দাগনভূঞা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঔষুধ কোম্পানির দৌরাত্ম্যে রোগীদের দুর্ভোগ চরমে

দেওয়ান মোঃ ইকবাল প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারী , ২০২৪ ০৫:৩৬ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারী , ২০২৪ ০৫:৩৬ এএম
দাগনভূঞা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঔষুধ কোম্পানির দৌরাত্ম্যে রোগীদের দুর্ভোগ চরমে
ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাদের দৌরাত্ম্যে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোগীরা। চিকিৎসকের কক্ষের দরজা লেখা সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোন ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির দেখা করা নিষেধ। এ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানছেনা কেউ। রোগীরা বের হলেই ব্যবস্থাপত্র নিয়ে করা হচ্ছে টানাহেচড়া এতে রোগীরা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ছেন।

ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাদের দৌরাত্ম্যে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোগীরা। চিকিৎসকের কক্ষের দরজা লেখা সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোন ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির দেখা করা নিষেধ। এ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানছেনা কেউ। রোগীরা বের হলেই ব্যবস্থাপত্র নিয়ে করা হচ্ছে টানাহেচড়া এতে রোগীরা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ছেন।

গত সোমবারও (১২ ফ্রেব্রুয়ারি) দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে সেই রকম একটি ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। ঘটনার মোঃ সবুজ নামের একজন স্বামী তার গুরুতর অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে জরুরী বিভাগে গেলে, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও সেবা না পেয়ে ওষুধ কোম্পানির লোকের সাথে  বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। মোঃ সবুজ জানান, আমি সোমবার বিকাল আনুমানিক ৩:০০ টার দিকে আমার অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে জরুরি বিভাগে আসি। জরুরি বিভাগে প্রবেশ করে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও সেবা পাইনি। সেখানে শ-দেড় শত ওষুধ কোম্পানির লোক একের পর এক জরুরি বিভাগে প্রবেশ করে সময় নিচ্ছে। এদিকে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হলে সেখানে থাকা রোগীর ভাই স্থানীয় সাংবাদিক দেওয়ান ইকবাল প্রতিবাদ করলে তার উপর ক্ষিপ্ত হয় ওষুধ কোম্পানির লোকজন। এসময় তারা বলেন,সোমবার আমাদের হসপিটাল ভিজিট করার ডেট। সেই সুবাধে আমরা হসপিটালে এসেছি৷ হসপিটালে জরুরী বিভাগে জরুরী রোগীরাই বেশি আসে এমন কথা তুলে ধরে ভুক্তভোগী সেই সাংবাদিক বলেন, জরুরী রোগীদের রেখে ওষুধ কোম্পানির লোকদের নিয়ে ডাক্তারদের ব্যস্ত থাকা কতটুকু যৌক্তিক? 

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিক্রয় প্রতিনিধি জানান,প্রেসক্রিপশন ঔষুধ লিখার জন্য প্রতি মাসেই কলম, পেড, চাবির রিং থেকে শুরু করে টিভি-ফ্রিজসহ মোটা অংকের উপহার দিয়ে দিতে হয় ডাক্তারদের। তার বিনিময় প্রতিটি প্রেসক্রিপশনেই আমাদের ঔষধ লিখতে হবে। এছাড়াও এসব ব্যবস্থাপত্রের একটি কপি মেইল করে হেড অফিসেও পাঠাতে হচ্ছে।

নাজমা আক্তার নামের এক রোগী বলেন, আমি বেশি অসুস্থ্য হওয়ার পর বাধ্য হয়ে দ্বিতীয় তলায় মেডিকেল অফিসার কক্ষে আসি। সেখানে দেখি ওই চিকিৎসকের সঙ্গে কেউ বসে কেউ দাড়িয়ে খোশগল্পে মেতে রয়েছেন বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। ডাক্তার কোন কোম্পানির ঔষুধ রোগীর ব্যবস্থাপত্রে লিখবেন তা নিয়েও শুরু হয় তাদের মধ্যে তর্কবির্তক। দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর বাধ্য হয়ে কক্ষে ঢুকে চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নেই।

সরেজমিনে সোমবার দুপুরে গেলে দেখা যায়, হাসপাতালের সামনে এবং ভিতরের বিভিন্ন চিকিৎসকের কক্ষের সামনে ঔষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের ভিড় লেগেই আছে। নির্দিষ্ট সময়ের বাহিরে তারা ভিজিট করে রোগীদের চিকিৎসাসেবায় বেঘাত ঘটাচ্ছেন। দেখা গেছে, যখন রোগী টিকেট কেটে চিকিৎসা সেবার জন্য চিকিৎসকের কক্ষে যান তখন একাধিক প্রতিনিধি ওই কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে ভিড় জমিয়ে আছেন। আবার কেউ কেউ রোগীকে অপেক্ষায় রেখে তাদের ভিজিট সেরে নিচ্ছেন। এর বাহিরে প্রতিনিয়তই চোখে পড়ে এসব প্রতিনিধিদের নানান দৃশ্য।

সরকারি এ হাসপাতালটিতে যখন বিভিন্ন রোগীরা ডাক্তার দেখিয়ে টিকেট নিয়ে ফিরে যান তখন দেখা যায়, বিভিন্ন কোম্পানীর প্রতিনিধিরা ওইসব রোগীদের পথে দাঁড় করিয়ে তাদের হাতের টিকেট টেনে নিয়ে ওই টিকেটের ছবি তুলে রাখেন। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের মেডিকেল অফিসার চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন। প্রায়ই দেখা গেছে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ওই জরুরী বিভাগের চিকিৎসকের কক্ষের সামনে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকেন। তাদের কারণে রোগীরা সে ভিড়ে ঠেলে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। আবার ভেতরে প্রবেশ করলেও দেখাযায় সেখানে চলছে ভিজিট। এভাবেই প্রতিদিন সরকারি এ হাসপাতালটিতে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য বেড়ে চলছে। আর প্রতিনিয়ত দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোগীরা।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ঔষধ কোম্পানি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে তাদেরকে ভিজিট করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সময় লঙ্ঘন করে বিভিন্ন সময় রোগীদের হয়রানি করছে। আমি ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo