শনিবার (৩১ মে) সকাল ৯ টায় কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের পুরাতন ষ্টেডিয়ামে জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে এক বিশাল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এ কথা বলেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক মোঃ রমজান আলীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা বিগত ১৭ বছর আইয়ামে জাহিলিয়ার যুগে বসবাস করেছি। হত্যা, নির্যাতন, জুলুম কি না করেছে বিগত আওয়ামী লীগের সরকার। দূর্নীতি করে টাকা পাচার করা, গুম, খুনসহ নিরপরাধ মানুষ গুলোকে মিথ্যা অপরাধী সাজিয়ে ফাঁসি দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন এ টি এম আজহারুল ইসলামের বিচার একটি সুবিচার হয়েছে। যারা অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে, ওই দল ও তাদের সঙ্গে যারা জড়িত সকলের বিচার হওয়া উচিৎ। আমরা সরকারকে বলবো আগে বিচার হবে, এর পর সংস্কার এর পরে নির্বাচন হতে হবে। যারা বিচার চায় না, তারা শুধু তারাতাড়ি নির্বাচন চায়, সংস্কার চায় না। আপনারা বলেন আগের মতো যদি নির্বাচন হয় এই নির্বাচনের দরকার আছে? ওইগুলো তো নির্বাচনই হয়নি। ২০১৪ সালে হলো বিনা ভোটের নির্বাচন, ২০১৮ দিনের ভোট রাতে হলো এবং ২০২৪ সালে নিজেরা নিজেরা ভোট দিয়ে ডামি নির্বাচন করেছে। এই সময় তিনি দাবী করেন বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচন চায়, তবে যেনতেন নির্বাচন চায় না। তাই অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের ৩টি দাবী। বিচার, সংস্কার তারপর জাতীয় নির্বাচন।
দেশে লুটপাট করছে কারা, জামায়াতে ইসলামী কোন লুটপাট, দখলদারীর সাথে জড়িত নেই। এ কারণে আল্লাহর আইন মেনে আমরা দেশ পরিচালনা করতে চাই।
ইনশাআল্লাহ দেশে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জামায়াত কাজ করে যাবে। পরে তিনি কিশোরগঞ্জের ছয়টি আসনের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন।
উক্ত কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার সেক্রেটারি এ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ।
তিনি বলেন - যারা আজকে বাংলাদেশকে ভাসিয়ে দিতে চান। আন্দোলনের হুমকি দেন। দেশকে অচল করে দেওয়ার কথা বলছেন। সাড়ে ১৫ বছরে তারা এই দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে থেকে একটা বালুর ট্রাক সরোনোর ক্ষমতা দেখাতে পারেন নাই। আমাদের তরুণ যুব সমাজ একটি স্বপ্ন দেখেছিলো অধিপত্যবাদ মূক্ত, ফ্যাসিবাদ মূক্ত সুন্দর রাষ্ট্র গড়ে ওঠবে। ১৬৫১জন ছাত্র ছাত্রী ও জনতার রক্তের বিনিময়ে। ৩০ হাজার ছাত্র, যুবক, শিশু-কিশোর, তরুণ ও বৃদ্ধ’র আহত ও পূঙ্গত্ব বরণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আজকে এই পর্যায়ে এসেছে। কোনো ক্রেডিট যদি দিতে হয় ক্রেডিট হলো শুধু তাদের। আমরা তোমাদের সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি এবং তোমাদের স্যালুট জানাই।
তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের আমলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে এ দেশের বিচার ব্যবস্থাকে এবং নির্বাচন ব্যবস্থাকে একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রশাসন ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করেছে। অর্থনৈতিকভাবে দেশকে দেউলিয়া করেছে। বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করে দেশকে দেউলিয়া করেছে। কেউ ভোট দিতে পারতো না। ভোট কেন্দ্র যাওয়ার আগেই ভোট দেওয়া শেষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল এক শিক্ষক একটি গল্প বলে ছিলেন-দশ বছর আগে এক লোকের স্ত্রী মারা গেছে। কিন্তু যতোবার ভোট হয় ততবার ভোটার লিস্টে তার নাম দেখে ঠিক চিহ্ন দেয়া, তিনি ভোট দিয়ে চলে গেছেন। ২০২৪ সালে ভোটের সময় লাঠি হাতে নিয়ে তিনি কেন্দ্রর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। লোকেরা জিজ্ঞাস করে আপিন দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? ভোট দেয়ার জন্যতো আমরাই যতেষ্ট, তিনি বলেন আমিতো ভোট দিতে আসি নাই। আমি আসছি আমার জীবনসঙ্গীনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। কারণ সে প্রত্যেক বছর ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে আসে। আজকে আমি আসছি তার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য। এই ছিলো বাংলাদেশের ভোটের চিত্র। