পহেলা বৈশাখ, বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ। দিনটি সকল বাঙালি জাতির ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের ১ম দিন। বর্ষপঞ্জি অনুসারে বাংলাদেশের প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়। ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে এই উৎসবটি বৈশাখী শোভাযাত্রা, মেলা, পান্তাভাত খাওয়া, হালখাতা খোলা, পুরস্কার বিতরণ, ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করা হয়েছে। বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছা বাক্য হল “শুভ নববর্ষ”।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মো. আরিফুজ্জামান
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হরিপুর ঠাকুরগাঁও
উপাধ্যক্ষ মো.জামাল উদ্দিন, সভাপতি, উপজেলা বিএনপি হরিপুর ঠাকুরগাঁও।
আলহাজ্জ মো.আবু তাহের,সা.সম্পাদক, উপজেলা বিএনপি,মো. রুবেল হোসেন,উপজেলা কৃষি অফিসার ডা.মো. সোহাগ রানা, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল হরিপুর ঠাকুরগাঁও।রাইহানুল হক মিয়া, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হরিপুর-ঠাকুরগাঁও
মো.জয়নুল,সিনিয়র লিডার,ফায়ার সার্ভিস
হরিপুর-ঠাকুরগাঁও,শাবানা পারভীন, সভাপতি
জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, হরিপুর-ঠাকুরগাঁও,রুমা বেগম, ওয়ার্ল্ড ভিশন রানীশংকৈল-ঠাকুরগাঁও অনেকেই।২০১৬ সালে, ইউনেস্কো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এই উৎসব শোভাযাত্রাকে “মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য” হিসেবে ঘোষণা করে।
আধুনিক নববর্ষ উদ্যাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ কর্মকান্ডের উল্লেখ পাওয়া যায়।নতুন বছরের উৎসবের সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নিবিড় যোগাযোগ। গ্রামে মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, নতুন বৈশাখী জামাকাপড় পরে এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বাড়িঘর পরিষ্কার করা হয় এবং মোটামুটি সুন্দর করে সাজানো হয়। বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। কয়েকটি গ্রামের মিলিত এলাকায়, কোন খোলা মাঠে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। মেলাতে থাকে নানা রকম কুটির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন, থাকে নানারকম পিঠা পুলির আয়োজন। হরিপুরে ইলিশ মাছ, শুঁটকি ভর্তা,পেঁয়াজ ভর্তা,কালাই ভর্তা দিয়ে পান্তাভাত খাওয়ানো হয়েছে। এই দিনের একটি পুরনো সংস্কৃতি হলো গ্রামীণ ক্রীড়া,গরুর গাড়ি, নাঙ্গলকোট প্রতিযোগিতার আয়োজন। এর মধ্যে নৌকাবাইচ, লাঠি খেলা কিংবা কুস্তি এক সময় প্রচলিত ছিল। বাংলাদেশে এরকম কুস্তির সবচেয়ে বড় আসরটি হয় ১২ বৈশাখ, চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে, যা জব্বারের বলি খেলা নামে পরিচিত।
হরিপুরে বৈশাখী উৎসবের একটি আবশ্যিক অঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। হরিপুরে চারু ও নৃত্যকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখের সকালে এই শোভাযাত্রাটি বের হয়ে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চারু ও নৃত্যকলা ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। এই শোভাযাত্রায় গ্রামীণ জীবন এবং আবহমান বাংলাকে ফুটিয়ে তোলা হয়। শোভাযাত্রায় সকল শ্রেণী-পেশা ও বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করে। শোভাযাত্রার জন্য বানানো হয় বিভিন্ন রঙের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি। ১৯৮৯ সাল থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখ উৎসবের একটি অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
হরিপুরে পহেলা বৈশাখ সূর্যোদয়ের পর সকাল ৯:০০ ঘটিকায় নৃত্যকলার শিল্পীরা সম্মিলিত কণ্ঠে এসো হে বৈশাখ গান গেয়ে নতুন বছরকে গ্ৰহণ করে নেন। ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ১৯৬৭ সাল থেকে ছায়ানটের এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়েছিল।