সারাদিন না খেয়ে যদি এভাবে শুধু আগুন পোহাতে পারতাম,' আহা কী মজা হতো।’ সন্ধার পর আগুনের ওপর হাত রেখে শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে করতে এ কথা বললেন। নাটোরের একজন মধ্যবয়সী মানুষ। এমন চিত্র এখন সারা দেশেই দৃশ্যমান। গ্রামাঞ্চলে সকাল আর সন্ধ্যার অতি সাধারণ দৃশ্য এটি। কেউ খড়ের মধ্যে, কেউ শুকনা কোনো লাকড়ি বা কাগজের মধ্যে আবার কেউ কেউ কাগজের কোনো কার্টনের মধ্যে আগুন ধরিয়ে চারপাশে ৭-৮ জন মিলে আগুন পোহাতে বসে গেছেন। দাঁড়িয়ে কিংবা বসে, যে যেভাবে পারছেন আগুনের তাপ পোহাচ্ছেন। শৈত্যপ্রবাহে নাজেহাল অবস্থা সবার। হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডায় সবাই জবুথবু- শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার একই হাল। শীত থেকে বাঁচার সাধ্য কারও নেই।
অনেকের কাছে শীতের কনকনে ঠাণ্ডা পানি আর বাঘের সাক্ষাৎ একই কথা। তাই শীতের মধ্যে অনেককেই দেখা যায় একাধারে কয়েকদিন গোসল না করেই কাটিয়ে দিতে। পশু-পাখিগুলোরও শীতের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হয়। আমি গ্রামে বাস করি। আজ ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ সোমবার সকাল ৯টার দিকে গোসল করার জন্য মাটির চুলায় একটি হাঁড়িতে পানি গরম করছিলাম। হঠাৎ দেখলাম কয়েকটি মুরগির বাচ্চা এসে আগুনের তাপ গ্রহণ করছে সানন্দে। এতে সহজেই অনুধাবন করলাম শীতের সকালে হিমেল হাওয়ার শক্তি কত তীব্র।
আবহাওয়া অধিদফতর প্রকাশিত সংবাদে জানতে পারলাম, বিগত সব বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে এবার শীতের তাপমাত্রা সর্বনিন্ম পর্যায়ে নেমে এসেছে। উত্তরাঞ্চলের অবস্থা ভয়াবহ, বিশেষ করে পঞ্চগড়ে গত সোমবার ছিল ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের ইতিহাসে আগে কখনও দেখা যায়নি। দুপুর শেষের দিকে বেলা দেখা যায় কোথাও, আবার দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেও দেখা মেলে না সূর্যের। ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে সারা বেলা। এই প্রচণ্ড শীত সব বয়সের মানুষের জন্যই ভয়ের কারণ। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি। শিশুদের অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আরও একটি ভয় থাকে শীতের মধ্যে।
শীত থেকে বাঁচার জন্য আগুন পোহাতে গিয়ে অনেক সময় অসচেতনতার কারণে অনেকের জীবন পর্যন্ত চলে যায়। বিগত প্রায় সব বছরেই শীতের সময় দেশের কোথাও না কোথাও এ ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে অনেকেই। এক্ষেত্রে নারীরাই বিপদে পড়ে থাকে বেশি। গ্রামাঞ্চলের মা-বোনেরা শাড়ি পরে থাকে সব সময়। হাড়কাঁপানো শীত সহ্য করতে না পেরে বাড়ির পাশেই খড়ের মধ্যে আগুন ধরিয়ে তাপ নেয়ার সময় কখন যে শাড়ির আঁচলে আগুন লেগে যায়, তা শীতের তীব্রতার কারণে বোঝা যায় না। কাজেই সামান্য সচেতনতার অভাবে চলে যেতে পারে একটি তরতাজা প্রাণ, যা আমাদের কারও কাম্য নয়। আবার অনেক সময় আমাদের গ্রামে এমনও হয়েছে যে, শীতের মধ্যে এলাকার ছেলেরা কয়েকজন মিলে কৃষকের খড়ের পুঞ্জির পাশে আগুন পোহাতে গিয়ে সেই পুঞ্জি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কৃষকের জন্য এ ক্ষতি অপূরণীয়। সুতরাং শীত থেকে বাঁচতে গিয়ে কারও যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে সবার দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন।