গাজীপুর মহানগরীর ভোগরা বাইপাস এলাকায় প্যানারোমা এ্যাপারেলস লিমিটেড নামের একটি কারখানার এক নারী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষব্ধ শ্রমিকরা সোমবার সকালে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পরে শ্রমিকরা কারখানার ভিতরে প্রবেশ করে ভাংচুর চালায় ও কয়েকটি যানবাহনে অগ্নি সংযোগ করেছে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
তবে, শ্রমিকের মৃত্য নিয়ে দুই ধরণের বক্তব্য পাওয়া গেছে। শ্রমিকদের দাবী একজন নারী শ্রমিক কারখানায় কাজ করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে সে ছুটি চায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ প্রথমে ছুটি না দিলে সে আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে স্বজনেরা তার লাশ নিয়ে যায়। অপরপক্ষের দাবী, একজন নারী শ্রমিক কারখানার ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন।
মারা যাওয়া শ্রমিকরে নাম, আফছানা আক্তার লাবনী (৩০)। তিনি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার পাররুখী এলাকার মো: আফসার আলীর মেয়ে। তিনি তার স্বামী হৃদয়ের সাথে মহানগরীর সদর মেট্রো থানাধীন হাড়িনাল এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে ঐ কারখানায় কাজ করতেন।
স্থানীয়রা জানায়, আজ সোমবার সকালে মহানগরীর ভোগরা এলাকায় প্যানারোমা এ্যাপারেলস লিমিটেড নামের কারখানায় একজন নারী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার (৩ মার্চ) সকালে ৮ টার পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় তারা টায়ার জালিয়ে বিক্ষোভ করে। এতে মহাসড়কে সাময়িকভাবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে তারা সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে কারখানার গেট ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে বাংছুর করে। এসময় তারা দুটি আপআপপ ভাংছুর করে, দুটি প্রাইভেটকার ও দুটি মোটর সাইকেললে অগ্নি সংযোগ করে। পরে খবর পেয়ে সেনা বাহিনীর সদস্যরা, মহানগর ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
পুলিশ ও মালিক সূত্রে জানা যায়, প্যানারোমা এ্যাপারেলস লিমিটেড নামের কারখানায় গতকাল একজন নারী শ্রমিক ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে। সেটি জানাজানি হলে আজ (সোমবার) সকাল ৮ টার পরে ওই কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভের একপর্যায়ে শ্রমিকরা ভোগরা বাইপাস এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিং মহাসড়ক অবরোধ করেছে। একপর্যায়ে শ্রমিকরা আরও উত্তেজিত হয়ে মহাসড়ক টায়ার ও কারখানার সামনে বেশ কয়েকটি যানবাহনে আগুন দিয়েছে, কারখানায় ভাংচুর করেছে। এখন পর্যন্ত মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম বলেন, গতকাল তাদের নারী শ্রমিক সাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে। পর্যাপ্ত সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে, আমাদেরকেও দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। ব্যক্তিগত কারণে আত্মহত্যা করতে পারে। ওই ঘটনায় শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে এবং কারখানার সামনে থাকা কয়েকটি যানবাহনে আগুন দিয়েছে। সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ একত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
তিনি আরো জানান, এ ঘটনার পর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস, চান্দনা চৌরাস্তা ও আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন কারখানার গেটে গিয়ে শ্রমিকরা ধাক্কা করে, শ্রমিকদের আন্দোলনে যোগ দিতে আহবান জানায়। পরে ১২টি কারখানায় আজকের মতো ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মহানগরীর বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কায়সার আহমেদ জানান, একজন নারী পোশাক শ্রমিক আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় জিগ্যাসাবাদের জন্য আসমার স্বামী হৃদয়কে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় কোন অভিযোপ পেলে পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।