হোঁচট - ছোট গল্প

মোঃ আব্দুল মতিন সায়েদি প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারী , ২০২৪ ১১:৪৫ আপডেট: ১১ জানুয়ারী , ২০২৪ ১১:৪৫ এএম
হোঁচট - ছোট গল্প
হঠাৎ আকাশে ঘনকালো মেঘ ঘনিয়ে এলো যদিও একটু একটু করে আভাস মনে জেগেছিল তারপরও চরম বিপদের সময় কেউ যদি বাটখারা দিয়ে মেপে মেপে আচরনের ওজন করে তাহলে এর চেয়ে আশ্চর্যের কি আর আছে।তবে কি তা–ই হলো। সব ঠুনকো? নাহ আর ভাবতে পারছে না সরলা। ইচ্ছে, প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্বেও মেসেজটা লিখতে হাত কাঁপছে। খুব জানতে ইচ্ছে করছে মানুষটা কেমন আছে।

হঠাৎ আকাশে ঘনকালো মেঘ ঘনিয়ে এলো যদিও একটু একটু করে আভাস মনে জেগেছিল তারপরও চরম বিপদের সময় কেউ যদি বাটখারা দিয়ে মেপে মেপে আচরনের ওজন করে তাহলে এর চেয়ে আশ্চর্যের কি আর আছে।তবে কি তা–ই হলো। সব ঠুনকো? নাহ আর ভাবতে পারছে না সরলা।
ইচ্ছে, প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্বেও মেসেজটা লিখতে হাত কাঁপছে। খুব জানতে ইচ্ছে করছে মানুষটা কেমন আছে। অথচ কতটা কাছের, কতটা কাছের এর চেয়েও কাছের আর কি হতে পারে। মন্ত্র পড়া না হলেও মনে মনে কতবার মন্ত্র পাঠ হয়ে গেছে তা ইশ্বর ভাল জানেন। মন খুলে কথা বলা, না বলা ভাষা বুঝে নেওয়া যেন পৃথিবীটা স্বর্গ হওয়া,যেন মাথার উপরে একটা শীতল ছাতা রোদ বৃষ্টি ঝড়ে যেন নেতিয়ে না পড়ে সে খেয়াল রেখেছেন সারাক্ষণ। সেই মানুষটার খোঁজ সরলা নিতে পারছে না, মানুষটা যে অন্যের একান্ত ব্যক্তিগত সম্পদ,তার প্রতি অধিকার খাটাবে কোন অধিকারে, কেড়ে নেবে তাঁকে, সেটা সরলার পক্ষে সম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং থাক সে ভুলে, একরাশ ঘৃণা নিয়ে,এদিক সেদিক দিক ভোলা হয়ে,হাজারো কাজের ভীড়ে, আড়ালে, সেই ভালো নিজেকে গুটিয়ে নিতে যেহেতু পেরেছে। যতই পুড়ুক না মনটা, কতটা পুড়তে পারে,পুড়ে পুড়ে ছাই হওয়া ভস্ম মনটা নিয়ে কেটে যাবে দিন কোনমতে।
ভীষণ স্ট্রেসের মধ্যে দিন কাটছে, একটা সমস্যা মিটছে তো আরেকটা সামনে এসে হাজির, কাকে বলবে?  নাহ্, সে মনঃস্থির করেছে আর কারো সাথে সমস্যা নিয়ে কথা বলবে না, সুখ সুখ কথা ছাড়া। দুঃখ কষ্ট সব নিজের। নিজের সমস্যা নিজের কাছেই থাক।মানুষের কি দায় পড়েছে তার সমস্যার কথা জানার। হয়তো কেউ বলবে বেঈমান,বলুক, বলে যদি কেউ শান্তি পায় পাক না ভুলে যাওয়াটা ঘৃণা করাটা তাহলে নীলের পক্ষে খুব সহজ হবে।
সরলার সহজ সরল জীবনটা দিনে দিনে জটিল থেকে জটিলতর হতে চলেছে। ভরপুর কোলাহল পূর্ণ সংসার জীবনের ইতি টেনেছে কবে।দিনে দিনে শুন্য বিরানভূমি হয়ে গেল সব, শরীরেও ঘুন ধরেছে।এ ঘুনে ধরা শরীরে জীবনের সব চাহিদা পূরন করে চলা আর কি করে সম্ভব। ন্যায় অন্যায় বিসর্জন দিয়ে শুধু অফুরন্ত ভালোবাসা যার সমস্তটাই ছিল শ্রদ্ধা আর সম্মান মিশ্রিত।ভুলেনি কিছুই, সর্বান্তকরণে চেয়েছে যেন তাঁর কাছ থেকে নীল কোন আঘাত না পায়।কিন্তু সেটা আর হলো না। অতিরিক্ত ভালোবাসা পেয়ে অভিমানের মাত্রাটা একটু বেশি হয়ে গিয়েছিল, আর হবে না কেন সরলা যা কল্পনায় আনে না নীল সেইসব অপবাদে তাঁকে ক্ষিপ্ত করে তোলে।আর অপবাদ দেবেই না– বা কেন নীল যেভাবে সরলাকে পেয়েছে সেভাবেই তো তাঁকে বিচার করবে।ভাবুক যা ভাবার,তারপরও সরলা নীলকে আর ডাকবে না কোনদিন …, যতদূরেই যায় যাক, অদৃষ্ট যা কিছু ছিল হয়তো তা–ই হয়েছে , তবু্ও নীল অমলিন হয়ে থাক তাঁর জীবন সঙ্গিনীর সাথে,আর সরলা?
হুম, তাঁর মনের আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে, তাঁকে তো হোঁচট খেয়ে খেয়ে পথ চলতে হবে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত, বিধাতা যেভাবে চায় ঠিক সেভাবেই।বিধাতার বর মাথা পেতে না নিলে যদি কারো অকল্যান হয় সেটা কি করে মেনে নেবে সরলা?
সরলা আর লিখতে পারছিল না। অশ্রুসিক্ত চোখে অক্ষর গুলো ঝাপসা হয়ে এলো। বেশি কথা না বাড়িয়ে শুধু বলল আমি তোমাকে মুক্ত করে দিলাম নীল, ভালো থেকো —
তারপর ঘরের আলো নিভিয়ে অনেকক্ষন কাঁদলো আর নীলের মন ছুঁয়ে যাওয়া কথাগুলো কানে ধ্বনিত হতে লাগলো বারংবার বারবার বারবার।
আলাপের সুত্রটা ফ্রেন্ট রিকোয়েস্ট দিয়ে, ——আমাকে কি একসেপ্ট করা যাবে?
আমি নীল।
আপনি?

