চরফ্যাশনের গ্রামে গ্রামে চলছে তরমুজ কাটার উৎসব। দিনমজুর, নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর সবাই তরমুজ কাটার উৎসবে মেতে উঠেছে। তরমুজের বাম্পার ফলনে খেটে খাওয়া তরমুজ চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। চাঙ্গা করে তুলেছে গ্রামীণ অর্থনীতিকে।
যার সুফল ভোগ করছে সাধারণ কৃষক পরিবার। চরফ্যাশন সদরসহ ঢাকা এবং চট্রগ্রামের ঝাঁকে ঝাঁকে পাইকাররা এখন তরমুজ সংগ্রহের জন্য গ্রামের কৃষকের ক্ষেতে ক্ষেতে ছুঁটছেন। প্রত্যন্ত গ্রামের সড়ক ধরে দৈত্তাকার ট্রাকগুলো পৌছে যাচ্ছে কৃষকের ক্ষেতে। নদীকূলে ঝাঁকে ঝাঁকে কার্গো ভিরছে তরমুজের লোড নিতে।
কৃষক থেকে পাইকারের হাত ঘুরে প্রতিদিন কার্গো, ট্রাক এবং লঞ্চ বোঝাই তরমুজ বরিশাল, ঢাকা এবং চট্রগ্রামের আড়ৎ ঘুরে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছুটছে। এ বছর এ অঞ্চলে ১০ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষাবাদ করা হয়েছে।
উপজেলার মুজিব নগর, চরকলমি নুরাবাদ ও নীলকমলসহ বেশ কিছু ইউনিয়ন ঘুরে দৃষ্টিনন্দন তরমুজের ফলন দেখা গেছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ফলন হয়েছে বলে জানান, চরফ্যাশন উপজেলা দক্ষিণ আইচা থানার চর নলুয়া ইউনিয়নের কৃষক আখতার হোসেন তালুকদার।
তিনি জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও তরমুজ চাষ করেছেন। তরমুজের ফলন ভালো হয় তাই ১০ বছর ধরে তরমুজ চাষ করেন তিনি। এবছর ২ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ২ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। বর্তমানে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন পাইকারি দরে। তার প্রত্যাশার অধিক ফলন হয়েছে। শেষ সময় পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকলে কষ্টার্জিত উপার্জন পাবেন।
নুরাবাদ ইউনিয়নের কৃষক আহাম্মদ উল্লাহ জানান, গতবছরের তুলনায় এ বছর ভালো ফলন হয়েছে। এক একটি তরমুজের ওজন সর্বনিম্ম ৮ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ কেজি পর্যন্ত হচ্ছে। পাইকাররা প্রতি একর জমির তরমুজ ১ লাখ টাকা দর হাঁকাচ্ছেন। তার প্রত্যাশা এই মূল্যে প্রতি একর বিক্রি করতে পারলে তার ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা লাভ হবে। পাইকার খলিল উল্যাহ দেওয়ান বলেন, আমরা ঢাকায় পাঠানোর জন্য আগাম ফসল কিনছি।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, চরফ্যাশন বাজারে প্রতি পিস তরমুজ ৩০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা বলেন, আগাম ফসল তাই দাম একটু বেশি। আমরাও মাঠ থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। গত বছর বৃষ্টি হওয়ায় ভালো দাম পাইনি, এবছর যদি বৃষ্টিপাত বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তবে গত বছরের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারব বলে আশা করছি।
চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়ন কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, এ বছর চরফ্যাশন উপজেলাতে প্রায় ১০ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্য মাত্রা নিধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এ বছর ১০ হাজার ৭৮০ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রমজান মাসে তরমুজ পরিপক্ব হওয়াতে কৃষকরা মোটামুটি ভালো দাম পাচ্ছে। এ বছর তরমুজ লাভজনক হয়েছে বলে জানা গেছে।