মাদারগঞ্জে ৩০ হাজার মানুষের ভরসা একটি নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ২৩ আগস্ট , ২০২৫ ১৯:০৫ আপডেট: ২৩ আগস্ট , ২০২৫ ১৯:০৫ পিএম
মাদারগঞ্জে ৩০ হাজার মানুষের ভরসা একটি নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো


জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার ফুলারপাড়া এলাকায় সর্বগ্রাসী ভয়াবহ যমুনার শাখা নদীতে ফুলারপাড়া ও আশপাশের  স্থানীয় জনসাধারণের উদ্যোগে নির্মিত হয় একটি বাঁশের সাঁকো। এটি প্রসংশীয় উদ্যোগ তবে, বরং প্রশংসারও দাবিদার বটে.!
সরজমিনে জানা যায়,  জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার ৫ জোরখালী ইউনিয়নের ফুলারপাড়া এলাকায় সর্বগ্রাসী ভয়াবহ
 যমুনার শাখা নদীতে স্থানীয়দের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে একটি বাঁশের সাঁকো, নরভরে এই বাঁশের সাকোঁ টিতে দীর্ঘদিন জনসাধারণের চলাচল দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মাদারগঞ্জ উপজেলার ১৫ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা নড়বড়ে একটি বাঁশের সাঁকো। উপজেলার জোড়খালি ইউনিয়নে ফুলারপাড়া এলাকায় সর্বগ্রাসী ভয়াবহ  যমুনার শাখা নদীতে সেতু না থাকায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে ১৫০ মিটারের একটি ঝুঁকিপূর্ণ নড়বড়ে একটি  বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন বয়স্ক, রোগী, স্কুল-কলেজের কোমল মতি শিশু শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় কৃষকরা চলাচলে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তি  পোহাচ্ছেন। 
স্থানীয়দের অভিযোগ, জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচন এলে নরভরে বাঁশের সাকোঁর পরিবর্তন করে স্থায়ী সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে আর কোনো উদ্যোগ নেন না। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হলেও বছরের পর বছর জনপ্রতিনিধিদের কাছে ঘুরেও সেতুর বিষয়ে মিলছে না কোনো সমাধান। 
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদারগঞ্জ উপজেলার ৫ নং জোড়খালি ইউনিয়নে সর্বগ্রাসী ভয়াবহ যমুনার একটি শাখা নদী ফুলারপাড়াসহ ১০টি গ্রামকে আলাদা করেছে। ওইসব গ্রামের মানুষ ওই নদীটি প্রথমে নৌকা দিয়ে পারাপার শুরু করে। পরে এলাকাবাসীর নিজস্ব উদ্যোগে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে। এরপর থেকে এ সাঁকো দিয়ে ফুলারপাড়া, জামিরা, পাটাদহ, কয়ড়া, চররৌহা, নান্দিনা, খলিশাকুড়িসহ দুই পাড়ের প্রায় ১৫ গ্রামের মানুষ পারাপার হচ্ছেন। স্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবিতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও কোনো সমাধান মেলেনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কয়ড়া বাজারের অদূরেই ফুলারপাড়া এলাকা। কিছু পথ মাটির সড়ক দিয়ে যাওয়ার পরে যমুনার শাখা নদীটির ওপর প্রায় ১৫০ মিটারের একটি বাঁশের সাঁকো দেখা যায়। ওই বাঁশের সাঁকো দিয়ে মোটরসাইকেল, সাইকেল, ভ্যানসহ মানুষ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করছে। 
এ ছাড়াও কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য মাথায় নিয়ে বাজারে যাতায়াত করেন ওই এলাকার কৃষক। এ বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করছে বয়স্ক, শিক্ষার্থী ও রোগীসহ দুই পাড়ের মানুষ। সেতুর অভাবে কৃষি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন দিকে পিছিয়ে পড়ছে ওই অঞ্চলের দরিদ্র মানুষগুলো।
স্থানীয় বাসিন্দা ফজলুল হক জানান, সেতুর অভাবে ১৫ গ্রামের মানুষ তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বাঁশের সাঁকো ছাড়া ওই অঞ্চলের মানুষকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ ঘুরে বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা শহরে যাতায়াত করতে হয়। এতে সাধারণ মানুষকে গুনতে হয় বাড়তি টাকা। স্হানীয় কলেজছাত্র আব্দুল ওয়াদুদ বিদ্যুৎ বলেন, আগে আমরা নৌকা দিয়ে চলাচল করেছি। পরে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। বাঁশের সাঁকো দিয়ে স্কুল-কলেজে যাতায়াত করতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 
স্হানীয় কৃষক আব্দুল করিম বলেন, ভাঙা বাঁশের সাঁকো দিয়ে ফসল বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। মাথায় করে কৃষিপণ্য বাজারে নিয়ে যেতে হয়। সেতু না থাকায় এ অঞ্চলের কৃষক তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য সঠিক সময়ে বাজারে নিতে পারে না। ফলে কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। 
 বিষয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ার গোলাম কিবরিয়া তমাল দ্য ডেইলি ফ্রন্ট নিউজ কে বলেন, বর্তমানে মাদারগঞ্জের সব সড়কেই খানাখন্দ। এর মধ্যে ৯টি জনগুরুত্বপূূর্ণ সড়ক সংস্কারের জন্য এস্টিমেট তৈরি করে পাঠিয়েছে উপজেলা এলজিইডি। ২ মাসের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া ও কাজ শুরু হবার সম্ভবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব নাদির শাহ্ মহোদয় দ্য ডেইলি ফ্রন্ট নিউজ কে বলেন, জামালপুর ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা নদী দ্বারা বেষ্টিত। যার ফলে এ জেলায় সেতুর চাহিদা অনেক বেশি। আমরা ক্রমান্বয়ে সবগুলো সেতুই বাস্তবায়ন করছি। জোড়খালি সেতুটি আমরা আন্ডার হান্ড্রেড মিটার প্রজেক্টে অন্তর্ভুক্তির জন্য পত্র প্রেরণ করেছি। প্রজেক্টটি পাস হলে আমরা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। 
এ বিষয়ে জামালপুর স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সায়েদুজ্জামান সাদেক দ্য ডেইলি ফ্রন্ট নিউজ কে বলেন, সেতুটি অনুমোদনের জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo