ছাত্রনেতা শরীফ ওসমান হাদী এবং ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাক শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে পটুয়াখালীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় পটুয়াখালী প্রেসক্লাব চত্বরে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ, পটুয়াখালী জেলা শাখার যৌথ আয়োজনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা চলতি ডিসেম্বর মাসে সারাদেশে ঘটে যাওয়া একাধিক সহিংস ও মর্মান্তিক ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে সরকারের প্রতি দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
সমাবেশে বক্তারা ঢাকায় ছাত্রনেতা শরীফ ওসমান হাদীর গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনা এবং ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে পোশাক শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, এসব ঘটনা শুধু সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও সহিংসতার ভয়াবহ চিত্রই নয়, বরং একটি গভীর রাষ্ট্রীয় সংকটেরও প্রতিফলন। ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে সংঘটিত কোনো সহিংসতা সভ্য ও গণতান্ত্রিক সমাজে কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। সকল নাগরিকের জীবন, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব।
বক্তারা আরও বলেন, এই ধরনের ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসী ও উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ দেশের সকল নাগরিকের জন্য সমান অধিকার, নিরাপত্তা এবং মর্যাদা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার জোর দাবি জানান।
সমাবেশে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ধর্মীয় সহিংসতা, গণহত্যার অভিযোগ এবং গণমাধ্যমের ওপর হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। একইসঙ্গে তারা এসব ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
মানববন্ধন শেষে বক্তারা কয়েকটি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—সকল সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী যেকোনো ধরনের অপপ্রচার ও উস্কানি বন্ধ করা এবং ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমানাধিকারের ভিত্তিতে সংবিধানের মৌলিক চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অতুল চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার দাস, সহ-সভাপতি তপন কর্মকার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি কাজল বরণ দাস, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সঞ্জয় কুমার খাসকেলসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।