ডাক্তারের অভাবে পঞ্চগড়ের হাসপালগুলোতে মিলছেনা কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা

গৌরব কুমার দাস প্রকাশিত: ৬ জানুয়ারী , ২০২৫ ১৬:২৩ আপডেট: ৬ জানুয়ারী , ২০২৫ ১৬:২৩ পিএম
ডাক্তারের অভাবে পঞ্চগড়ের হাসপালগুলোতে মিলছেনা কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা
পঞ্চগড়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক সহ জনবলের অভাবে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।

পঞ্চগড়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক সহ জনবলের অভাবে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। কোন উপজেলায় ৩০ জন ডাক্তারের পদের বিপরীতে চিকিৎসা দিচ্ছেন ১-২জন আবার কোথাও মেডিকেল অফিসারের বদলে প্রেসক্রিপশন লিখছেন ডেন্টষ্ট, ফার্মাসিষ্ট এমনকি স্বাস্থ্য সহকারীরা। স্বজনরা রোগীদের নিতে বাধ্য হচ্ছেন ক্লিনিক বা আশপাশের জেলার হাসপাতালে। কর্তৃপক্ষ বলছে, চিকিৎসক সংকট নিরসনে চেষ্টা চলছে। তবে, তাদের দাবী, পদায়নের পরও আসতে চাইছেন না ডাক্তাররা। জেলার ৫টি সরকারী হাসপাতালে দেখা দিয়েছে চরম চিৎসক সংকট। পুরো জেলায় মোট চিকিৎসকের ১৪৭টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৩০ জন। যার মধ্যে পঞ্চগড় সদরে ৩৭ জনের বীপরীতে ১০ জন, বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩০ জনের বীপরীতে আছেন ৭জন, দেবীগঞ্জে ৩০ জনের বীপরীতে ৩ জন, আটোয়ারীতে ৩০ জনের বীপরীতে আছেন ২ জন এবং তেঁতুলিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ জনের বীপরীতে কর্মরত আছেন ৪জন, বাকি ৪জন প্রশিক্ষন ও ছুটি সংক্রান্ত নানা কারনে আছেন কর্মস্থলের বাইরে। শুধু চিকিৎসক নয়, এসব হাসপাতালে রয়েছে আয়া, ওয়ার্ডবয়, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও টেকনিশিয়ান সহ পর্যাপ্ত জনবলের অভাবও। প্রান্তীক জেলা পঞ্চগড়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক সহ পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে এভাবেই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। বর্তমান সময়ে যেখানে দুর্ঘটনা সহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর চাঁপ, সেখানে অনেক সময় জরুরী মুহুর্তে ডাক্তারের সংকটে মিলছেনা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা। উপায় না পেয়ে অনেকে ভর্তি হচ্ছেন বেসরকারি ক্লিনিকে আবার অনেককে ছুটতে হচ্ছে আশপাশের জেলায়। জরুরী প্রয়োজনেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করছেন রোগী ও স্বজনরা। বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে ঠিকমত দেখা মিলছেনা ভালো ডাক্তারদের। মেডিকেল অফিসার না থাকায় সেখানে বসে প্রেসক্রিপশন লিখছেন দু একজন সাব এসিস্ট্যান্ট অফিসার এমনকি ফার্মাসিষ্টরাও। অনেকে আবার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার পরামর্শ নিতে ছুটতে বাধ্য হচ্ছেন দন্ত চিকিৎসকের কাছেও। শুধু তাই নয়, উপায় না পেয়ে অনেক সময় ওয়ার্ডবয়, নার্সসহ অন্যান্যদের কাছেও নিতে হচ্ছে পরামর্শ ও সেবা। ডাক্তার না হয়েও ব্যাবস্থাপত্র লেখা নিয়মবহির্ভূত কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, রোগীর চাঁপ সামলাতে বাধ্য হয়ে উর্ধ্বত্মন অফিসারের নির্দেশ পালন করছেন তারা। রোগীদের অভিযোগ অন্তঃবিভাগে নিয়মিত পরিদর্শন সময়মতো হচ্ছেনা, আবার অনেকে করছেন চিকিৎসকদের খারাপ আচরনের অভিযোগও। তবে, কর্মরত চিকিৎসকরা বলছেন, সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে সেবা প্রদানের চেষ্টা করছেন তারা। তবে, অল্টারনেটিভ না থাকায় বাড়তি দ্বায়িত্ব পালন বা ওভার টাইম ডিউটি করতে হচ্ছে, আর একারনেই অনেক সময় ব্যাহত হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান। চিকিৎসক সহ জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে পঞ্চগড় সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ সংকট নিরসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে, আবেদনের প্রেক্ষিতে উপর মহল থেকে দেওয়া পদায়নের পরও অজ্ঞাত কারণে কর্মস্থলে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন ডাক্তাররা। বিভিন্ন অযুহাতে অনেকে নিচ্ছেন ছুটি আবার অনেকে করছেন পদায়ন বাতিলের তদবির। সীমান্তবর্তী এ জেলার জনসংখ্যার একটি বড় অংশ নিম্ন আয়ের শ্রমজীবি মানুষ। তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠীর মূল ভরসাস্থল এসব হাসপাতালে ডাক্তার সহ পর্যাপ্ত জনবল দ্রুত পদায়নের জোর দাবী স্থানীয়দের।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo