কমলগঞ্জে খরস্রোতা ধলাই নদী জৌলুস হারিয়ে এখন সরু খাল

জায়েদ আহমেদ প্রকাশিত: ১৩ মার্চ , ২০২৫ ১১:৪৮ আপডেট: ১৩ মার্চ , ২০২৫ ১১:৪৮ এএম
কমলগঞ্জে খরস্রোতা ধলাই নদী জৌলুস হারিয়ে এখন সরু খাল
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত খরস্রোতা ধলাই নদী

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত খরস্রোতা ধলাই নদী। এই নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছিল এ অঞ্চলের সভ্যতা ও সংস্কৃতি। আশপাশের এই অঞ্চলের মানুষের জীবিকারও অন্যতম আশ্রয়স্থলও ছিল এই নদী। এখন সেই ধলাই নদী হারিয়েছে সেই চিরচেনা রূপ ও জৌলুস। পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় আয়তন কমেছে অর্ধেক। কমেছে গভীরতাও। অপরিকল্পিত খনন এবং সংস্কারের অভাবে নদীর তলদেশে পলি জমে বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠেছে চর। ধলাই নদীর বুকজুড়ে এখন শুধু বালু আর বালু। এদিকে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। ফলে  দেখা দিয়েছে কৃষিজমিতে সেচ এবং খাবার পানির সংকট।  গবেষকরা বলছেন, বর্তমানে এ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ১২৫ ফুট নিচে অবস্থান করছে। গভীর নলকূপে পানি উঠছে না। এলাকায় শীত শেষ না হতেই পানি শূন্যতায় চৌচির হয়ে পড়েছে খাল, বিল এবং পুকুর। খাওয়ার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ধলাই নদীকে বাঁচাতে হলে খনন করা প্রয়োজন।  জানা যায়,ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে প্রায় ৬৬ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশের ঢুকেছে ধলাই নদী। সীমান্তের ওপারে ধলাই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৪০ কিলোমিটার। আর বাংলাদেশের ভেতরে সাড়ে ৪৮ কিলোমিটার। নদীটি কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর, মাধবপুর, আদমপুর, কমলগঞ্জ সদর, কমলগঞ্জ পৌরসভা ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জেলা সদরের মনু নদীতে মিলেছে। প্রায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে খরস্রোতা ধলাই নদীর পানি বেড়ে সৃষ্ট বন্যায় বাড়িঘর ও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘদিনের নদী খননের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালে দেশের ৬৪টি জেলার খাল, জলাশয় ও নদী পুনর্খনন প্রকল্পের (১ম পর্যায়) আওতায় ৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ধলাই নদীর ২২টি স্থান চিহ্নিত করে চর অপসারণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।  নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানান, ‘নদীতে অপরিকল্পিত খননের ফলেই প্রতিবছর পলি জমে তলদেশ ভরাট হওয়ায় বর্ষাকালে নদীর পানি উপচে বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে। এই নদীর ওপর নির্ভর করে কৃষকেরা চাষবাদ করে থাকেন। কিন্তু নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে তা মরা খালে পরিণত হয়।’  সম্প্রতি সরেজমিনে ধলাই নদীর আদমপুর, ইসলামপুর, মাধবপুর, সদর, কমলগঞ্জ পৌরসভা ও রহিমপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, এক সময়ের খরস্রোতা ধলাই নদী এখন সরু খালে পরিণত হয়েছে। নদীতে সামান্য পানি থাকলেও নাব্য সংকটে থেমে গেছে পানির প্রবাহ। বিশেষ করে নদীর ২০/২৫টি স্থানে চর জেগে উঠেছে। এর ফলে নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক বৈচিত্র নদীতে চর জাগায় সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা।  কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের জামিরকোনা গ্রামের কৃষক ময়নুল মিয়া বলেন, ‘ধলাই নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে। চারদিকে শুধু চর আর চর। নদীর তীরবর্তী হওয়ায় আমাদের কয়েক হাজার একর জমিতে বোরো আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। সেচ পাম্পগুলোতে পর্যাপ্ত পানি না ওঠায় দিশেহারা হয়ে পড়েছি।’  পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলীদ বলেন, ‘এই সময়ে পানি নদীতে কম থাকে, যার কারণে নদীতে চর ভেসে উঠে। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর আগে নদী খনন করা হয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর মাধ্যমে। কিন্তু নদীতে পানি আসলেই আবার ভরে যায়। তাই খনন করেও লাভ নাই। আমাদেরও এখন খনন করা কোনো পরিকল্পনা নায়।    

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo