পুলিশ জনগণের পাশে ছিল - আছে - থাকবে : পুলিশ সুপার ফরিদপুর

এ এস এম জুনায়েদ প্রকাশিত: ১৩ আগস্ট , ২০২৪ ১৫:৪৬ আপডেট: ১৩ আগস্ট , ২০২৪ ১৫:৪৬ পিএম
পুলিশ জনগণের পাশে ছিল - আছে - থাকবে : পুলিশ সুপার ফরিদপুর
৫ ই আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের মাধ্যমে ছাত্র জনতার বিজয় হয়। ছাত্র জনতার আন্দোলনকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য এক শ্রেণীর দুষ্কৃতিকারীরা সুযোগ এর সদ্ব্যবহার করে। দেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ধ্বংসলীলা চালায় তারা। প্রান হারায় অসংখ্য মানুষ, ক্ষতিগ্রস্ত হয় অগনিত সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পদ।

সম্প্রতি দেশের কোটা বিরোধী বা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন জোরদার হয়ে এক পর্যায়ে এক দফা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়।আন্দোলনকে প্রতিরোধ করার সমস্ত রকম চেষ্টা করে সরকার। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। সহিংসতায় প্রাণ হারায় কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী, সাধারণ মানুষ এবং পুলিশ সদস্য। খন্ড খন্ড ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় দেশ।

৫ ই আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের মাধ্যমে ছাত্র জনতার বিজয় হয়। ছাত্র জনতার আন্দোলনকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য এক শ্রেণীর দুষ্কৃতিকারীরা সুযোগ এর সদ্ব্যবহার করে। দেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ধ্বংসলীলা চালায় তারা।  প্রান হারায় অসংখ্য মানুষ, ক্ষতিগ্রস্ত হয় অগনিত সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পদ।

দুষ্কৃতিকারীদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মস্থল খ্যাত থানা গুলোও। লুটপাট ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ চালানো হয় সেখানে। নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে পুলিশ সদস্যরা। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থে কর্মস্থল ত্যাগ করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায় পুলিশ সদস্যরা।বস্তুত পুলিশের ধারাবাহিক বিতর্কিত কর্মকান্ডে অনেক আগেই জনগণের আস্থার জায়গা হারিয়ে ফেলেছিলো পুলিশ।সর্বোপরি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে পুলিশের ভূমিকা সাধারণ মানুষের মনকে বিষিয়ে তোলে।

হয়তো তাই এই চরম বিপদের মুহূর্তেও সাহায্যের হাত বাড়াইনি কেউ, পাশে দাঁড়ায়নি সাধারণ মানুষ। থানাগুলো পুলিশ শূন্য হয়ে যায়। কিছু কিছু থানা পরিনত হয় ধ্বংস স্তূপে। চরম অবনতি হয় আইনশৃঙ্খলার। মানুষের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ডাকাতি, ছিনতাই সহ নানান রকম দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে চারিদিকে।দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে আবারো ঘুরে দাঁড়ায় ছাত্র জনতা। সর্বসাধারণের জানমাল রক্ষার্থে পাড়া মহল্লায় দল বেঁধে পাহারা দেয়া শুরু করে তারা।

রাস্তার মোড়ে মোড়ে যানজট নিরশনে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালনেও পিছপা হয়নি কোমলমতি ছাত্ররা। সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আবারও নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছে তারা।অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশে ফিরে আসে স্থিতিশীল পরিবেশ। এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশে সারা দেশের পুলিশ সদস্যরা নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে আসতে শুরু করে।আজ ১২ই আগস্ট ১২: ৩০ মিনিটে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পুলিশ সুপার এম মোর্শেদ আলম পিপিএম এর সভাপতিত্বে দেশের সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জরুরী প্রেস ব্রিফিং এর আয়োজন করে জেলা পুলিশ।

আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং এ আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ এমদাদ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সালাউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হাসানুজ্জামান, ট্রাফিক বিভাগের টি আই তুহিন লস্কর এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।প্রেস ব্রিফিং এ পুলিশ সুপার বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক পর্যায়ে এক দফা সরকার পতনের আন্দোলনে রুপ নেয় । আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া সহিংসতায় কোমলমতি ছাত্র, সাধারণ মানুষসহ অনেক পুলিশ সদস্যও নিহত হন।

তিনি সকল শহীদদের প্রতি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে গভীর সমবেদনা ও শোক প্রকাশ করেন।তিনি বলেন, বাংলাদেশের পুলিশ শত বছরের পুরনো একটি সংগঠন। যারা সুদীর্ঘ বছর যাবত এ দেশের মানুষকে বিপদকালীন সমস্ত রকম সেবা প্রদান করে আসছে। ছাত্র আন্দোলনের সাথে মিশে কিছু সহিংসতাকারি ও দুষ্কৃতিকারী বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে অনেক পুলিশ সদস্য নিহত ও আহত হয়। নিহত পুলিশ সদস্যদের মৃতদেহের প্রতিও নৃশংস ও অত্যাচার মূলক আচরণ করে, যা বাংলাদেশের দুই লক্ষাধিক পুলিশ সদস্যকে ব্যাপকভাবে মর্মাহত করেছে।

স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, করোনা কালীন সময়ে যখন কোন করোনা আক্রান্ত মানুষকে তার পরিবারের সদস্যরাও ছুঁতে বা সংস্পর্শে আসতে ভয় পেতো, তখন বাংলাদেশ পুলিশ-ই  সবার আগে এগিয়ে এসে সাধারণ মানুষের খাদ্য সরবরাহ থেকে শুরু করে মৃতের  দাফন সহ সকল বিপদকালীন সেবা প্রদান করেছিল।একশ্রেণীর দুষ্কৃতিকারীরা তাদের নির্দিষ্ট এজেন্ডা  বাস্তবায়নের জন্য এবং পুলিশের দৃঢ় মনোবল নষ্ট করা সহ সাধারণ মানুষকে সেবা প্রদানের মনোভাবকে বিচ্যুত করার জন্য,গনমানুষের সাথে একাগ্রতার সম্পর্ক থেকে বিচ্যুত করার জন্য এই নৃশংস ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে।

এটা ছাত্রদের কাজ নয়। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।দুষ্কৃতিকারীরা যে এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এবং  সাধারণ মানুষের সাথে পুলিশের দূরত্ব তৈরি করার জন্য এ ঘটনা গুলো ঘটিয়েছে, তাদের সেই আশা কখনোই পূরণ হবে না। সাধারণ মানুষের সাথে সকল পুলিশের যে একাগ্রতা ছিল, সেবা প্রদানের যে মনোভাব ছিল তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে নতুন উদ্যমে সাহসের সাথে আরও সেবা প্রদানের মনোভাব নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ফিরে এসেছে পুলিশ বাহিনী।

ফরিদপুরের নয়টি থানার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে, যেটা সব সময়ই চলমান রয়েছে। তিনি সকল সেবা প্রত্যাশীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিগত দিনে পুলিশের পাশে থেকে সকল বিপদকালীন সময়ে পুলিশকে যেমনি ভাবে স্মরণ করেছেন এবং পুলিশের বিপদে এগিয়ে এসেছেন আগামীতেও আপনারা সকল প্রকার পুলিশি সেবার জন্য ও আইনগত সহায়তার জন্য আপনি আপনার নিকটবর্তী থানায় যাবেন। পুলিশ সাধারণ মানুষের সেবার জন্য অপেক্ষমান। পুলিশ সদস্যদের যে কোনরকম বিপদে ছাত্র জনতা ও সাধারণ মানুষকে পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, ৫ ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের (বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়) মন্দির, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর বা অগ্নি সংযোগকারীদের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ কঠিন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণকারীদের প্রতি মনোভাব পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ ধরনের অন্যায় অত্যাচারকারী যে দলের বা যে মতেরই হোক না কেন পুলিশ বসে থাকবে না। সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে।

তিনি বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু ছিল - আছে -  থাকবে। থানার কার্যক্রম কখনোই বন্ধ হয়নি, দুষ্কৃতিকারীদের ধ্বংসযজ্ঞের কারণে সাময়িক ব্যাহত হয়েছে মাত্র। মোট তিনটি থানার সরকারি ও ব্যক্তিগত সমস্ত মালামাল লুট ও আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে দুষ্কৃতিকারীরা । কোন ধরনের সেবা প্রদান করার মতো অবস্থা ছিল না। তারপরও সেবা প্রধান বন্ধ ছিল না। প্রস্তুতির জন্য এক দুই দিন সময় লেগেছে মাত্র।

আজ থেকে ফরিদপুর জেলা পুলিশ থানার অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত সমস্ত রকম সেবা প্রদানে প্রস্তুত। দলমত নির্বিশেষে ছাত্রসহ সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে সাথে নিয়ে সকল প্রকার অপরাধকে নির্মূল করার এবং স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি সকলকে আশ্বস্ত করে বলেন, ফরিদপুর জেলা পুলিশ অতীতেও আপনাদের সাথে ছিল, বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বিপদকালীন ও আইনগত সকল সেবা প্রদানের অঙ্গীকার করেন তিনি। সম্প্রতি সড়কের যানজট নিরসনের জন্য দায়িত্ব পালনরত সকল ছাত্র ছাত্রীদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন এবং ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন আজ থেকেই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পূর্ণাঙ্গ রূপে কার্যকর করা হবে।

সাধারণ মানুষের মনে আস্থা পুনরস্থাপন করার লক্ষ্যে বেলা ৩:০০ টায় সকল পুলিশ সদস্য এবং সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সমন্বয়ে একটি বিশাল র‍্যালির আয়োজন করে জেলা পুলিশ। র‍্যালিটি শহরের বিভিন্ন প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। একই দিনে একই সময় সদর থানা সহ ফরিদপুরের আটটি থানায় একই রকম পুলিশী মহড়া কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে তিনি প্রকাশ করেন।ফরিদপুরের সাধারণ মানুষ কেউইও অনিরাপদ নয়, সকলেই নিরাপদ। যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতিতে পুলিশ বাহিনীকে পাশে পাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি ।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo