চাঁদপুরে ফরিদগঞ্জে ধান সংগ্রহ অভিযানে খাদ্য গুদামের অনিয়মের শেষ কোথায়

জাকির হোসেন সৈকত প্রকাশিত: ৩ জুন , ২০২৫ ১৪:৪৯ আপডেট: ৩ জুন , ২০২৫ ১৪:৪৯ পিএম
চাঁদপুরে ফরিদগঞ্জে  ধান সংগ্রহ অভিযানে খাদ্য গুদামের অনিয়মের শেষ কোথায়

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। এবছর সরকার সর্বোচ্চ মণ প্রতি ১৪৪০ টাকা মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করার কারণে কৃষকরা খুশি। কিন্তু কৃষকদের লাভের টাকা  পুরোটাই যাচ্ছে পথে পথে। লেবার বিল, কসর বাবদ বাড়তি ধান প্রদান, অফিস খরচ এবং সর্বশেষ ধানের টাকা নিতে এসে হয়রানি হওয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। তবে বিগত পতিত স্বৈরাচারি আওয়ামী লীগের মতো ভয়াল সিন্ডিকেট না থাকলেও গোপন সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে। 
জানা গেছে, চাঁদপুর সেচ প্রকল্পভুক্ত ফরিদগঞ্জ উপজেলায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল খাদ্য অধিদপ্তরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ৬হাজার মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরজন্য প্রকাশ্যে লটারির মাধ্যমে অনলাইনে আবেদনকৃত কৃষকদের মধ্য থেকে ২৫২জনকে নির্বাচিত করা হয়। সরকারি ভাবে এবার বোরো ধান কেনার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে কেজি ৩৬ টাকা। বাজারে ধানের দামের তুলনায় বেশি হওয়ায় কৃষকরা খুশি।

 কিন্তু কৃষকের এই আনন্দ হতাশায় পরিনত হচ্ছে, ধান বিক্রি করতে এসে পদে পদে খরচ দিতে গিয়ে লাভের দেখা না মিলায়। একজন কৃষক লটারির মাধ্যমে ৩ টন ধান (৭৫ মণ) ধান বিক্রি করতে গেলেও সরকারি মূল্যে দাম ১ লাখ ৭ হাজার ৭০০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও কৃষককে লেবার খরচ হিসেবে প্রতি মণে ৩০ টাকা দিতে হচ্ছে।  অর্থাৎ ৭৫ মণে ২ হাজার ২ শত ৫০ টাকা।  খাদ্য অফিসে অলিখিত খরচ হিসেবে টন প্রতি ১০০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। কসর হিসেবে প্রতি মণে ২ কেজি বেশি করে দিতে হচ্ছে কৃষকদের। অর্থাৎ ৭৫ মণে ১৫০ কেজি। কেজি ৩৬ টাকা করে ১৫০ কেজি ধানের দাম ৫৪০০ টাকার ধান বেশি দিতে হয় গুদামে। সবিমিলিয়ে সরকারি মূল্য মণ ১৪৪০ টাকা হলে কৃষক সকল খরচ বাদ দিয়ে পায় ১২৪০ টাকা। এরপর কৃষকদের বাড়ি থেকে খাদ্য গুদাম পর্যন্ত গাড়ী ভাড়া বাবদ একটি বড় অংক গুণতে হচ্ছে। 
লটারির মাধ্যমে প্রথম হওয়া ফারুক খান জানান, আমার এক নামে ৩ টন ধান বিক্রি করতে গেলে প্রতি মণে লেবার খরচ ৩০ টাকা করে দিতে হয়েছে। অফিস খরচ বাবদ প্রতি টন ধান বাবদ ১ হাজার করে ৩ হাজার টাকা খরচ নিয়েছে।
এসব অভিযোগের তীর খাদ্য গুদামের খাদ্য পরিদর্শক  মো. জামাল উদ্দিনের দিকে। অভিযোগ রয়েছে তিনি গোপন সিন্ডিকেটের সাথে মিল করে গোপনে অনেক কিছুই করছেন। অফিস খরচ নিচ্ছেন। ধানের আদ্রতা নিয়ে কৃষকদের হয়রানি করছেন। 
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ফরিদগঞ্জ খাদ্য গুদামের খাদ্য পরিদর্শক  মো. জামাল উদ্দিন তাার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, লেবার খরচ নেয়ার বিষয়টি সত্য। এছাড়া অন্য কোন কিছু নেই। কোন সিন্ডিকেট নেই। কিন্তু একটা গোপন ভিডিওতে দেখে তিনি বলেন আমি ঠিকাদারের কাছ থেকে খরচ নিয়ে নেবো।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, লেবার খরচ বাবদ মণ প্রতি ৩০ টাকা করে নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এছাড়া বস্তার ওজন ও কসর বাবদ বাড়তি ১কেজিসহ মোট ৪২ কেজি ওজণ মাপা হচ্ছে। অফিসের কথা বলে কোন রকম টাকা নেওয়ার কথা তিনি জানেন না বলে জানান। 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  সুলতানা রাজিয়া জানান, বিষয়টি মাত্র জেনেছেন এবং খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo