তিগত কক্ষের আলমারিতে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে শিক্ষকরা তা শ্রেণিকক্ষে নিয়ে গিয়ে দেখান।
অভিভাবকরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় অভিভাবক আব্দুল মতিন বলেন, “বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করানোর পরও ছেলে-মেয়েরা ব্যবহারিক ক্লাস পাচ্ছে না। এতে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। অনেকেই আর বিজ্ঞান বিভাগ নিতে চাইছে না।
এ বিষয়ে তানোর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “বিগত সরকারের আমলে নতুন কারিকুলামে বিজ্ঞান বিষয়ের ব্যবহারিক পাঠ্যবই থেকে অনেক কিছু বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে স্কুলগুলোতে বিজ্ঞানাগার প্রয়োজনীয়তা হারিয়েছে। তবে আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি। উপজেলার সচেতন মহল বলছেন, আধুনিক যুগে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞাননির্ভর শিক্ষায় ব্যবহারিক পাঠ অপরিহার্য। সরকার ও শিক্ষা দপ্তরের উচিত, দ্রুত এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। তা না হলে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিজ্ঞান শিক্ষায় আরো পিছিয়ে পড়বে, যার প্রভাব পড়বে দেশের সার্বিক উন্নয়নেও।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo