তত্কালীন ভবনগুলোর মধ্যে একমাত্র বারো কোণ বিশিষ্ট কাঠামো। বারোটি কোণ থাকায় ওপর থেকে দেখলে এটিকে তারার মতো দেখায়। দেউলটির উচ্চতা ৮০ ফুট। স্থাপনাটির মূল গঠন উপাদান চুন-সুরকির মিশ্রণ।
ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার মথুরাপুর গ্রামে এর অবস্থান। এই প্রত্নতাত্ত্বিক অবকাঠামোটি আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীতে তৈরি করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়; তবে কারো কারো অনুমান এটি সপ্তদশ শতকের স্থাপনা। কথিত আছে, সংগ্রাম সিং নামে বাংলার এক সেনাপতি এটি নির্মাণ করেছিলেন। খ্রিষ্টপূর্ব ১৬৩৬ সালে ভূষণার বিখ্যাত জমিদার সত্রাজিতের মৃত্যুর পর সংগ্রাম সিংকে এলাকার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং তত্কালীন শাসকের ছত্রছায়ায় তিনি বেশ ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন। এলাকার রীতি অনুসারে তিনি কাপাস্তি গ্রামের এক বৈদ্য পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করে মথুরাপুরে বসবাস শুরু করেন| অন্য এক সূত্রমতে, সম্রাট আকবরের বিখ্যাত সেনাপতি মানসিং রাজা প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের স্মারক হিসেবে এই দেউল নির্মাণ করেছিলেন| সে অনুযায়ী, মথুরাপুর দেউল একটি বিজয়স্ত। তবে সূত্রটির সত্যতা নিরুপণ সম্ভব হয়নি।
দেউলটি বারো কোণ বিশিষ্ট এবং মাটি থেকে প্রায় ২১.২ মিটার উঁচু; যার ভেতর একটি ছোট কক্ষ রয়েছে। এর গঠন প্রকৃতি অনুসারে একে মন্দির বললে ভুল হবে না। ষোড়শ শতাব্দীর স্থাপনাগুলোর মধ্যে মথুরাপুর দেউল সম্ভবত একমাত্র রেখা প্রকৃতির দেউল। দেউলটিতে দুইটি প্রবেশপথ আছে—একটি দক্ষিণমুখী এবং অন্যটি পশ্চিমমুখী।
এটি তত্কালীন ভবনগুলোর মধ্যে একমাত্র বারো কোণ বিশিষ্ট কাঠামো। বারোটি কোণ থাকায় ওপর থেকে দেখলে এটিকে তারার মতো দেখায়। দেউলটির উচ্চতা ৮০ ফুট। স্থাপনাটির মূল গঠন উপাদান চুন-সুরকির মিশ্রণ। দেউলের বাইরের দেয়ালটি লম্বালম্বিভাবে সজ্জিত, যা আলোছায়ার সংমিশ্রণে এক দৃষ্টিনন্দন অনুভূতির সৃষ্টি করে। পুরো স্থাপনা জুড়ে টেরাকোটার জ্যামিতিক ও বাহারি চিত্রাঙ্কন রয়েছে। রামায়ণ কৃষ্ণলীলার মতো হিন্দু পৌরাণিক কাহিনির চিত্র, গায়ক, নৃত্যকলা এবং যুদ্ধচিত্রও এই দেউলের গায়ে খচিত। তবে দেউলটির কোথাও কোনো লেখা পাওয়া যায়নি। বাংলার ইতিহাসে এর নির্মাণশৈলী অনন্য। এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সুরক্ষিত সম্পদ।