এমপি মোঃ রশিদুজ্জামান এর হাত ধরে লবন পানির আগ্রাসন থেকে বাঁচতে চাই এলাকাবাসী

মোঃ রফিকুল ইসলাম খান প্রকাশিত: ২ এপ্রিল , ২০২৪ ০৬:৫২ আপডেট: ২ এপ্রিল , ২০২৪ ০৬:৫২ এএম
এমপি মোঃ রশিদুজ্জামান এর হাত ধরে  লবন পানির আগ্রাসন থেকে বাঁচতে চাই এলাকাবাসী
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন এই অঞ্চলের লোনাপানি বিরোধী আন্দোলনের পুরধা মোঃ রশীদুজ্জামান মোড়ল । তার এই বিজয়ে লবণ পানির আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে এলাকাবাসী ।

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন এই অঞ্চলের লোনাপানি বিরোধী আন্দোলনের পুরধা  মোঃ রশীদুজ্জামান মোড়ল । তার এই বিজয়ে  লবণ পানির আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে  এলাকাবাসী । 

লবণ পানির অগ্রাসন থেকে মুক্তি চায় এলাকাবাসী, ফিরতে চায় কৃষিতে। সুন্দরবন ঘেষা এই জনপদের  পাউবোর বেঁড়িবাধ ছিন্দ্র করে অবৈধ পাইপ দিয়ে এলাকায় কৃষি জমিতে লবণ পানি উত্তোলন করে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা চিংড়ী চাষ করায় দিন দিন কৃষি জমির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়া, জমি  ফসল  চাষের অনুপোযোগী হয়ে পড়া, ওয়াপদার ভিতরে পাইপ ডুবিয়ে   বেঁড়িবাঁধকে দুর্বল করে তুলার কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সে গুলি ভেঙে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়া, লবণ পানির প্রভাবে  জীব-বৈচিত্র  ধ্বংস হওয়ার কারণে এলাকাবসী লবণ পানির অগ্রাসন থেকে মুক্তি চায়। তাছাড়া  হাজার হাজার মানুষের বেকার সমস্যার সমাধানের জন্য  তারা লবণ পানি উত্তোলন বন্ধ করে কৃষি কাজে ফিরতে চান।
 
জানা যায়, উপকূলীয় এই অঞ্চলে ৮০ দশকে সোনার ফসল ফলত, গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ ছিল। কিন্তু এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তি  পাউবোর বেড়িবাঁধ  ছিদ্র করে পাইপ বসিয়ে অবৈধ ভাবে লবন পানি উত্তোলন করে ঘের ব্যবসার কারনে এই উপকূলের  মানুষ নব্বইয়ের দশকে কৃষি থেকে উৎখাত হতে থাকে, ভূমিহীন হয়ে যেতে থাকে প্রান্তিক কৃষক, বেকার হয়ে পড়ে হাজার হাজার  বর্গা চাষী ও কৃষি শ্রমিক। 

তাছাড়া  এলাকার পানি নিষ্কাশনের  যে সমস্ত সরকারি খাস খাল ছিল সে গুলি প্রভাবশালী ঘের মালিকরা দখল করে নেওয়ায়  বর্ষা মৌসুমে এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয় ।


লতা ইউনিয়নের কুমারেশ মন্ডল জানান,  ১০ বিঘার একটি চিংড়ী ঘেরে সারা বছর একজন কর্মচারী হলেও চলে। কিন্তু ১০ বিঘার কৃষি জমিতে এক বারে  ৩৩ জন শ্রমিক কাজ করতে পারে। বর্ষাকালে জমি চাষ, ধান লাগানো, ঘাস বাছা, ধান কাটা ও মাড়াই করার জন্য তিন জন মানুষের ৩ মাস ভালোমত কাজ হয়। চিংড়ী ঘেরে ৩৩ জন লোকের কাজ একজন মানুষ করছে। এর ফলে ৩২ জন মানুষকে কাজের জন্য পেশা পরিবর্তন করে অন্য এলাকায় কাজের জন্য যেতে হচ্ছে। কৃষি কাজ ছেড়ে় মানুষ এখন দূর দূরান্তের ইটভাটায়, মাটির কাজ, ভ্যান চালানোসহ বিভিন্ন কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। বছরে নয় মাস পুরুষদের বাইরে থাকতে হচ্ছে। ফলে অভিভাবকশূন্য পরিবারগুলোর সব দায়িত্ব পড়ছে নারীদের উপর। কাজের জন্য বাইরে থাকা পুরুষেরা সময় মত সাংসারিক খরচ বাড়িতে পাঠাতে পারছে না। ফলে নারীদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। 
কপিলমুনি  ইউনিয়নের কৃষক রবি সরদার  বলেন, লবণ ফসলের জন্য ক্ষতিকর। লবণের সঙ্গে যুদ্ধ করেই টিকে আছি। আমাদের অন্য কোথাও যাওয়ার সামর্থ্য নেই। লবণ পানি বন্ধ হলে সোনার ফসল ফলতো। এলাকা লবণ পানি মুক্ত হলে সকলে জীবন জিবিকার ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। 

