জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ভরা মৌসুমেও মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না। নদীপাড়ের আড়তগুলোতে নেই চিরচেনা হাঁকডাক, নেই মাছ বাছাই ও লেনদেনের চিত্র। দিনভর ট্রলার নিয়ে নদীতে ঘুরেও খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা। এতে চরম হতাশা ও আর্থিক অনটনে দিন কাটছে চরফ্যাশনের উপকূলীয় এলাকার হাজারো পরিবারে।চরফ্যাশন উপজেলার নতুন সুলিজ ঘাট, সাম্রাজ মাছঘাটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন দলবদ্ধভাবে নদীতে যাচ্ছেন জেলেরা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে না। একজন জেলে জানান, তিন দিন আগে ৮০ হাজার টাকা খরচ করে নদীতে গিয়ে মাছ বিক্রি করে পেয়েছেন মাত্র ৫০ হাজার টাকা। এরপর আর নদীতে ইলিশ না পাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন।সাম্রাজ মাছঘাটের বরফ মিল ম্যানেজার কবির হোসেন বলেন, “প্রতিদিন ট্রলার যাচ্ছে নদীতে, কিন্তু জেলেরা হতাশ হয়ে ফিরে আসছে। নদীতে মাছ নেই, ব্যবসাও নেই।”জেলেদের ভাষ্যমতে, আগে যেসব মৌসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়া যেত, এখন সেই দৃশ্য কেবল স্মৃতিতে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্রলারের জ্বালানি, বরফসহ অন্যান্য খরচ মেটানোই দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। অনেকে এনজিও বা মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে আরও ঋণগ্রস্ত হচ্ছেন।চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, “নদীতে অতিরিক্ত নৌযান ও সময় অসময়ে মাছ ধরার কারণে উৎপাদনে প্রভাব পড়ছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও উজানে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় ইলিশের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে।”তিনি আরও জানান, “প্রতিবছরই নির্ধারিত সময় মাছ ধরা বন্ধ রেখে ইলিশ সংরক্ষণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। জেলেদের সহায়তা হিসেবে চাল ও গবাদিপশু দেওয়া হয়। পাশাপাশি অবৈধভাবে চলা নৌযানগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনার কাজ চলছে।”উল্লেখ্য, আষাঢ় ও শ্রাবণ—এই দুই মাস উপকূলীয় নদীগুলোতে ইলিশের ভরা মৌসুম হিসেবে ধরা হলেও এবার ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। ফলে জেলে ও আড়তদার—উভয়ই চরম সংকটে পড়েছেন, যা স্থানীয় অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলছে।