সরকার নির্ধারিত দামের দ্বিগুণে বিক্রি হচ্ছে এমওপি, টিএসপি ও ডিএপি সার। রাজশাহীর তানোরে কৃষি বিভাগের যোগসাজশে সার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কৃষকদের জিম্মি করে রেখেছে। সরকার নির্ধারিত দামের দ্বিগুণে এমওপি, টিএসপি ও ডিএপি সার বিক্রি করছে এসব ডিলার। এসময় কোনো ক্রয় রসিদ দেওয়া হচ্ছে না। আবার কারও প্রতিবাদে তাকে চাহিদামতো সার দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ভয়-ভীতির কারণে সাধারণ কৃষকরা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চৌবাড়িয়া বাজারের জয়নব ট্রেডার্স, তালন্দ বাজারের কাজল, গণেশ ও মনিরুল প্রতিদিন ট্রলিভর্তি সার চোরাপথে এনে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করছেন। এসব সার আসে পার্শ্ববর্তী মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট, ধুরইল, মান্দার সাবাইহাট ও চৌবাড়িয়াহাট থেকে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত খুচরা দাম হলো
এমওপি (পটাশ): ১,০০০ টাকা
ডিএপি: ১,০৫০ টাকা
টিএসপি: ১,৩৫০ টাকা
কিন্তু বাজারে এই সার বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ মূল্যে। সার বিপণন নীতিমালা অনুযায়ী এক এলাকার সার অন্য এলাকায় বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু সিন্ডিকেটচক্র প্রকাশ্যে এই নিয়ম ভঙ্গ করছে। শনিবার তানোর সদরের সার ব্যবসায়ী সৈয়ব আলী, প্রণব সাহা, এবং তালন্দ বাজারের সুমন ও বাবুর ছেলের দোকানে সারের জন্য হট্টগোল ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। কৃষকরা অভিযোগ করেন, ক্রয় রসিদ না দেওয়ায় তারা বুঝতে পারছেন না সার আসল নাকি ভেজাল। নিুমানের সার কিনে ফসলের ক্ষতি হলেও সাধারণ কৃষকের কিছু করার থাকে না।
তানোরে বিসিআইসি (বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্টিজ কর্পোরেশন)-এর মোট ৯ জন অনুমোদিত ডিলার রয়েছেন। তারা যশোর নোয়াপাড়ার আমদানিকারক ফায়েজ ট্রেডিং থেকে সার পান। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকে ফায়েজ ট্রেডিং কর্তৃপক্ষ অজুহাত দেখিয়ে সার সরবরাহ বিলম্বিত করছে। এই সুযোগে বিএডিসি ডিলাররা নিজেদের বরাদ্দকৃত সার মজুত করে রেখে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন।
চলতি মৌসুমের আমন চাষ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর তানোরে ২৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় সমান। অথচ আমন মৌসুমের ঠিক এই সময়ে সার সংকট দেখা দেওয়ায় কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এ বিষয়ে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদ বলেন,
“সরকারিভাবে এবার টিএসপি ও এমওপি সারের বরাদ্দ কিছুটা কমিয়ে ডিএপি সারের বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এতে সংকট হওয়ার কথা নয়। কৃষকরা না বুঝে টিএসপির দিকে বেশি ঝুঁকছেন। আমরা তাদের ডিএপি ব্যবহারে উৎসাহিত করছি। নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে। কোনো ডিলার অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে— যেখানে সরকার অনুমোদিত বিসিআইসি ডিলাররা সার দিতে পারছেন না, সেখানে তারা প্রতিদিন কীভাবে চোরাপথে সার সরবরাহ করছেন? কৃষক মহলে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।