বরগুনার তালতলীতে নামসর্বস্ব এতিমখানার নামে প্রায় ২৫ লাখ টাকা বিল দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সমাজ সেবা অফিসার তাহসিনের বিরুদ্ধে। উপজেলা ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট মনিটরিং কমিটির রেজুলেশন ছাড়াই এ চেক দেওয়ায় সহযোগিতা করেছেন ঐ দপ্তরের অফিস সহকারী হাফিজা আক্তার।
জানা যায়, এতিমখানার এতিম শিক্ষার্থীদের জন্য জনপ্রতি মাসে দুই হাজার টাকা করে সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই বরাদ্দের টাকার মধ্যে খাদ্য বাবদ ১ হাজার ৬০০, পোশাক বাবদ ২০০, ওষুধ ও অন্যান্য বাবদ ২০০ টাকা। এ উপজেলার ১২টি এতিমখানার জন্য ১ম কিস্তিতে ৩১ লাখ ৮ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের জন্য এ উপজেলার এতিমখানার কর্তৃপক্ষ এতিমদের নামের তালিকা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করে। এতিম শিশুদের এ তালিকা উপজেলা ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট মনিটরিং কমিটি যাচাই-বাছাই করে রেজুলেশনের মাধ্যমে অনুমোদনের পরে বিল দেওয়ার কথা। উপজেলা ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত না করে বা কোনো ধরনের রেজুলেশন না করেই গত ৩০ মে সমাজসেবা অফিসার মো. তাহসিন উপজেলার ৭টি নাম সর্বস্ব এতিমখানার ২০৭ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ২৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকার বরাদ্দের চেক দেওয়া হয়। সমাজসেবা অফিসার মো. তাহসিনের যোগসাজেসে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সহযোগিতায় এই নাম সর্বস্ব এতিমখানার টাকা আত্মসাধ করেছেন।
এদিকে তালতলী ইসলামিয়া শিশু সদনে কোনো এতিম না থাকার কারণে বিল বন্ধ ও শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়। সেই প্রতিষ্ঠানের এতিমদের নামেও বিলের চেক দেয় এই সমাজসেবা অফিসার।
এই নাম সর্বস্ব এতিমখানার বিল দিতে সহযোগিতা করেছেন ঐ দপ্তরের বিতর্কিত অফিস সহকারী হাফিজা আক্তার। হাফিজা আক্তারের অনিয়ম ও দুর্নিতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকার নিউজ হলে প্রায় ১০ মাস আগে এ উপজেলা থেকে বদলী হলেও গোপনে তদবির করে ফের এ উপজেলায় এসেই অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন।
এর মধ্যে তালতলী ইসলামিয়া শিশু সদন এতিমখানার ৪০ জন এতিম শিক্ষার্থীর জন্য ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা,আগাপাড়া এন্তেজিয় এতিমখানার ৩৫ জন এতিম শিক্ষার্থীর জন্য ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা,হাজী বেলায়েত আলী ফরাজী এতিমখানায় ২০ জন্য এতিম শিক্ষার্থীর জন্য ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা,তালতলী ছোটভাইজোড়া সালেহিয়া শিশু সদনে ৩০ জন এতিম শিক্ষার্থীর জন্য ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, মোহাম্মদিয়া দারুচ্ছুন্না শিশু সদনে ৩২ জন এতিম শিক্ষার্থীর জন্য ৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, খাদিজাতুল কোমরা শিশু সদনে ২৮ জন এতিম শিক্ষার্থীর ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ও আলহাজ আবতাব উদ্দিন কমপ্লেক্স শিশু সদনে ২২ জন এতিম শিক্ষার্থীর জন্য ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে আবতাব উদ্দিন ও মোহাম্মাদিয়া শিশু সদনে হাতেগোনা কয়েকজন এতিম থাকলেও বাকিগুলোতে কোনো এতিম নেই বলে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়। এই পুরো টাকাই উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ও ঐ সকল প্রতিষ্ঠান প্রধানরা ভাগবাটোয়ারা করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এবিষয়ে বির্তকিত অফিস সহকারী হাফিজা আক্তার বলেন, আমাকে নির্দেশ দিয়েছে এতিমখানার বিল তৈরি করার জন্য। আমি তাদের বিল তৈরি করে দিছি। এখানে আমার কোন দোষ নাই। আমি যা করেছি সমাজসেবা অফিসারের নির্দেশেই করেছি।
উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মো. তাহসিন বলেন, বিল নিয়ে কিছুটা মিসগাইড করা হয়েছে। আমি রেজুলেশনের বিষয় কিছু জানতান না। তার কারণ হলো আমি নতুন। তবে আমার অফিস সহকারী হাফিজা আক্তার বলেছে রেজুলেশন লাগে না। তাই আমি বিল দিয়ে দিছি। হাফিজা আক্তারই এই বিলের সহযোগিতা করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুপমা বলেন,সমাজ সেবা অফিসার তাহসিন নাম সর্বস্ব এতিমখানার চেক দেওয়াতে তিনি আর্থিক অনিয়ম ও সরকারি অর্থ তছরুপ করেছেন। আমি উপজেলা ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট মনিটরিং কমিটির সভাপতি। আমাকে কোনো ধরণের অবগতি না করেই তিনি এই চেক ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বিধি বর্হিভূত ভাবে সরকারি অর্থ উত্তোলন করে তিনি যোগসাজসের মাধ্যমে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করায় তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।
উপপরিচালক মো: সহিদুল ইসলাম বলেন,আমি ঐ অফিসারকে বলেছি তুমি যেহেুতু নতুন যেহেতু তুমি ইউএনও’র সাথে আলোচনা করে বিল দিবে। কিন্তু তা না করে তিনি এই নাম সর্বস্ব এতিমখানায় বিল দিয়ে দিয়েছেন। এই বিল দেওয়ার পেছনে সহযোগিতা করেছে অফিস সহকারী হাফিজা। এই হাফিজার অনিয়মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ হওয়ার পরে গত ১০ মাস আগে বদলী হয়েছে কিন্তু কিভাবে ফের এখানে আসলো তা আমি জানি না। বদলীর অডার পাওয়ার পরে উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন হাফিজা যোগদান করেছে। যোগদানের ব্যাপারে আগে থেকে আমি কিছু জানি না। তিনি আরও বলেন, ব্যবস্থা কি নিবো , আমার সহকর্মী ও কর্মচারীদের কাছে অসহায়।