মাদকদ্রব্য হলো এমন সব দ্রব্য যেগুলো মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে তোলে। কেউ যখন মাদকদ্রব্যের প্রতি নেশাগ্রস্ত হয়ে যায়, তখনই তাকে মাদকাসক্ত বলা হয়
মাদকদ্রব্য হলো এমন সব দ্রব্য যেগুলো মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে তোলে। কেউ যখন মাদকদ্রব্যের প্রতি নেশাগ্রস্ত হয়ে যায়, তখনই তাকে মাদকাসক্ত বলা হয়। মাদকের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তি সবার জন্যই ভয়াবহ ক্ষতির কারণ। মাদক ক্ষতি করে আসক্তের, আসক্তের পরিবারের, সমাজের, দেশের।
মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা। গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ প্রায় সব ধরনের মাদকদ্রব্য মিলছে হাতের নাগালেই। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বৃদ্ধি পেয়েছে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সেবন ও বিক্রির প্রবণতা। এমন অভিযোগ জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
উপজেলার প্রতিটি এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ার কারণে দ্রুতই মাদক কারবারিরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মাদকদ্রব্য সরবরাহ করছেন। পাশাপাশি জুয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। আর মাদক সহজে পাওয়ায় অনেকে কৌতূহলবশত না বুঝে মরণফাঁদ নামক মাদকের নীল ছোবলে যুক্ত হচ্ছে। ফলে তরুণ প্রজন্ম নিয়ে চরম উদ্বিগ্নের মধ্যে রয়েছে অভিভাবকরা। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খবর নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় মাদকাসক্ত ও বখাটে ছেলেদের নানান অপরাধ কর্মকান্ডের ঘটনা। যারা ইভটিজিং, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই থেকে শুরু করে খুনখারাবির কাজে লিপ্ত রয়েছে। মাদকাসক্তরা রাতে রাস্তাঘাটে বসে আড্ডায় মেতে উঠে, কোনকোন স্থানে গভীররাত পর্যন্ত জুয়ার আসর বসায়।
বর্তমানে গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, মদ, আফিম ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অতি সহজলভ্য বস্তু। বলা বাহুল্য, তরুণ প্রজন্ম প্রথমত সমবয়সী বন্ধুদের সাথে মুদির দোকানের সহজলভ্য বিড়ি-সিগারেট দিয়ে নেশা শুরু করে। যা সমাজে অতি সাধারণ একটি অপরাধ! কেউবা বিড়ি-সিগারেটকে নেশা হিসেবে গ্রহনই করেন না! অথচ বিড়ি-সিগারেটের সহজলভ্যতাই মাদকাসক্তের মাদকের সূচনা আর মাদকই হলো সকল অপকর্মের প্রসূতি। অধিকাংশ তরুণ মাধ্যমিক স্কুলের গন্ডি পার হওয়ার আগেই সিগারেটের নেশায় আসক্ত হয়। শেষ পর্যন্ত হেরোইন, ইয়াবা ও ফেনসিডিলের তীব্র নেশা উঠতি বয়সেই তাদের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়।
উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের হাট-বাজার থেকে গ্রাম অঞ্চলে হাতের নাগালেই মিলছে মাদকদ্রব্য। উপজেলার পাশ্ববর্তী মাঝিড়া বন্দর, বান্নীঘাটা, সুজাবাদ, ডোমনপুকুর, খরনা হিন্দুপাড়া, সাজাপুর (পন্ডিতপাড়া), বৃ-কুষ্টিয়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা, খোর্দ্দ কুষ্টিয়া চারমাথা, কামারপাড়া হাট, ভোলাবাড়ী স্ট্যান্ড, দক্ষিনপাড়া (দড়িপাড়া), দহিকান্দী, কচুয়াদহ, শাহনগর (ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা), বড়পাথার, মালিপাড়া বাজার, মালিপাড়া কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ মাঠ এলাকা, রামচন্দ্রপুর নতুন বাজার, আড়িয়া বাজার, মানিকদ্বীপা চারমাথা বাজার, নয়মাইল, ডেমাজানি, বামনদিঘী, গোবিন্দপুর, নগরহাট, রাজারামপুর, জোকা, ঘাষিড়া, দুরুলিয়া, খলিশাকান্দী, উপজেলার হাইওয়ে হোটেলসহ অসংখ্য স্থানে মাদকের কেনাবেচা এবং সেবন মামুলি বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সমাজের প্রভাবশালী একটি মহল মাদক কারবারির সাথে জড়িত। মাদক বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে এমন ব্যক্তির নজির অনেক রয়েছে। তাদের অর্থ এবং ক্ষমতার দাপটে সমাজের সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে সাহস পায় না। মাদক ব্যবসায়ীরা রাতারাতি ধনী হচ্ছে অপরদিকে মাদকসেবিরা হচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, মানসিক বিকারগ্রস্ত। মাদকাসক্তের সংসারে অভাব-অনটনের কারনে দেখা দিচ্ছে পারিবারিক কলোহ, ঘটছে বিবাহ বিচ্ছেদের মত গর্হিত ঘটনা। স্থানীয়রা বলেন, পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযানে যাদের গ্রেফতার করা হয়,তাদের অধিকাংশই উঠতি বয়সের যুবক।গ্রেফতারের অল্প দিনের মধ্যেই তারা ছাড়া পেয়ে আবার মাদক কারবারির সাথে জড়িত হয়।
মাদকের ভয়াবহ বিস্তার সত্ত্বেও শাজাহানপুরে এর বিরুদ্ধে বড় কোনো সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। মাদকবিরোধী উল্লেখযোগ্য সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা বা মানববন্ধনের মতো কর্মসূচিও হচ্ছে না। প্রশাসনের ওপর সামাজিক শক্তির কোনো চাপ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে মাদকসেবিদের সামাজিক অপরাধে জনজীবনে অতিষ্ঠ হয়ে উপজেলার একাধিক স্থানে মাদক বিরোধী মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। মানববন্ধনকারীরা এলাকায় মাদক নির্মূলে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
শাজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ওয়াদুদ আলম বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা আমাদের দৈনন্দিন কাজের একটি অংশ, তবে আমাদের স্টাফের অধিকাংশই নতুন হওয়ায় একাজে আমরা অগ্রগামী হতে পারি নি। শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতী, চিন্তিত সন্ত্রাসীসহ ওয়েরেন্টের আসামি ধরার কাজে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। খুব দ্রুতই মাদক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসব।