দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে। ধান আলুসহ অন্যান্য সবজির পাশাপাশি ভুট্টা চাষে মনোযোগ দিয়েছেন কৃষকরা।মাঠে মাঠে ভুট্টার ফুলে বাতাসে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের রাজ্য খ্যাত দিনাজপুরের বীরগঞ্জে এবার চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। এবার ভুট্টার বাম্পার ফলনে আশাবাদী কৃষকরা। ধান চাষের পাশাপাশি ভুট্টা চাষে স্বল্প খরচ এবং অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় এ উপজেলার অধিকাংশ কৃষক ঝুঁকছেন ভুট্টা চাষে। অনুকূল আবহাওয়া ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় স্বল্প খরচে যথাসময়ে কৃষকরা এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন পাবেন বলে আশা করছেন তারা। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মোহনপুর, মরিচা পলাশবাড়ি, মোহাম্মদপুর, নিজপাড়া, শতগ্রাম, শিবরামপুর, সুজালপুর, পাল্টাপুরসহ সব ইউনিয়নেই ব্যাপকহারে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। অধিকাংশ কৃষক আগাম জাতের ভুট্টা চাষ করেছেন। আগাম জাতের এসব ভুট্টা ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যেই তারা বিক্রি করতে পারবেন। আর কিছু ভুট্টা পরিপক্ব ও বিক্রির উপযোগী হতে ৬০ থেকে ৭০ দিন সময় লাগতে পারে। গত বছরের তুলনায় এবার ভুট্টা চাষে কৃষকরা বেশি ঝুঁকে পড়ছেন। ভুট্টা চাষে খরচ কম, অথচ ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে ভুট্টা চাষের আগ্রহ বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। ভালো ফলনের আশায় উপজেলার কৃষকেরা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কৃষকের পাশাপাশি বসে নেই কৃষি কর্মকর্তারাও। পৌরসভায় এবং সদর উপজেলাতে সবচেয়ে বেশি ভুট্টা চাষ হয়েছে। বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে ভুট্টার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২১৬৮ হেক্টর। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তা ছাড়িয়ে এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১১৮০৫ হেক্টর। গত বছরের প্রতি হেক্টর জমিতে খরচ ধরা হয়েছিল ১লাখ ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা, প্রতিকেজি ২৩ টাকা হিসেবে ৯২০ মণ বিক্রি করেছে কৃষক। এবছর ফলন প্রতি হেক্টরে ৩৮০ মণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কম খরেচে অল্প সময়ের মধ্যে অধিক মুনাফা অর্জনকারী ফসল হওয়ায় কৃষক আমন এবং আলু তোলার পর রবি মৌসুমে ভুট্টা লাগাতে বেশ ঝুঁকে পড়েছে। এতে কৃষক অতি সহজেই তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে। উচ্চ ফলনশীল ভুট্টার মধ্যে রয়েছে, পাইওনিয়ার ৩৩৫৫, এনকে ৪০, ৯৮৪, ৩৩৯, ২২৪, কৃষান, করস ইত্যাদি। উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের কৃষক মো: ফারুক মাষ্টার তিনি বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমি আলু আবাদ শেষ করে ১০ হেল হেক্টর জমিতে রবি মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টা আবাদ করার প্রস্তুতি নিয়েছি। বর্তমানে ভুট্টা ক্ষেতের গাছ বেশ ভাল হয়েছে। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে ভালো ফলন হতে পারে। কৃষক খলিল বলেন, ধান কাটার পর আমি দুই বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। আশা করি ভালো ফলন হবে। বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: শরিফুল ইসলাম বলেন, এ বছর রবি মৌসুমে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ১৬৮ হেক্টর। কিন্তু তা ছাড়িয়ে এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৮০৫ হেক্টর। এখনও রোপণ চলমান রয়েছে। তিনি আরো বলেন, উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ১৪শ' ৫০ জন ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষককে ভুট্টা চাষের জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ভুট্টার পরিচর্যার বিষয়ে কৃষককে সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।