গত ৩১ মার্চ ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ রাত অনুমান ০০.৩০ ঘটিকায় শেরপুর সদর থানাধীন ব্রহ্মপুত্র নদীর বালুর চরে মৃত আব্দুল হালিম জীবন (৪৮) এর লাশ পাওয়া যায়। মৃতের শরীরে বিভিন্ন স্থানে ও পায়ে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন দেখা যায়।
পরে শেরপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) জনাব খোরশেদ আলম (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) মহোদয় তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন পূর্বক তাঁর নেতৃত্বে জেলা গোয়েন্দা শাখা, শেরপুর এর অফিসার ও ফোর্সদের সহায়তায় চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যা কান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সাথে জড়িত মোট ০৬ (ছয়) জন আটক করা হয়। পরে পুলিশ হেফাজতে আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে,নিহত আব্দুল হালিম জীবন (৪৮) একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত আমেরিকার পাসপোর্টধারী দ্বৈত নাগরিক। তিনি দীর্ঘ ২৫ (পঁচিশ) বছর আমেরিকায় বসবাস করে দুই বছর পূর্বে বাংলাদেশে এসে নিঃসন্তান হওয়ায় ২য় বিয়ে করেন ।
পরে তার ২য় বিয়ে ও পারিবারিক বিষয় নিয়ে পিতামাতার সহিত বিরোধ সৃষ্টি হয়। সেই বিরোধের জের হিসেবে নিহতের পিতা তার বিরুদ্ধে ০৪ টি মামলা করে এবং নিহত আব্দুল হালিম ও তার স্ত্রী মিলে পিতার বিরুদ্ধে ০২ টি মামলা করে। তাদের দায়ের করা একটি মামলায় তার পিতা দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস কারাভোগ করে এক সপ্তাহ পূর্বে জামিনে আসে। এই কারণে পরিবারের লোকজন আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে তার আমেরিকান প্রবাসী অপর এক ভাই এর বন্ধু শাহিনকে দিয়ে আব্দুল হালিম জীবনকে শায়েস্তা করতে বল্লে শাহিন তার ব্যবসায়িক পার্টনার আব্দুর রউফকে, (সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান) দিয়ে ডিসিস্টকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে।
এর প্রেক্ষিতে আব্দুর রউফ তার সাঙ্গ-পাঙ্গ কালু, ময়নাল, জিহাদ, মোবারকদেরকে দিয়ে শায়েস্তা করার জন্য নির্দেশ দিলে কালু তার পূর্ব পরিচিত ০২ জন মহিলা, মনোয়ারা বেগম ও রুপা বেগমকে পরিকল্পনামাফিক কাজটি করার জন্য প্রস্তাব দেয়। পরে এর সূত্র ধরে রুপা বেগম আব্দুল হালিম জীবন সাথে প্রেমের অভিনয় করে গত ৩০/০৩/২০২৪ তারিখ অনুমান ০৩.৩০ ঘটিকার সময় ডিসিস্টকে ডেকে এনে কৌশলে আসামিদের নিকট তুলে দেয়। আসামি আব্দুর রউফ, কালু, ময়নাল, জিহাদ, মোবারকগন ডিসিস্টকে একটি ঘরে আটক করে রাত অনুমান- ০৯:০০ ঘটিকার সময় ডিসিস্ট এর মোবাইল ফোন থেকে তার স্ত্রীর কাছে ৯৩,০০০/- টাকা মুক্তিপন দাবী করে অপহরনের নাটক সাজানোর চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আসামিগণ ডিসিস্ট আব্দুল হালিম জীবন কে শেরপুর সদর থানাধীন চুনিয়ার চর গিয়াস উদ্দিন এর বাড়ির দক্ষিন-পশ্চিম দিকে ব্রহ্মপুত্র নদীর চরে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে মারপিট ও ছুরিকাঘাত করে নৃশংস ভাবে হত্যা নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ধস্তাধস্তির ফলে আসামি কালু ও জিহাদ আহত হয়।এ ঘটনার প্রেক্ষিতে শেরপুর সদর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
সোমবার (১ এপ্রিল) বেলা ১২ ঘটিকায় শেরপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের মূলরহস্য উদঘাটন, আসামি গ্রেফতার ও আলামত উদ্ধার বিষয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে ব্রিফিং করেন শেরপুর জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব মোনালিসা বেগম পিপিএম-সেবা। ব্রিফিং কালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) জনাব মোঃ খোরশেদ আলম (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জনাব মোঃ সাইদুর রহমান সহ শেরপুর জেলা পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।