কেন? নাম দেখেই তো রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছেন,
ওহ সরি! আপনি সরলা?
জী।
আপনার নামটা বেশ মিষ্টি,
সরলা—
আপনি দেখতেও বেশ মিষ্টি
তাই বুঝি, ছবিতে সবাইকে সুন্দর লাগে।
বাস্তবে সেরকম কিছু না।
সরলা মনে মনে বেশ বিরক্ত বোধ করছিল।
কারণ শৈশব থেকে কিছু ছেলেদের চাহনি এড়িয়ে চলতে চলতে ছেলেদের অহেতুক কথাবার্তায়ও তার খুব বিরক্ত লাগতো। তাই সে বলল আমি একটু ব্যস্ত আছি। প্লিজ কিছু মনে করবেন না।
সরলা সবসময় স্বতন্ত্র স্বভাবের।এজন্যই অনেকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখেন এবং খুব সহজে অন্যের  আস্থাভাজন হয়ে পড়েন।তাই বলে জীবনের পড়ন্ত সময়ে, কেউ যদি বারবার রিং করে তবে কি কারো প্রেমে পড়ার ভয়ে চুপসে থাকবে, না সেটা কেন, এখন তার বয়স হয়েছে ভয় পাওয়ার কিছু নেই ভেবে সে নির্দ্বিধায় সবার সাথে কথা বলে। তা–ই বলে অসামঞ্জস্য কথা মোটেও পছন্দ নয়,তাহলে ব্লক করা ছাড়া উপায় থাকে না। ইন্টারনেট ব্যবহার দোষের নয়, বহু অজানা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় যেমন তেমনি মানুষের বিচিত্র রঙ রূপ ধরা পড়ে। কিন্তু সবাই কে তো ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া সম্ভব নয়। যদি বা খুব নিকট আত্মীয়তার সুত্র থাকে। সে যাই হোক না কেন সরলা সবমসময় রুচিশীল মনোভাব নিয়েই চলে। মন মানষিকতা রুচিশীল হলে একজন মানুষ সকল মানষিতার মানুষের সাথে অনায়াসে মিশতে পারে এবং সব শ্রেনির মানুষই সম্মান প্রদর্শন করে, ফলে নিজের প্রতি নিজের গভীর আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছিল। কিন্তু সেই আত্মবিশ্বাস যেন আস্তে আস্তে ক্ষীণ হয়ে আসছে। পূর্ণিমার চাঁদ যেমন ধীরে ধীরে জ্যোতি হারিয়ে অমাবস্যায় ঢেকে যায় সরলার জীবনটাও ঠিক তেমনি অমাবস্যার আঁধারে ছেয়ে যাচ্ছে।

সামাজিক বন্ধন গুলো দিনে দিনে ম্লান হয়ে আসছে। অবলা নারীর উপর নির্যাতন দিনদিন বেড়েই চলছে। মানুষ রুপি শকুনেরা ভুলে যায় সম্পর্কের নাম, নারী মানেই যেন ভোগ্য পণ্য, হউক সে শিশু কিশোরী যুবতী কিংবা বৃদ্ধা। ভালোভাবে নিরাপদে জীবনযাপণ করার কোন অধিকার যেন তাদের নেই। যে নারী সমালোচনার তোয়াক্কা না করে এগিয়ে চলছে সবার সাথে মনখুলে কথা বলছে তাঁর নামে হাজার টা মনগড়া কাহিনি। সমাজের মানুষের খোঁসপাঁচড়া চুলকানির মতো, চুলকাতে চুলকাতে ছড়িয়ে দেয় সমাজের বিভিন্ন শ্রেনীর মুখে হাসির খোরাক জোগাতে।
সরলা ঠিক সেভাবেই চলতে গিয়ে হোঁটচ খাচ্ছে বারবার,মাঝে মাঝে ভেঙে পড়ছে আবার নতুন উদ্দীপনায় জেগে উঠার চেষ্টা করছে মুখোশধারী সমাজটাকে বুঝিয়ে দিতে অগ্নি পরীক্ষা যদি দিতে হয় তবে শুধু সীতারা দেবে কেন?রামের মুখোশধারী রাবণেরা কেন নয়। যাঁরা নিজেকে কলুষিত করতে চায় না তাঁদের দিকে নজর না দিলেই হয়।
আছে তো সমাজে অনেক নারী যাঁরা বিক্রি হওয়ার জন্য দোকান খুলে বসেছে,তাঁদের কাছে যাও নইলে নিজেকে শোধরাও।

(সুলতানা বেগম)

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo