প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ

মোঃ ইসমাইল ইমন প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর , ২০২৩ ১০:১৪ আপডেট: ১০ অক্টোবর , ২০২৩ ১০:১৪ এএম
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ
বগুড়ার আদমদীঘির ছাতিয়ানগ্রামের দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও সভাপতির স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার দুপুরে উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউপি সদস্য (মেম্বার) এবং ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি মহসীন আলীসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও অভিভাবকরা সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ করেন।

এসব বিষয় নিয়ে তাঁরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অচিরেই শিক্ষা অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ এবং মানববন্ধন করবেন বলেও জানিয়েছেন খোঁজনিয়ে জানাগেছে, ২০০৪ সালে উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের সহযোগীতায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। এরপর বেসরকারি ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়। টিন দিয়ে তৈরি বিদ্যালয়টির জায়গায় ২০১৭-১৮ সালের দিকে দৃষ্টিনন্দন দ্বীতলা ভবন নির্মাণ করা হয়।

বিদ্যালয়টি জাতীয়করনের আগে থেকে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদসহ বর্তমান শিক্ষকরা ওই বিদ্যালয়ে অদ্যবদি কর্মরত রয়েছেন। সেখানে এখন সর্বমোট ৮০জনের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। সম্প্রতি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সভাপতির স্বাক্ষর জাল করা, এক সহকারি শিক্ষককে জরিমানা করা, ক্ষুদ্র মেরামত কাজের বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ ও সহকারী শিক্ষকদের সাথে অশোভন আচরন করাসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক গোলাম মোস্তফা জানান, সপ্তাহ দু’য়েক আগে প্রথম শ্রেণীর ক্লাস নেওয়ার সময় তিনি এক শিক্ষার্থীকে কাছে ডাকেন। ওই শিক্ষার্থী তার কাছে আসার সময় কোনো কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে ঠোঁট ফেটে যায়। এই খবরটি প্রধান শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও বাহিরের লোকজনের কাছে অন্যভাবে উপস্থাপন করেন। বিষয়টি তুচ্ছ হওয়ায় শিক্ষার্থীর অভিভবক ও স্থানিয় লোকজন স্কুলে এসে বিষয়টি দেখে চলে যায়। কিন্তু কয়েকদিন পর প্রধান শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীর কান ফাটানোর অভিযোগ তুলে অভিভবক ও শিক্ষা কর্মকর্তাকে স্কুলে ডেকে আনেন। এরপর তিনি চাকরির ভয় দেখিয়ে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

স্থানিয় ইউপি সদস্য ও বিদ্যালয়ের সভাপতি মহসীন আলী জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামত কার্যক্রমের জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। সেই বরাদ্দের রিটার্ণ ফরমে প্রধান শিক্ষক তার স্বাক্ষর জাল করেন। এরপর প্রধান শিক্ষক কৌশলে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক আবুর সরনাপন্ন হয়ে স্কুলের উন্নয়নের স্বার্থের কথা বলে তার (মহসীনের) স্বাক্ষর নেন। পুরো বরাদ্দের টাকা তুলে মাত্র ৭০-৭৫ হাজার টাকা ব্যায়ে বারান্দায় গ্রীল লাগানো এবং কিছু রঙের কাজ করছেন বলে শুনেছেন। বাঁকি অর্থ তিনি আত্মসাৎ করেছেন। এসব কাজের বিষয়ে তাকে কিছুই জানানো হয় নি।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান, শিক্ষক মোস্তফা ছাত্রকে মেরে কান ফেটে ফেলেছে এটি সত্য। জরিমানা করার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। বরাদ্দের অর্থ ব্যায় সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে অর্থ পেয়েছি সম্পন্ন টাকার কাজ করেছি। সেসময় বরাদ্দের অর্থ থেকে সভাপতি কিছু টাকা চেয়েছিলেন। কিছু দিয়েছিলামও। কিন্তু তার চাহিদামত দিতে পারিনি বলে এখন নতুন করে অভিযোগ করছেন।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মশিউল ইসলাম জানান, বরাদ্দের টাকা উত্তোলন এবং খরচের ক্ষেত্রে সভাপতি-প্রধান শিক্ষকের সমন্বয় প্রয়োজন হয়। স্বাক্ষর জাল করা বা অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি সভাপতি আমাদের কখনো জানান নি। সেসময় অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। তাছাড়া ওই স্কুলের শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে মেরে কান ফাটানোর বিষয়টি সত্য। তবে জরিমানা করার ক্ষমতা আমাদের নেই। ভুক্তভুগি শিক্ষার্থীর চিকিৎসার জন্য ওই শিক্ষকের কাছে থেকে কিছু খরচ নিয়ে মিমাংসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo