জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় ৪০ বছর ধরে মহাসড়কের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে সরকারি দুটি জলাশয় পতিত অবস্থায় পড়ে আছে।
লাগোয়া জমির মালিকদের অবৈধ দখলদারি এবং প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে সরকার প্রতিবছর লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্থানীয়দের মধ্যে কয়েকজন বৃদ্ধ ব্যক্তির অভিযোগ, বহুকাল যাবৎ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি জলাশয়ে নেই কোনো সংস্কার বা মৎস্য চাষের উদ্যোগ। ফলে দুটি জলাশয়ের লাগোয়া জমির মালিকরা বিভিন্নভাবে মাটি দিয়ে ভরাট করে জলাশয়ের জায়গা দখল করে নিজেদের জমির আওতায় নিয়েছে। এর ফলে দুটি জলাশয় এক প্রকার অব্যবহৃত সম্পদে পরিণত হয়েছে এবং সেখানে মৎস্য চাষের সম্ভাবনাও নষ্ট হয়েছে।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,মহাসড়কের দক্ষিণ পার্শ্বে কালাই পৌর এলাকার পাঁচশিরা বাজারের শেষ সীমা থেকে পূর্ব দিক পুনট বাসস্ট্যান্ডের আগ পর্যন্ত প্রায় ০৪ কি:মি এবং মহাসড়কের উত্তর পার্শ্বে কালাই থানার পশ্চিম দিক থেকে নিশ্চিন্তা বাজারের আগ পর্যন্ত প্রায় ০৪ কি:মি দীর্ঘ দুটি জলাশয় ৪০ বছর ধরে পতিত অবস্থায় পড়ে থাকায় কচুরিপানা ও বিভিন্ন উদ্ভিদজাত প্রাণী জন্মানোর কারণে পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হয়ে আছে।
বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে সব সময়ই কচুরিপানায় ভরে থাকে। সরকারের তরফ থেকে সেগুলো সংস্কার করে মৎস্য চাষের কোনো তৎপরতা না থাকায় জলাশয়ের আকৃতি দিনদিন পরিবর্তন করে নিজেদের আয়ত্তে নিয়েছে অসাধু কিছু দখলদার। স্থানীয় এক বাসিন্দা আব্দুল হামিদ বলেন,"জলাশয় দুটিতে মৎস্য চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন এবং মৎস্য বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগের অভাবে এখন সেগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় সরকার প্রতিবছর লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,দুটি জলাশয় দখল করার প্রধান অভিযুক্তরা হলেন স্থানীয় জমির মালিকরা। তাদের মধ্যে কয়েকজন খাইরুল আলম,জাহিদুল ইসলাম,ছানোয়ার হোসেন,আবুল কাসেম,ফজলুর রহমান,আব্দুল করিম,মোহাম্মদ হাসান,আবু কালামসহ আরো অনেকেই এবং ব্রাক অফিস, টিএন্ড টি,ফায়ার সার্ভিস,আলুর হিমাগার এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ কেউ কেউ নিজেদের বাসা-বাড়ীতে যাতায়াতের জন্য জলাশয় ভরাট করে রাস্তার জন্য ব্যবহার করছে। এতে জলাশয়ের প্রাকৃতিক ভারসাম্য এবং মৎস্য চাষের সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়েছে।
এই দখলের বিষয়ে আবু কালাম বলেন,"আমার দেখা জলাশয় দুটি প্রায় ৪০ বছর ধরে পতিত পড়ে আছে, আর সেগুলোতে কোনো কার্যকরী উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি। আমরা যদি এগুলো দখল করে নিজেদের চাষাবাদে ব্যবহার করি,তাহলে আমাদেরও লাভ হয় এবং জায়গাগুলোও পরিত্যক্ত থাকে না।"স্থানীয় কৃষক ছানোয়ার হোসেন জানান,"লাগোয়া জমির মালিকরা নিজেদের স্বার্থে জলাশয় দুটি দখল করে রেখেছে। তারা কোনো উন্নয়ন কাজ করতে দেয় না। এতে স্থানীয় লোকজন এবং সরকার উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।"
কৃষক ফজলুর রহমান বলেন,"এতকাল পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে জলাশয় দুটি সংস্কার করে মৎস্য চাষের উপযোগী করে তুলতে কোনো কার্যকরী ব্যবস্থাপনা নেওয়া হয়নি। প্রশাসন যদি একটু উদ্যোগ নিতো, তবে এখান থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেতো।উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম বলেন,"আমরা শুনেছি দুটি জলাশয়ে মৎস্য চাষের জন্য প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় না থাকায় এবং পর্যাপ্ত উদ্যোগের অভাবে সেগুলো সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না। আমরা এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবার চেষ্টা করছি।"
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন বলেন,"অপরিকল্পিত ব্যবহার এবং অবৈধ দখলদারির কারণে জলাশয় দুটি মূলত অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। জমির মালিকরা নিজেদের স্বার্থে জলাশয় দুটিকে অব্যবহৃত অবস্থায় রেখে দিয়েছে। এতে করে স্থানীয় জনগণ এবং সরকার উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই দুটি জলাশয় পুনরায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় এনে মৎস্য চাষের উদ্যোগ নিতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে,যাতে সরকার প্রতি বছর রাজস্ব পায়।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, "জলাশয় দুটির অবস্থান মহাসড়কের পাশে হওয়ায় সেগুলো উন্নয়নের জন্য আমাদেরও কিছু ভূমিকা রয়েছে। আমরা স্বীকার করছি যে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে আমরা শীঘ্রই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে মিলে একটি পরিকল্পনা করব,যাতে দুটি জলাশয় পুনরুজ্জীবিত করা যায়।