সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
কমিউনিটি লিডার হিসেবে রাষ্ট্রীয় “প্রবাসী সম্মাননা ২০২৫” ভূষিত হলেন কাউন্সিলর মোহাম্মদ আয়াছ মিয়া কনকনে শীতে ব্রাহ্মণপাড়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হাঁস কেনাবেচা নিয়ে রণক্ষেত্র লাখাই: সংঘর্ষে আহত ২৬, গ্রেফতার ৩ গণঅধিকার পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দিলেন রাসেদ খান ঢাকা–১৯ আসনে ১১ জন প্রার্থীর মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ জুলাই যোদ্ধা পরিচয়দানকারী তাহরিমা জান্নাত সুরভী টঙ্গী থেকে পুলিশের হাতে আটক ডিমলায় শাখা নদীগুলো মরা খালে পরিণত পুনঃখনন ও কঠোর নজরদারির দাবি।। বাগেরহাট-১ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল কনকনে শীতে ব্রাহ্মণপাড়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত একঘরে করে রাখা নারীকে মারপিট, বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ

ডিমলায় শাখা নদীগুলো মরা খালে পরিণত পুনঃখনন ও কঠোর নজরদারির দাবি।।

জাহিদুল ইসলাম / ১০
Update Time : সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন

ডিমলা(নীলফামারী)প্রতিনিধি :- দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষি ও সেচ ব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পকে কার্যকর করে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ছোট ছোট শাখা নদ-নদীগুলোর পুনঃখনন এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাউতার, বুড়িতিস্তা, কুমলাই ও ধুম—একসময় খরস্রোতা এসব নদী বর্তমানে দখল, ভরাট ও অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে কার্যত ‘মরা খালে’ পরিণত হয়েছে।
নদী বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ (পাউবো) সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদাসীনতা, গাফিলতি ও অবহেলার কারণেই নদীগুলোর এই করুণ দশা। ফলে কৃষি, পরিবেশ ও নদীকেন্দ্রিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
পূর্বে নাউতার ও ধুম নদী পুনঃখনন করা হলেও তাতে কোনো কার্যকর সুফল আসেনি। খননের পর অল্প সময়েই নদীর বুক বালু ও পলিতে ভরাট হয়ে চর জেগে ওঠে। বর্তমানে নদীর বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে ধান ও বিভিন্ন ফসলের চাষ হচ্ছে। সরেজমিনে না গেলে বিশ্বাস করা কঠিন,একসময় পানিতে টইটম্বুর নদী আজ চাষের জমিতে রূপ নিয়েছে।
নদীতে পানি না থাকায় অবৈধ বালু ব্যবসায়ী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী মজির উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরাই নদী থেকে বালু উত্তোলন করে প্রকাশ্যে অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছেন।
অবৈধ বালু ও মাটি উত্তোলনের ফলে প্রতিবছর নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হচ্ছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং নদীগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। নদী বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পিতভাবে পুনঃখনন, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও শক্ত তদারকি ছাড়া নদীগুলোকে বাঁচানো সম্ভব নয়।
তাঁরা পরামর্শ দেন, শুকনা মৌসুমে প্রতি দুই বছর অন্তর পুনঃখননের মাধ্যমে নদীর প্রবাহ সচল রাখতে হবে এবং এজন্য পৃথক জনবল কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ স্থানীয়দের অভিযোগ, অতীতে নদী পুনঃখননের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। নামমাত্র কাজ করে প্রকল্প শেষ দেখানো হলেও বাস্তবে নদীর কোনো উন্নয়ন হয়নি। বরাদ্দকৃত অর্থ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে ভাগাভাগি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পাউবো ডালিয়া কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছোট নদ-নদী ও জলাশয় খননের একটি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নাউতার ও ধুম নদীর প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায় পুনঃখনন করা হয়, যা ২০২২ সালে শেষ হয়। তবে খননকৃত মাটি ও বালু নিরাপদ দূরত্বে না রেখে নদীর তীরেই ফেলে রাখায় বৃষ্টির পানিতে তা আবার নদীগর্ভে ফিরে গিয়ে ভরাট হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নাউতার ও ধুম নদীর বিভিন্ন অংশ বালু ও পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। প্রভাবশালীরা নদী দখল করে চাষাবাদ করছেন, আবার কেউ কেউ ট্রাক্টর দিয়ে মাটি ও বালু কেটে বিক্রি করছেন। ধুম নদীর ভেতরে বাঁধ দিয়ে আবাদি জমি তৈরি করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও তা মানা হচ্ছে না।
ইতোমধ্যে কুমলাই নদীর উৎসমুখে অপরিকল্পিত বাঁধ দিয়ে নদীটির প্রবাহ কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বুড়িতিস্তা নদীও নানা জটিলতায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নদী দখলকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পাউবো ও এলজিইডির সমন্বয়ে গঠিত একটি দল কুমলাই নদীর সীমানা নির্ধারণ করে শতাধিক অবৈধ দখলদারকে চিহ্নিত করেছে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিটির প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে নাউতার ও ধুম নদীর অবৈধ দখল ও নাব্যতা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছে।
‘রিভারাইন পিপল’-এর পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, পাউবোর নদী খননের কার্যক্রম অপরিকল্পিত ও অবৈজ্ঞানিক। এভাবে খনন করলে নদীর নাব্যতা ফেরে না।
ডালিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরি বলেন, এ অঞ্চলের নদীতে বালুর পরিমাণ বেশি। খননের পরপরই আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে, ফলে পানির প্রবাহ ঠিক রাখা কঠিন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরানুজ্জামান বলেন, নদীগুলোর নাব্যতা ফেরাতে সীমানা নির্ধারণ করে পরিকল্পিত পুনঃখনন জরুরি। এ বিষয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
ডিমলাবাসীর দাবি, নদী দখল ও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ, পূর্বের প্রকল্পগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিজ্ঞানসম্মত ও টেকসই পুনঃখননের মাধ্যমে শাখা নদীগুলোকে পুনর্জীবিত করা হোক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category