রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডের বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় জীবন প্রদীদ নিভে গেল ভোলার ৪ জনের। নিহতদের খবর ভোলায় পৌছার পরপরই পরিবারগুলোতে নেমে আসে শোকের মাতম। এরা সবাই বৃহস্পতিবার রাতে ওই ভবনে অবস্থিত কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে কাচ্চি খেতে গিয়েছিলো। জানা গেছে, অগ্নিকান্ডে নিহত ভোলার ৪ জনের মধ্যে ভোলা সদরের ২ যুবক এবং দৌলতখানের ২ জন নারী রয়েছে।
নিহতদের মধ্যে ভোলা সদরের বিএভিএস রোড এলাকার এমদাদুল হক জুনায়েদ। বৃহস্পতিবার রাতে বন্ধুদের নিয়ে কাচ্চি খেতে গিয়ে আগুনে পুড়ে নিহত হন তিনি। শুক্রবার রাতে খলিফাপট্টি ফেরদাউস জামে মসজিদে জানাযা শেষে শহরের কালিবাড়ি রোড বিল্লাহ মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।আরো জানা গেছে, জুনায়েদ পরিবারের সাথে ঢাকায় বসবাস করতেন। তিনি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির এলএলবি’র দ্বিতীয় বর্ষে ছাত্র ছিলেন। বাবা মাইনুল হক হারুনের চাকুরীর সুবাদে দুই বোন ও মাকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন জুনায়েদ। বাবা মা ছেলেকে আইনজীবী বানাতে এলএলবিতে ভর্তি করা করান। বৃহস্পতিবার রাতে বন্ধুদের সাথে পছন্দের কাচ্চি খেতে বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে গিয়ে অগ্নিকান্ডে প্রাণ হারায়। জুনায়েদের ৫বন্ধুর মধ্যে ৩ জন জীবিত বের হলেও ২ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে বলে জানায় তার বন্ধুরা। তার মরদেহ শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে ভোলায় আনা হলে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের মধ্যে নেমে আসে শোকের মাতম। এলাকায়ও শোকের ছায়া নেমে আসে।অপরজন ভোলা সদরের উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের চর কুমারিয়া ১নং ওয়ার্ডের ফরাজী বাড়ীর সিরাজ ফরাজীর ছেলে নয়ন (২৩)। একই ঘটনায় তিনিও প্রাণ হারান। তিনি ওই দিন সকালেই রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডের ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টে চাকরিতে যোগদেন।
১২ ঘণ্টায় মাথায় ভয়াবহ আগুনে পুড়ে জীবনের প্রথম কর্মস্থল থেকে ফিরলেন লাশ হয়ে।আর্থিক সংকটে থাকা কৃষক বাবাকে সহযোগিতা করতেই ঢাকায় গিয়েছিলেন ভোলা সদর উপজেলার চরকুমারিয়া গ্রামের যুবক নয়ন। তার বাড়ি ফেরা হলো লাশ হয়ে।বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের বহুতল ভবেনে অগ্নিকা-ে আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়ে প্রলাপ করছেন মা, আর ছেলে হারিয়ে নির্বাক বাবা। শুক্রবার (১ মার্চ) দুপুরে নয়নের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, আদরের ছোট ছেলে মো. নয়নের ছবি নিয়ে বিলাপ করছেন মা নাজমা বেগম। অগ্নিকা-ের প্রায় ৯ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকালে স্থানীয় চেয়ারম্যানের লিয়াকত হোসেন মনছুর এর মাধ্যমে ছেলের মৃত্যুর খবর পান নাজমা ও তার পরিবার। সেই থেকেই চলছে তার বিলাপ। ছেলের মৃত্যুর খবরে নির্বাক মো. সিরাজ ফরাজী। ছেলের এমন অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর খবর কোনভাবেই মানতে পারছেন না তিনি।শুক্রবার সকালে ছেলের মৃত্যুর খবর আসার পর থেকেই নির্বাক বসে আছেন। খবর পেয়ে বাড়িতে ছুটে এসেছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা।নয়নের স্বজনরা জানান, নয়ন (১৯) নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে চাকরির সন্ধানে ঢাকায় যান। বাবুর্চির সহকারী হিসেবে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বেইলি রোডের ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টে যোগ দেন। ওই রাতের ভয়াবহ অগ্নিকা-ে মৃত্যু হয় তার। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে শুক্রবার সকালে পরিবারের কাছে মৃত্যুর খবর আসে।এদিকে নিহতের ভাই দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মরদেহ শনাক্ত করেন।
তবে কর্মস্থলে এমনভাবে আর কাউকে যেন প্রাণ দিতে না হয় সেই দাবি জানিয়েছেন নিহতের বাবা মো. সিরাজ ও মা নাজমা বেগম।শুক্রবার দুপুরে নিহতের বাড়িতে গিয়ে শোক জানান উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনসুর আলম। তিনি জানান, নয়নের সঙ্গে থাকা নাগরিকত্ব সনদ থেকে নম্বর নিয়ে রমনা থানা পুলিশ তাকে বিষয়টি জানান। পরবর্তীতে বিষয়টি পরিবারকে জানান তিনি। নিহতের পরিবারের জন্য সরকারি সহযোগিতার দাবিও জানিয়েছেন তিনি।সিরাজ-নাজমা দম্পতির ৬ সন্তানের মধ্যে নয়ন সবার ছোট। নয়নের আরও ৪ ভাই ও এক বোন আছে। রাত ১১টায় নামাজে জানাযা শেষে তাকে দাফন করা হয়। দৌলতখানের নিহত ২ সহদোর হলেন দোলা ও মাহিয়া। তাদের গ্রামের বাড়ী দৌলতখান উপজেলার গুপ্তগঞ্জ বাজার এলাকায়। তারা ওই এলাকার মৃত মফিজ মেম্বারের নাতনী। নিহতদের বাবার নাম কবির খান জুয়েল। তিনি দুদকে কর্মরত রয়েছেন। তারা ঢাকার এজিভি কলোনিত বসবাস করেন। আরো জানা গেছে, নিহত দোলা একজন ব্যাংকার এবংতার ছোট বোন মহিয়া অনার্স পড়–য়া ছাত্রী। তাদের মায়ের নাম মুক্তা বেগম। তাদেরকে ঢাকাতেই দাফন করা হয়েছে এমনটাই জানিয়েছেন নিহতদের স্বজন সাংবাদিক মোঃগজনবী।