হোটেল জাবিরে অগ্নিকাণ্ডে মর্গে লাশ আর লাশ

এসএম মিরাজুল কবীর টিটো প্রকাশিত: ৭ আগস্ট , ২০২৪ ১৭:৫৪ আপডেট: ৭ আগস্ট , ২০২৪ ১৭:৫৪ পিএম
হোটেল জাবিরে অগ্নিকাণ্ডে মর্গে লাশ আর লাশ
তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের রেকর্ড খাতায় নারীসহ ৮টি মৃতদেহ রেকর্ড করা হয়েছে। তারা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালের আগুনে মারা গেছেন বলে জানা গেছে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএরমও) জানিয়েছেন, অগ্নিকান্ডে শতাধিক মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হতাহত মানুষের স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে লাশ আর লাশ। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১১ টা ৯ মিনিটে দায়িত্বরত ডোম অরুন মর্গে ২১ মৃতদেহ থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন।

তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের রেকর্ড খাতায় নারীসহ ৮টি মৃতদেহ রেকর্ড করা হয়েছে। তারা  হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালের আগুনে মারা গেছেন বলে জানা গেছে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএরমও) জানিয়েছেন, অগ্নিকান্ডে শতাধিক মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হতাহত মানুষের স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।

এদিকে, রাত পৌনে ১২ টা পর্যন্ত নিহতদের ৭ জনের পরিচয় মিলেছে। তারা হলেন, যশোর শহরের নাজির শংকরপুর এলাকার মোফাজ্জেল হোসেন সরদারের ছেলে ওসমান গনি (৭০), নতুন উপশহর এলাকার সোহান হোসেনের স্ত্রী জনি বেগম (২২), শাখারিগাতি গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে সিফাত হোসেন (২৩), ঘুরুলিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে সোহানুর রহমান সোহানের ছেলে (৩০),  বারান্দীপাড়া মোল্যাপাড়ার আব্দুল খালেকের ছেলে হাফিজ উদ্দিন (৩৫), বালিয়ার ভেকুটিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে রোকন রাকিব (২০) নতুন উপশহর ডি ব্লকের বাসিন্দা পুলিশের এস আই সৈয়দ শাহিন সরদারের ছেলে সৈয়দ মিথুন মোর্শেদ পিয়াস (২৫)।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোমবার বিকেলে যশোর শহরের চিত্রা মোড়ের হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে  আন্দোলনকারীরা আগুন দেয়। হোটেলটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। হেলিকপ্টারে করে উদ্ধারকারী দল ১৪ তলার হোটেলের ছাদ থেকে কয়েকজনকে উদ্ধার করে। আরো কয়েকজনকে ১৪ তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে উদ্ধারের আকুতি জানাতে থাকে। উদ্ধারকারীরা হতাহতদের একে একে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনা হয়।  

যশোর শহরের চিত্রা মোড়ের হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। ভিতরে আটকে থাকা অনেকেই বাঁচার আকুতি জানিয়ে চিৎকার করতে থাকেন। ফায়ার সার্ভিসের সাথে স্থানীয়রা উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেন।  আগুনে হোটেলের নিচতলা থেকে ১২, ১৩ ও ১৪ তলা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রাত ১১ টা পর্যন্ত হোটেলের কক্ষ বিভিন্ন কক্ষ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিলো।পুলিশের এস আই সৈয়দ শাহীন সরদার জানান, তার ছেলে মিথুন মোর্শেদ পিয়াসসহ ৩ বন্ধু হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে খাবার খেতে যান।

সেখানে আন্দোলনকারীরা হঠাৎ করে ঢুকে পড়ে আগুন দেয়। আগুনে পুড়ে তার ছেলেসহ ৩ বন্ধু মারা গেছে। কাঁন্নায় ভেঙে পড়েন এস আই শাহিন।অগ্নিকান্ডে আহত একজন জানান, হোটেলের বিভিন্ন কক্ষে অনেক মানুষের মৃতদেহ তিনি দেখেছেন। নির্মম মৃত্যুর দৃশ্য কোনভাবেই ভুলতে পারছেন না।একটি সূত্র জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে অনেকে হোটেলের বোর্ডার ও ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে থাকা লোকজন। ঘটনার সময় বোর্ডাররা কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন।

আবার কেউ কেউ ছিলেন বিশ্রামে ছিলেন। দরজা ভেঙে উদ্ধারকারীরা দেখতে পান অনেকেই ঘুমন্ত আগুনে পুড়ে বিছানায় মারা গেছেন।রাতে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ভয়াবহ আগুনে প্রাণ হারানো মানুষের স্বজনদের আহজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। কেউ স্বজনদের ফোন ধরে গুমরে গুমরে কাঁদছিলেন। হাসপাতাল ও মর্গের আশেপাশে শ’ শ’ মানুষ ছুটে আসেন। কাঁন্না ও আহজারিতে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।

এদিকে অনেকেই স্বজনদের খোঁজ করছিলেন। কেউ আবার নিহত স্বজনের লাশ গ্রহণের প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত ছিলেন। তবে আগুনে মোট কতজনের মৃত্যু হয়েছে তা রাত ১২ টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. পার্থ প্রতীম চক্রবর্ত্তী জানান, নিহতদের কেউ আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। আবার কেউ আগুনের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।

তিনি আরও জানান, আগুনে শতাধিক মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। এরমধ্যে গুরুতর কয়েকজনকে অন্যত্র রেফার্ড করা হয়।এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের সমন্বয়ক রাশেদ খান সংবাদ সম্মেলন করে আগুনে পুড়ে হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এসময় তিনি বলেন বিজয় মিছিল নিয়ে আমরা চিত্রা মোড় অতিক্রম করার সময় কিছু দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে আগুন দেয়। অগ্নিকান্ডের সাথে কোন ছাত্র জড়িত নন। নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান রাশেদ খান।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo