রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খাগোরবাড়িয়া এলাকায় তিন বছর আগে জাকির হত্যা মামলার প্রধান আসামী নাটোরের বাগাতিপাড়ার মোহন নামের ২২ বছরের এক অটো ভ্যান চালককে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা। শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকা নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে বাগাতিপাড়া ও রাজশাহীর বাঘা উপজেলার সীমান্ত এলাকার খাগোরবাড়িয়া নামক স্থানে তাকে কুপিয়ে গুরত্বর জখম করা হয়। নিহত মোহন বাগাতিপাড়া উপজেলার চক মহাপুর গ্রামের মোঃ মজাম্মেল হকের ছেলে। সে পেশায় একজন ব্যাটারি চালিত অটো ভ্যান চালক ছিলো।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে বাঘা উপজেলার খাগোরবাড়িয়া বাজারে মকবুল মেকানিকের কাছে যায় তার অটো ভ্যানটি মেরামতের জন্য। বিষয়টি সন্ধ্যা ৭ টার দিকে মোবাইল ফোনে কথা বলে কথা বলে মাকে নিশ্চিত করে মোহন।এমনকি ভ্যান মেকানিক মকবুলের সাথেও কথা বলিয়ে দেয় সে। পরে রাত ১০টার দিকে পরিবারের লোকজন খবর পান মোহনকে কুপিয়ে মারাত্মক খাম-জখম করে ফেলে রেখে গেছে কে বা কারা। এমন খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন বাগাতিপাড়া থানায় খবর দিয়ে মোহন কে আনতে যায়। পথিমধ্যে কয়েকজন তাকে তারই ভ্যানে করে তার মায়ের কাছে দিয়ে চলে যায়। খবর পেয়ে সঙ্গীয় আফিসার ও ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যায় থানার অফিসার ইনচার্জ নান্নু খান। পরে গুরুত্বর আহত অবস্থায় মোহন কে উদ্ধার করে বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জরুরীভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ফাকিহা জান্নাত জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে মোহন নামে একজনকে নিয়ে আসা হলে তাকে প্রাথমক চিকিৎসা দিয়ে রামেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। কারণ তার শরীরের বেশকিছু জায়গায় অপারেশন থিয়েটার ছাড়া সেলাই বা চিকিৎসা দেওয়া সম্ভবনা।
রমেক হাসপালে নেয়ার পরে তার অবস্থা আরও বেশি আশংখ্যাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকায় স্থানন্তর করা হয়। পরে ঢাকায় নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয় বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে নিহত মোহনের মা হনুফা বেগম জানান, প্রায় তিন বছর আগে খাগোরবাড়িয়া গ্রামের জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তি খুন হন। সেই হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে তার ছেলে মোহনকে হত্যা মামলার ১ নং আসামী করা হয়। সে মামলায় তিন বছর জেল হাজতে থাকার পর প্রায় চারমাস আগে তার ছেলেকে জামিনে মুক্ত করে আনেন। তিনি আরও জানান, মোহনকে আসামী করেই থেমে থাকেনি নিহত জাকিরের লোকজন। জামিনের দিন তারা আদালতেই আমার ছেলেকে প্রাণে মেলে ফেলার হুমকি দিয়েছে। মোহন জামিনে আসার পর থেকে প্রায়ই তাকে আক্রমন করতে এসেও ব্যার্থ হয়েছে তারা। কিন্তু এবার তারা আগে থেকে ওঁৎ পেতে থেকে আমার ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলার জন্যই এভাবে কুপিয়েছে। যারা মোহন কে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবী জানান হনুফা বেগম।
বাগতিপাড়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নান্নু খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রাতে খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যান। পরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে মোহনের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার মরদেহ থানায় আনা হয়। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকালে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ওসি আরও বলেন, এ ঘটনায় নিহত মোহনের মামা আয়নাল হক বাদী হয়ে বাগাতিপাড়া ও বাঘা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার মোস্তফা, ইশতিয়াক, আল-আমিন ও রাজিবুল এই চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামী করে এই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনা জানার পর থেকেই অভিযুক্তদের আটকের জন্য অভিযান শুরু করে পুলিশ বলে জানান ওসি নান্নু খান।