সাভারে কোম্পানির মালিকানা দ্বন্দ্বের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার সাংবাদিক

রফিকুল ইসলাম জিল্লু প্রকাশিত: ২৭ মে , ২০২৪ ০৭:৫০ আপডেট: ২৭ মে , ২০২৪ ০৭:৫০ এএম
সাভারে কোম্পানির মালিকানা দ্বন্দ্বের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার সাংবাদিক
সাভারে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি বেঙ্গল ফাইন সিরামিক্স লিমিটেড নামের একটি কারখানা দখলের অভিযোগ উঠেছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ওপর প্রতিষ্ঠান সি পার্ল বীচ্ রিসোর্ট নামের অপর একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে। কোম্পানির মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলমান দ্বন্দ্বের জেরে কোম্পানিতে আদালতের ১৪৫ ধারা জারি রয়েছে।

সাভারে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি বেঙ্গল ফাইন সিরামিক্স লিমিটেড নামের একটি কারখানা দখলের অভিযোগ উঠেছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ওপর প্রতিষ্ঠান সি পার্ল বীচ্ রিসোর্ট নামের অপর একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে। কোম্পানির মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলমান দ্বন্দ্বের জেরে কোম্পানিতে আদালতের ১৪৫ ধারা জারি রয়েছে।

রবিবার (২৬ মে) সকালে ঢাকার সাভার ৬ নং ওয়ার্ড এলাকার  ভাগলপুরের বেঙ্গল ফাইন সিরামিক্স লিমিটেড নামের কারখানাটি দখলের ঘটনা ঘটে। এঘটনায় তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে দ্য ডেইলি স্টারের নিজস্ব প্রতিবেদক আকলাকুর রহমান আকাশের ওপর হামলা করে দখলকারীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৭ সালে কোম্পানিটি মোটা অংকের দায় মাথায় নিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। পরে বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক অভিজিৎ কুমার রায়ের পরিবার এক এমওইউ চুক্তির মাধ্যমে কোম্পানির ২৪.২৯ শতাংশ স্পন্সর শেয়ার ক্রয় করে এজিএম এর মাধ্যমে কোম্পানির পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এরপর বিভিন্ন জটিলতা শেষ করে ২০১৯ সালে কারখানাটি পুনরায় চালু করা হয়।

জানা যায়, কোম্পানিটি চালু করার পরে আগের মালিকপক্ষ চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে আবারও  মালিকানা দাবি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। উচ্চ আদালত বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক অভিজিৎ কুমার রায়ের বাবা বিশ্বজিৎ কুমার রায়কে কারখানা পরিচালনার নির্দেশ দেয়। তবে ২০২৩ সালে আগের মালিকপক্ষ  বিক্রিত শেয়ার পুনরায় "সী পার্ল বীচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা"এর কাছে বিক্রি করে। এর পর থেকে সী পার্ল গ্রুপ কয়েক দফায় কারখানাটি দখলের চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আদালত থেকে একটি ১৪৫ ধারার আদেশ নিয়ে আসেন বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক অভিজিৎ কুমার রায়। কিন্তু আদালতের সেই আদেশ উপেক্ষা করেই আজ কারখানাটি দখল করা হল।

বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক অভিজিৎ কুমার রায় জানান, আজ সকাল ৯টার দিকে সী  পিয়ার্ল গ্রুপের লোকজন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও কয়েকশ সন্ত্রাসী নিয়ে জোড়পূর্বক তাদের কারখানায় প্রবেশ করে। পরে হামলাকারীরা কারখানা থেকে বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেডের নিরাপত্তা কর্মী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বের করে দিয়ে কারখানা ও অফিস ভবন দখল নেয়। পরে হামলাকারীরা কারখানার সকল সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলে।

তিনি আরও বলেন, সাভার মডেল থানার কাছে আদালতের ১৪৫ ধারার আদেশের কপি থাকা সত্ত্বেও পুলিশ আজ নিরব ভূমিকা পালন করেছে। আমরা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে দখলের বিষয়টি জানালে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। কিন্তু তারা লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান।

হামলার ব্যাপারে ভুক্তভোগী দ্য ডেইলি স্টার ও নাগরিক টিভির সাংবাদিক আকলাকুর রহমান আকাশ বালানিউজকে বলেন, সকালে বেঙ্গল ফাইন সিরামিকস লিমিটেড নামের একটি কারখানা একটি পক্ষ দখল করতে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে অনেক লোকজনসহ পুলিশ একত্রিত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে কারখানার ভেতরে গিয়ে দেখি কারখানার সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হচ্ছে, কম্পিউটার খুলে নিয়ে যাচ্ছে কেউ কেউ। এসব ঘটনার  ছবি তুলতেই পেছন থেকে কয়েকজন অতর্কিত হামলা চালিয়ে মুখসহ শরীরে কিল ঘুষি মারতে থাকে। পরে তারা আমার মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। মোবাইল উদ্ধার করা গেলে ঘটনা এবং সেখানে উপস্থিত অনেকের ছবি পাওয়া যাবে।  এঘটনায় আহতাবস্থায় ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করে প্রথমে এনাম মেডিকেলে পরে ঢাকার চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলাকারীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হালিমের অনুসারী বলে পরিচয় দিয়েছেন।

বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেড কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মশিউর রহমান নামের এক ব্যক্তি বলেন, আজকেই আমরা কারখানা বুঝে পেয়েছি। তবে কারখানার ভিতরে কোন ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেনি। বাইরে কিছু ঘটেছে কিনা শুনি নি।  

কারখানার নিরাপত্তারক্ষী সাগর হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সকাল ১১ টার দিকে কারখানাটিতে শতাধিক লোকজন কারখানায় আসে। সেখানে একজনকে ছবি তুলতে দেখে লোকজন এগিয়ে যায়। সেখানে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে যিনি ছবি তুলেছেন তাকে মারধর করা হয়। পরে জানতে পারি যিনি মারধরের শিকার হয়েছেন তিনি একজন সাংবাদিক। এরবেশি কিছু জানি না।

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ জামান বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। আমি নিজেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো। 

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo