হাত নেই , পা নেই তবুও জিপিএ ৫ পেল লিতুন জিরা

মোঃআমিনুর রহমান প্রকাশিত: ১৩ জুলাই , ২০২৫ ১৭:২৩ আপডেট: ১৩ জুলাই , ২০২৫ ১৭:২৩ পিএম
হাত নেই , পা নেই তবুও জিপিএ  ৫ পেল লিতুন জিরা
লিতুন জিরার জন্ম থেকে দুটি পা নেই। নেই হাত দুটিও। ডান বাহুর মাথা ও চোয়ালের সঙ্গে কলম চেপে ধরে লিখে লিখে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় সে।

লিতুন জিরার জন্ম থেকে দুটি পা নেই। নেই হাত দুটিও। ডান বাহুর মাথা ও চোয়ালের সঙ্গে কলম চেপে ধরে লিখে লিখে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় সে। প্রকাশিত ফলাফলে সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। অদম্য এই কিশোরী একই ফল করেছিল পিইসিতেও। বড় হয়ে চিকিৎসক হিসেবে দেখার স্বপ্ন তার। লিতুন জিরার স্বপ্ন পূরণের পথে শুরু থেকেই তার পাশে আছে পরিবার। লিতুন জিরা যশোরের মনিরামপুর উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান ও জাহানারা খাতুন দম্পতির মেয়ে। সে উপজেলার গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। লিতুন জিরার বাবা হাবিবুর রহমান উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এ আর মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক। মা জাহানারা খাতুন গৃহিণী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে সে ছোট। বড় ভাই ইশতিয়াক আহমেদ ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ফলাফল প্রসঙ্গে লিতুন জিরা বলে, ‘পরীক্ষার ফলাফলে আমি খুব খুশি। মা-বাবা ছাড়াও স্কুলের স্যার ও বন্ধুরা আমাকে সহযোগিতা করেছে। সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার ইচ্ছা ভালো মানুষ হওয়ার। লেখাপড়া শিখে আমি চিকিৎসক হতে চাই। মানুষের সেবা করতে চাই।’ লিতুন জিরার জন্ম থেকেই হাত-পা নেই জানিয়ে মা জাহানারা খাতুন বলেন, ‘২০০৮ সালের ২৫ জুন লিতুন জিরার জন্ম। ওর জন্মের পর কষ্ট পেয়েছিলাম। অনেক কেঁদেছিলাম। পরে ভেবেছি, ওকে কারও বোঝা হতে দেওয়া ঠিক হবে না।’ স্মৃতি হাতড়ে জাহানারা খাতুন বলেন, ‘ছোটবেলায় লিতুন জিরাকে টুলের সামনে বসিয়ে দেওয়া হতো। টুলের ওপর স্লেট রাখা হতো। হাতে দেওয়া হতো খড়িমাটি। খড়িমাটি ডান হাতের বাহুর মাথা দিয়ে ডান চোয়ালে চেপে ধরত সে। এরপর নিচু হয়ে স্লেটে লিখত। এভাবে নিজে নিজেই লেখা শিখেছে সে। এখন সেভাবে কলম ধরে সামনের টেবিলে রাখা খাতায় লিখে পরীক্ষায় দেয়, ছবি আঁকে।’ মেয়ের সাফল্যে খুশি বাবা হাবিবুর রহমানও। তিনি বলেন, ‘লিতুন জিরার লেখা সুন্দর। সে ভালো ছবিও আঁকতে পারে। কবিতা আবৃত্তি পারে, গানও গাইতে পারে। সে খুলনা বেতারে শিশু-কিশোরদের একটি অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করত।’ প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে লিতুন জিরার পড়াশোনা চালাতে পরিবারের সদস্যরা বেশ অবদান রেখেছেন। প্রতিদিন সকালে তাকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে স্কুলে দিয়ে আসতেন তাঁর মা জাহানারা খাতুন। আবার ছুটি হলে বাড়ি নিয়ে আসতেন। টিফিনের সময় তার দাদি স্কুলে গিয়ে খাবার খাইয়ে আসতেন। লিতুনের হাইস্কুল বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে ছিল। প্রতিদিন সকালে মোটরসাইকেলে করে স্কুলে নিয়ে যেতেন বাবা হাবিবুর ও মা জাহানারা। মোটরসাইকেলটির মাঝে বসত লিতুন, পেছনে বসে মা তাকে ধরে রাখতেন। এভাবে এসএসসি পর্যন্ত নিজের শিক্ষাজীবন সফলভাবে শেষ করেছে সে। লিতুনের ভবিষ্যৎ জীবনের সাফল্য কামনা করে মনিরামপুর উপজেলার গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল করিম বলেন, ‘ওর লেখা স্পষ্ট, দৃষ্টিনন্দন। খুব দ্রুত লিখতে পারে। লিতুন জিরা ভালো ছবিও আঁকে। ভালো গান গায়। যেকোনো সৃজনশীল প্রতিযোগিতায় সে খুব ভালো করে। তার যে ইচ্ছাশক্তি, তাতে সামনের ধাপগুলোতে সে মেধার একই স্বাক্ষর রাখবে। আমরা তার সাফল্যে খুব খুশি।’


এই বিভাগের আরোও খবর

Logo