ফেনী ও দাগনভূঞাতে কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ প্রবণতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দিন দিন বেড়েই চলেছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। গত এক বছরে ফেনী দাগনভূঁইয়া উপজেলাতে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে প্রাণ হারিয়েছে চারজন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। গ্যাং প্রতিরোধে বিভিন্ন সময় শহরে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন এলাকাবাসী।সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়েছে। কিশোর অপরাধীরা ‘গ্যাং’ বা গ্রুপ সৃষ্টি করে বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। জড়িয়ে পড়ছে ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। এই কিশোররা সমাজের মধ্যে নিজেদের মতো করে নতুন এক সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
ফেনী ও দাগনভূঞাতে কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ প্রবণতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দিন দিন বেড়েই চলেছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। গত এক বছরে ফেনী দাগনভূঁইয়া উপজেলাতে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে প্রাণ হারিয়েছে চারজন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। গ্যাং প্রতিরোধে বিভিন্ন সময় শহরে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন এলাকাবাসী।সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়েছে। কিশোর অপরাধীরা ‘গ্যাং’ বা গ্রুপ সৃষ্টি করে বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। জড়িয়ে পড়ছে ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। এই কিশোররা সমাজের মধ্যে নিজেদের মতো করে নতুন এক সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
কিশোর অপরাধীরা আবার বিভিন্ন গ্যাং এর মাধ্যমে তথাকথিত ‘বড় ভাইদের’ আস্কারা পেয়ে অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। প্রশাসন এ অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার পরও কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধীদের কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলাতেও বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত। কিশোর গ্যাংয়ের কবল থেকে রক্ষা পেতে পুলিশ ও র্যাব এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন অভিভাবক মহল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দাগনভূঞা বাজারের গলি মার্কেট শপিং মলে সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকার বিভিন্ন চা-দোকানের ভেতর কিশোরদের আড্ডাবাজি চলছে। রাস্তার সঙ্গে ওই দোকানগুলো হওয়ায় চলাচলরত স্কুলছাত্রীদের ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে। এছাড়া পাড়া মহল্লার রাস্তায় দলবদ্ধভাবে আড্ডা দেয়। এমন কি বিভিন্ন সময় অভিভাবকদেরও নানা ধরনের হুমকি দিয়ে আসছে। তাদের উৎপাতের ভয়ে কেউ কারও কাছে মুখ খুলতে সাহস পায় না। শুধু বাস স্ট্যান্ডই না, এমন চিত্র দেখা গেছে এলাকাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে।
এলাকার কয়েকজন অভিভাবক বলেন, প্রায় সময়ই কিছু কিশোর ছেলেপেলে এলাকার বিভিন্ন চা-দোকানের সামনে জোটবদ্ধ হয়ে বসে থাকে। যখনই কোনো স্কুলছাত্রী বা মেয়ে আসে তখনই তারা নানা ধরনের অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ করতে থাকে। এবং ওই ছাত্রীদের উদ্দেশ্য করে ইভটিজিং করতে থাকে। ৩ নং পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নে পুরা চন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয় আশেপাশে বাজারে এলাকার কিশোর ছেলেপেলে দলবদ্ধভাবে আড্ডা দেয়। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। প্রশাসন এ অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার পরও কিশোর গ্যাং এর অপরাধীদের কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। হেন অপরাধ নেই যা তারা করছে না।
মাদকের ছড়াছড়ি আর সন্ত্রাসের উপাদানগুলো হাতের কাছে পাওয়ায় কিশোর অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। দ্বিধা করছে না কোন অপরাধ করতে। ‘বড় ভাইদের’ সহযোগিতা পেয়ে তারা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। কে কোনো সময় খুন, গুম কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হবে তা বলার কোনো উপায় নেই। সাধারণ মানুষের অসহায় এ অবস্থা থেকে মুক্তি না মিললে সমাজে বাস করাও দায় হবে। এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর অপরাধীরা। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হলেও কিশোর অপরাধীদের গ্যাং কালচার বন্ধ করা যাচ্ছে না। প্রতিটি গ্যাংয়ের নেপথ্যেই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মদদ রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় এ সকল অপরাধীরা। রাজনৈতিক নেতাদের উচিত হবে না কোনো অপরাধীকে প্রশ্রয় দেওয়া। তাদের উচিত শিশু-কিশোরদের অপরাধ থেকে মুক্ত রাখার জন্য কর্মসূচি তৈরি করা। পাশাপাশি সমাজের সচেতন ব্যক্তিবর্গকেও এগিয়ে আসতে হবে। সাধারণ মানুষের অসহায় এ অবস্থা থেকে মুক্তি না মিললে সমাজে বাস করাও দায় হবে। এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।
SKB, LSKB, 7 STAR, MDB-360- ৫২ গ্রূপ এগুলো কিশোর গ্যাং গ্রুপের সংক্ষিপ্ত নাম। ফেনী শহর ও আশেপাশের এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, প্রেম সংক্রান্ত বিরোধ, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, চুরি-ছিনতাই, ইভটিজিং ও চাঁদাবাজিসহ হত্যার মত ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িত এসব গ্যাং। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও পাড়ার রাস্তা থেকে শুরু করে অলিগলিতে বসে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সের কিশোর-তরুণদের আড্ডা।
সচেতন মহল বলছে, পারিবারিক ও সামাজিক অসচেতনতার কারণে কিশোর তরুণরা ভয়ঙ্কর সব অপরাধে জড়িয়ে জীবন বিপন্ন করছে।স্থানীয়রা বলছেন, মানুষের ওপর নির্যাতন, মানুষের মালামালের ক্ষয়ক্ষতিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছে এসব কিশোর গ্যাং। স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, একটা ছেলে বা কোনো পরিবারের একজন সদস্য যদি বিপথগামী হয়ে যায়, তাহলে শুধু সেই পরিবারটিই নয়, পুরো সমাজ ধ্বংস হয়ে যায়।স্থানীয় আরেকজন বলেন, আমাদের পারিবারিক শিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষা এবং সামাজিক অনুশাসনগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণেই কিশোর গ্যাং তৈরি হচ্ছে।
কিশোর গ্যাং এর বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে, কিশোরদের সচেতন করার পাশাপাশি অভিভাবকে সচেতন হওয়ার আহ্বান প্রশাসনের।
দাগুন ভূঁঞা উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন ও
ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী বলেন, কিশোর গ্যাং বন্ধ করার জন্য অভিভাবকদের অনুরোধ করবো আপনার সন্তানের প্রতি লক্ষ্য রাখুন। আপনার সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, কাদের সাথে মিশছে।
এ বিষয়ে ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, কিশোর গ্যাং এর সংখ্যাটা কমিয়ে আনতে আমাদের একইসঙ্গে কাউন্সিলিং, মোটিভেশন এবং আইনপ্রয়োগ-সমানভাবে চলছে।