কপিলমুনি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ইকবাল হোসেন খোকন  বলেন,লবণের আগ্রাসন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য স্থানীয় মানুষেরা আবার তাদের পূর্ব পুরুষের পেশা তথা কৃষি কাজের দিকে ঝুঁকে পড়তে চান। লবণ পানির ঘের শুধুমাত্র কৃষি পেশাকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দেয়নি বরং জীব বৈচিত্র্যর জন্য হুমকি স্বরূপ।  স্থানীয় কৃষক সামাদ শেখ  বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে কৃষি জমিতে লবণ পানি উঠিয়ে চিংড়ী় চাষ করার ফলে জমির মাটিতে লবণাক্ততা বেড়েছে। জমির লবণাক্ততা কাটতে একটু সময় লাগবে। একটি বর্ষা মৌসুম গেলে জমির মাটির উপরের অংশ ধুয়ে আস্তে আস্তে জমির লবণাক্ততা কেটে যাবে।”তারপর ফসল ভাল ফসল হবে। লবণ পানির  আগ্রাসন থেকে বাঁচতে পারবো। 

নাম না প্রকাশ করার স্বার্থে একাধিক ব্যক্তি জানায়, উপজেলার প্রভাবশালীরা ঘের ব্যবসার সাথে জড়িত।তারা তাদের  নিজ স্বার্থের কারণে  পানি উন্নয়ন বোর্ডের  বেঁড়িবাধের রাস্তা কেটে প্লাষ্টিকের পাইপ বসিয় লবণ পানি উত্তোলন করে  ঘের ব্যবসা চালু রেখেছে। তাই লবণ পানি বন্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ, উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিং এ কয়েক বার রেজুলেশন হলেও লবণ পানি বন্ধ হচ্ছে না। 

এব্যাপারে  খুলনা-৬ আসননের  সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান বলেন, লোনাপানি এই এলাকাকে গ্রাস করে ফেলেছে । আমাদের গোয়ালভরা গোরু ছিলো, গোলা  ভরা ধান ছিলো, মাছে ভরা পুকুর ছিলো, আজ কিছুই নাই- ঢাকায় গেলে এখন কয়রা পাইকগাছার রিক্সাওয়ালা পাই, অনেক কষ্ট হয়। তিনি বলেন,  দীর্ঘ দিন লবণ পানি বিরোধী আন্দোলনের সাথে সংযুক্ত আছি । আমি সংসদের প্রথম অধিবেশনে  প্রথম বক্তব্যে লোনাপানির বিরুদ্ধে আমার অবস্থান প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছি । আমি লোনাপানি বিরোধী আন্দোলনের কারণে  অনেকবার জেল ও খেটেছি । এলাকার 
মিষ্টি পানির আধারগুলোতেও লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে যাওয়া বিষয়টি ভয়াবহ বার্তা বহন করে । লবণ ফসলের ও পরিবেশের  জন্য মারাত্মক  ক্ষতিকর। সমস্যা সমাধানে  এখনই সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ না করলে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেবে। বাধাগ্রস্ত হবে উপকূল কেন্দ্রিক  সরকারের সকল এসডিজি অর্জন।এলাকার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে  এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার। এজন্য সকলের সহযোগিতায়   লবণ পানি মুক্ত করে মানুষের সুন্দর বসবাসের জন্য উপযোগী করে তুলা হবে ইনশাআল্লাহ ।

সংসদ সদস্যের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে, ওয়াপদা সহ বিভিন্ন বেড়িবাঁধের  অবৈধ পাইপ অপসারন মাধ্যমে যাতে  লবন পানি উত্তোলন বন্ধ হয় সেই  আশা করছে এলাকাবাসি। 

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo