বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাকাত ফাউন্ডেশন অব আমেরিকার ছাগল বিতরণ নিয়ে ঘটেছে লঙ্কাকাণ্ড। সংগঠনটি কুড়িগ্রাম জেলা ৩৮৪ পরিবারের মাঝে ৭৬৮ টি ছাগল বিতরণ করেন। এই ছাগল বিতরণ ও ছাগল ক্রয় নিয়ে দূর্নীতি জন্ম দিয়েছে ছাগলকাণ্ডের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জাকাত ফাউন্ডেশন অব অমেরিকা জেলার রাজার হাট ও সদর উপজেলায় ছাগল বিতরণের জন্য স্থানীয় টগরাই হাট এলাকার কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষক মোজাম্মেল হক বাবুকে স্বেচ্ছাসেবক নির্বাচন করেন। বাবু তার নেতৃত্বে তরিকুল ইসলাম তারা নামের আর একজন ছেলেকে তার টিমে স্বেচ্ছাসেবক নির্বাচন করে অনিয়মের কৌশল রপ্ত করান। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা যাকাত ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক নুরুল ইসলামকে নিয়ে লালমনিরহাট জেলার বড়বাড়ি হাটে যান ছাগল ক্রয়ের জন্য। সেখানে প্রত্যেক ছাগল ক্রয় বাবদ গড়ে ১ হাজার টাকা ব্যক্তিগত পকেটে ভরান। এতে কয়েক লক্ষ জাকাতের টাকা পকেটস্থ করার অভিযোগ উঠে ওই দুই স্বেচ্ছাসেবকের বিরুদ্ধে।
সদর উপজেলায় ছাগল বিতরণের অনিয়ম তুলে ধরে কাঁঠালবাড়ি পার্ক মোড় এলাকার বাসিন্দা রুবেল, প্রদীপ, মশিউর ও সজিব এই প্রতিবেদককে জানান-প্রত্যেক পরিবারে ২ টি করে ছাগল দেওয়ার কথা থাকলেও পরে একটি করে ছাগল বাসায় বাসায় গিয়ে ফেরত নেন স্বেচ্ছাসেবী তরিকুল ইসলাম তারা এবং ছাগলগুলো ব্যক্তিগতভাবে আত্মসাতের উদ্দেশ্য লুকিয়ে রাখেন। তাছাড়া অনেকের কাছে ভোটার আইডি কার্ড নিয়েও ছাগল দেন নাই। কারো কারো কাছে ২টি ছাগল দেওয়ার কথা বলে ২ হাজার করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
বিতরণকৃত ছাগল ফেরত নেওয়ার বিষয়টি এলাকায় জানানানি হলে কতিপয় সংবাদকর্মী সরেজমিনে অনুসন্ধানে যান, এতে অনুতপ্ত হয়ে সুফোলভোগীদের বাড়িবাড়ি গিয়ে ছাগল ফেরত দেন তরিকুুল ইসলাম তারা।
পাশাপাশি ঐ প্রতিষ্ঠানের আরেকটি খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিতে খাদ্য দেওয়ার নাম করে জনপ্রতি ৫৫০ টাকার নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে এ স্বেচ্ছাসেবকের বিরুদ্ধে। মূলত এই স্বেচ্ছাসেবকের সব পরিকল্পনার মাস্টার মাইন্ড ছিলেন জাকাত ফাউন্ডেশনের নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবক মোজাম্মেল হক বাবু।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, গত ১ ও ২ মে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট থানা ও কাঠালবাড়ি ইউনিয়নের ৭৬৮ পরিবারকে ছাগল বিতরণ করে সংস্থাটি। পাশাপাশি রাজারহাট ও সদর উপজেলায় ১ হাজার পরিবারের কাছে খাদ্য সহায়তা দেয় সংস্থাটি। ছাগল ও ফুড প্যাকেজ বাবদ এই দুই উপজেলায় যার বাজেট ধরা হয় প্রায় ৭৫ লাখ টাকা।
সরেজমিনে তদন্তে গিয়ে সত্যতা মিলে এসব অভিযোগের। গত ২ মে (শুক্রবার) কথা হয় কাঁঠালবাড়ি ইউনয়নের গয়ারী গ্রামের বাসিন্দা সুফলভোগী মোছা. জাহেদা খাতুনের সাথে। তিনি বলেন, ‘ তারা আমার কাছ থেকে কার্ড নিছিলো। কইছিলো ছাগল পামো দুইটা কিন্তু পাইছি একটা। আমার ভাগের আরেকটা ছাগল ওমরা দেয় নাই।
তবে আজ (৪ এপ্রিল) তিনি নিশ্চিত করেছেন তাকে আর একটি একটি ছাগল ফেরত দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন।
একই গ্রামের বাসিন্দা জরিনা বেগম বলেন, আমি আর আমার মেয়ের দুইটা কার্ড নিছিলো তরিকুল ইসলাম তারা পরে আমি একটা ছাগল বাসায় আনি কিন্তু আমার মেয়ে কোনো ছাগল পায় নাই। আবার আমিও দুইটা ছাগল পাই নাই। তবে আজ সকালে সাংবাদিক আসার পর তারা আমাকে আবার একটা ছাগল দিয়া গেছে। কিন্তু আমার মেয়েরে কোনো ছাগল দেয় নাই।’
একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা সালেহা বেগম বলেন, ‘ আমার কার্ড ছিলো ছাগলের আমি মাঠ থেকে দুইটা ছাগলও আনছি। কিন্তু তরিকুল ইসলাম তারা বলছে তার বাসায় ছাগল দিয়ে আসতে , আমি ছাগল দিয়ে আসছি পরে আর ছাগল পাইনি।
সাংবাদিক ভাইরা আসার পরে আমাকে খাবারের প্যাকেজ দেয়। কিন্তু আমি আমার ছাগল চাই।’
নাম না প্রকাশ করা ক্ষেত্রে আরেক বাসিন্দা অভিযোগ করেন আমি তারার বাড়িতে যাই কিন্তু তারার পরিবারের মানুষ আমাকে বলে যে খাবারের প্যাকেজের জন্য ৫৫০ টাকা দিতে হবে। আমি পরে আর টাকা দেই নাই প্যাকেটও নেই নাই।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জাকাত ফাউন্ডেশন অব আমেরিকার স্থানীয় সেচ্ছাসেবক তরিকুল ইসলাম তারা বলেন, ‘ আমি অনেকের কার্ড নিয়েছিলাম কিন্তু সবাইকে ছাগল ও খাদ্য সামগ্রী দেওয়া সম্ভব হয়নি। যাদের নামের ছাগল এসেছে তারা ছাগল পেয়েছে। কিছু ভুলত্রুটি হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়।
ছাগল ফিরিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘ আমাদের কিছু সমস্যা ছিলো পরে আমরা পরিবারের কাছে ছাগলগুলো ফিরিয়ে দিয়েছি।’
এব্যাপারে স্বেচ্ছাসেবক মোজাম্মেল হক বাবু জানান, আমি ছাগল কিনেছি কিন্ত আর্থিক অনিয়ম করিনি, তরিকুল কেন দুইটি ছাগলের জায়গায় একটা ছাগল দিয়েছে তা আমার জানা নাই। আমি এই বিষয়ের সাথে জড়িত নই।
জানতে চাইলে জাকাত ফাউন্ডেশন অব আমেরিকার প্রকল্প পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন,‘ আপনার কাছেই এমন অভিযোগের কথা প্রথম শুনলাম, আমাদের কাছে এমন কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে আমি খোঁজ খবর নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিব।’