কুট্টেজান বিবির সংসারে আসেনি ঈদুল ফিতর শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর তিনি ও তার পরিবার পেলেন ইউপি চেয়ারম্যানের খাদ্য সহায়তা। মঙ্গলবার (১৬ই এপ্রিল) দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চর বংশী ইউপির চাঁন্দার খালে তাদের মাঝে ৩০ কেজি চাল, এক কেজি করে পেঁয়াজ, আলুসহ বেশ কয়েক প্রকারের খাদ্য সামগ্রী তুলে দেয়া হয়।
গত বৃহস্পতিবার (১১ই এপ্রিল) ঈদুল ফিতরের দিন তাদের করুণ অবস্থা চোখে পড়ে এই প্রতিবেদকের। তখন আক্ষেপ করে বুঁকে কষ্ট চেপে কুট্টেজান বিবি বলেন, পোলা তিনডা, আর পাঁচটা মাইয়্যা লইয়া কোনেমতে হেই বেবাক আগের তনে দিন চলতাছে। অবরোধের সমডায় আমাগো কেইওই নইত্তে নামে না। হুনছি যেরা টেয়া দেয় কোষ্টগার্ড হেগোরে নাও নামানের সুযোগ দেয়। আজইকা ঈদের দিন। চাঁন রাইতে চাঁনডা দেইক্কা নাতিডি নাচচে। কিছু কিন্না দিতে আমাগো সাধ্যে হয় নাই। হেমুই গেলে কয় এমুই দিবো এমুই আইলে কয় হেমুই। চাঁন্দার ঘাট আর মৌউজ্জারআড কোনানেই পাই না রে বাপ। হুনি সরকার সাহাইয্য দেয়, তবে আমাগো কেইওই পায় না। কেঁদে কেঁদে তিনি তখন আরো বলেছিলেন, ওগ্গা মাইয়্যা ওগ্গা পোলা এয়নো আবিয়াইত্তা। বিয়া দিলে নতুন নাও লাগবো। মেলা চিন্তারে বাপ। সাংবাদিকরা আহে ফুডো তুইল্লা লইয়া যায়। নাম লেইক্কা লইয়া যায়। কিছুই পাই না। মাঝে মইধ্যে কোষ্ট গার্ডের লগে মিল্লা আমাগোরে ধমকায়।
এবার চাল পাওয়ার পর কুট্টেজান বিবি (৬০). এই প্রতিদিনের প্রতিবেদকে বলেন, আল্লাহ আপনেরে বাঁচাক বাবা। আঁই খুশি হইছি অনেক। অনেক সাংবাদিক আইয়া ফুডো তুইল্লা লইয়া গেছে, নাম লেইক্কা লইয়া গেছে কহনো কিছুডি পাই নাই। এবার পাইলাম। জেরা জেরা আমগোরে খাওন দিছে আল্লাহ হে গোরে দমে হায়াতে বাঁচিয়া রাহুক।
কুট্টেজান বিবির স্বামী খোরশেদ আলম বলেন, আমগো রে চাওলসহ পিঁয়াজ, আলু, ডাইল উপহার দিছেন। মেলা খুশি হইছি বাপ। আল্লাহ আপনেগোরে মাইন্সের সেবা করার লিগ্গা কবুল করুক।
উত্তর চর বংশী ইউপির চেয়ারম্যান আবুল হোসেন হাওলাদার বলেন, উনারা ভাসমান জেলে পরিবার। আমার এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা নন। সরকারি চাল বিতরণ কার্যক্রম ঈদের আগেই শেষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইমরান খান মহোদয়ের ফোনকল পেয়েছি। তাদের অসহায়ত্বের সংবাদটি প্রকাশের পর আমিসহ প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয়। আমার পক্ষ থেকে আপাতত ত্রিশ কেজি চালসহ খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। আমি তাদের পরিবারের সুবিধার জন্য আসছে মৌসুমে দুটি কার্ড করে দেয়ার চেষ্টা করবো।
রায়পুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ এমদাদুল হক বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর আমি বিষয়টি নিয়ে অবগত হই। এবার আমরা ৪ হাজার ২শ ৭৫ জন জেলেকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। মোট জেলের সংখ্যা ৮ হাজারেরও বেশি। খোরশেদ আলম-কুট্টেজান বিবি দম্পতি স্থানীয় চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন। জেলেদের স্বার্থে মৎস্য বিভাগ সর্বদা তৎপর।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইমরান খান বলেন, ভাসমান জেলে পরিবারের দুঃখ, দুর্দশা নিয়ে সম্প্রতি সংবাদ প্রকাশ হয়। ইতোমধ্যে তাদেরকে ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। তাদের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।