তিস্তা নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলে আন্তর্জাতিক মানের ১০০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের দাবিতে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ঐতিহাসিক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিস্তা নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলে আন্তর্জাতিক মানের ১০০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের দাবিতে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ঐতিহাসিক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় গঙ্গাচড়ার মহিপুর তিস্তা সেতু এলাকায় এ মানববন্ধনের আয়োজন করে ‘তিস্তা উন্নয়ন ফোরাম, রংপুর’। কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী ও সাংবাদিকদের সংগঠন। সর্বস্থরের মানুষের অংশগ্রহণের পাশাপাশি মানববন্ধনে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে দাঁড়িয়ে এই ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচিতে অংশ নেয়।এছাড়াও মানববন্ধনে শিশুদের অংশগ্রহনের দৃশ্য উপস্থিত সবাইকে নাড়া দেয় এবং স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। আয়োজকরা জানান, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই প্রতীকী অংশগ্রহণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত হাসপাতালটি রংপুররে বাস্তবায়িত হলে রংপুরসহ সমগ্র উত্তরাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। রংপুর ৮টি জেলার মিডল পয়েন্টে হওয়াতে চিকিৎসাসেবায় স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষও উপকৃত হবেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির গংগাচড়া প্রতিনিধি রিফাত চৌধুরী বলেন, আবু সাইদের রংপুরে বৈষম্য কে মেনে নেয়া হবেনা।দল মত নির্বিশেষে সকলকে এক থেকে এই দাবির পক্ষে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।রংপুরে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রক্তের দায় কিছুটা হলেও শোধ হবে।
আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আলোচনায় গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক আব্দুল আলীম প্রামানিক বলেন, এই হাসপাতাল গঙ্গাচড়ার জন্য একটি ঐতিহাসিক সুযোগ। একটি উন্নত হাসপাতাল শুধু চিকিৎসার কেন্দ্র নয়, এটি হবে জ্ঞান, গবেষণা ও মানবিকতার মিলনমঞ্চ। প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে আমরা এই মহৎ উদ্যোগের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করছি। গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় উচ্চতর পরিষদ সদস্য হানিফ খান সজিব বলেন, ভারত যখন চিকিৎসা ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে, তখন আমাদের দেশে নিজস্বভাবে বিশ্বমানের চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। এই হাসপাতালটি হবে আত্মনির্ভর বাংলাদেশের একটি মাইলফলক। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গংগাচড়ার প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মোঃ শাহজালাল শ্রাবণ। তিনি বলেন, রংপুরের মানুষ বারবার প্রতারণার স্বীকার হচ্ছে।অবিলম্বে উপদেষ্টা রংপুরের মানুষকে যে আশা দিয়েছেন তার বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গঙ্গাচড়া উপজেলার আমির মাওলানা নায়েবুজ্জামান বলেন, এই হাসপাতাল বাস্তবায়িত হলে চরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মানুষ উন্নত চিকিৎসাসেবা পাবে। ইসলামের দৃষ্টিতেও এটি মানবকল্যাণের একটি বড় উদাহরণ। আমরা এর পক্ষে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।উপজেলা বিএনপির সভাপতি চাঁদ সরকার বলেন, দল-মত নির্বিশেষে আমরা এই প্রকল্পের পক্ষে। এটি কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়, এটি জনগণের অধিকার। উন্নত চিকিৎসাসেবার জন্য এই হাসপাতাল অত্যাবশ্যক। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, তিস্তার চরাঞ্চলে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল স্থাপন এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এখানকার স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে। প্রস্তাবিত স্থানটি গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর তিস্তা সেতু সংলগ্ন চর কলাগাছি এলাকা। এখানে প্রায় ২৯ একর খালি জমি রয়েছে, যা হাসপাতালের মূল ভবন, হেলিপ্যাড, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, আবাসন ও গবেষণাগার নির্মাণের জন্য উপযুক্ত। সবুজঘেরা শান্ত পরিবেশ ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নে সহায়ক হবে বলে জানান আয়োজকেরা। তিস্তা তীরবর্তী জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে দ্রুত এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানান মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ।দল মত নির্বিশেষে সকল পর্যায়ের মানুষের অংশগ্রহনে মানববন্ধনটি এই দাবির ন্যায্যতা ও গুরুত্ব আরও জোরালোভাবে তুলে ধরে।