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে গতপরশু দিন এই দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ ধিক্কার দিয়েছে। তিনজন আপিল বিভাগের বিচারক তারা বলেছেন আপনারা লির্ভারটি (আপনার স্বাধীন) আপনা কি করছেন। জাতি আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এই যে নির্বাচন ব্যবস্থার কবর রচনা করা হলো এ নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ব্যতিত বাংলাদেশে যদি আবার নির্বাচন হয় তাহলে সকল মৃত ব্যক্তিরা ভোট দিতে আসবে, জীবিত ব্যক্তিরা ভোট দিতে পারবে না। এই জন্যই আমরা বলেছি নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে।
আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের পরিচালক ড. মাওলানা মোঃ ছামিউল হক ফারুকী, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয়
সভাপতি ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড.শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সাবেক জেলা আমীর অধ্যক্ষ মাওঃ তৈয়বুজ্জামান, অধ্যাপক মোঃ আবদুস সালাম, নেত্রকোনা জেলা আমীর সাদেকুর রহমান হারিছ, জামালপুর জেলা আমীর মাওলানা আবদুস সাত্তার, শেরপুর জেলা আমীর মাওলানা হাফিজুর রহমান, কিশোরগঞ্জ জেলা নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মোঃ আজিজুল হক, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা নাজমুল ইসলাম, ময়মনসিংহ মহানগর সেক্রেটারি অধ্যাপক শহীদুল্লাহ কায়সার, নারায়ণগঞ্জ জেলা নায়েবে আমির আব্দুল কাইয়ুম, কিশোরগঞ্জ জেলা সহকারী সেক্রেটারি সাংবাদিক শামছুল আলম সেলিম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোঃ আজিজুল হক, সাবেক সভাপতি সভাপতি ফাইজুল হক উজ্জ্বল,কটিয়াদী উপজেলা আমির কটিয়াদী উপজেলা আমির অধ্যাপক মোজাম্মেল হক জোয়ারদার, বাজিতপুর উপজেলা আমির ডাক্তার ইয়াকুব আলী,নিকলী উপজেলা আমির মোঃ আবুল হোসাইন, ভৈরব উপজেলা আমির মাওলানা কবির হোসেন, ইটনা উপজেলা আমির মাওলানা আবুল হোসাইন, তাড়াইল উপজেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদদের পিতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক ইকরাম হোসেন, বাবু কৃষ্ণ চন্দ্র বসাক, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি খালেদ হাসান জুম্মন, সদর জামায়াতে ইসলামী আমীর কারী নজরুল ইসলাম, জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হাসান আল মামুনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ-১ (সদর- হোসেনপুর) আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ মোসাদ্দেক ভূঁইয়া, কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও কটিয়াদী উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা শফিকুল ইসলাম মোড়ল, কিশোরগঞ্জ ৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের জামায়াত প্রার্থী কর্ণেল অবঃ ডাঃ জিহাদ খান, কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের প্রার্থী এডভোকেট শেখ মো. রোকন রেজা, কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর- নিকলী) আসনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা আমীর অধ্যাপক মো. রমজান আলী, কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব- কুলিয়ারচর) আসনে সাবেক ছাত্রনেতা ও ভৈরব উপজেলা আমীর মাওলানা মো. কবির হোসাইন।
কর্মী সম্মেলন উপলক্ষে সকাল থেকে জেলার ১৩টি উপজেলার ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।কিশোরগঞ্জের সারা শহর মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়।