পাখি ডাকা ভোর থেকে ছুটে চলা শুরু আর শেষ হেমন্তের কুয়াশায় মেঘ ঢাকা সন্ধ্যা পযর্ন্ত।পড়নে ছেঁড়া কাপড় পড়ে, হাতে প্লাস্টিকের ব্যাগ আর খন্তি (মাটি খোঁড়ার হাতিয়ার) নিয়ে গন্তব্য করেন ফসলের মাঠ।উদ্দেশ্য ধানের জমিতে পড়ে থাকা ও ইঁদুরের গর্ত থেতে ধান সংগ্রহ করা। বলছি সমাজের সুবিধা বঞ্চিত গরিব শিশুদের কথা। তারা এভাবেই নিজের ও পরিবারের চাহিদা মেটাতে এসব কাজ করে থাকে। এখন আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। সোনালি ধানের ঘ্রাণে ভরে আছে তাদের ক্ষেত ও আঙ্গিনা। শীত আসার আগে ভাগে ধান ঘরে তুলতে পেরে সবার মুখে ফুটেছে খুশির ঝিলিক। অপরদিকে প্রতি বছরের মতো মাঠে মাঠে ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধান বের করছে শিশুরা। এসব ধান কুড়ানি শিশুরা প্রতিদিন দলবেঁধে ছুটে যায় ফসলের মাঠগুলোতে। চলতি মৌসুমে ধান কাটা-মাড়াই ঘিরে যখন গৃহস্থ পরিবারের নবান্নের উৎসব চলছে। ঠিক তখনই ভূমিহীন পরিবারগুলোর শিশুরা খুঁজে বেড়াচ্ছে কৃষকের কেটে নেওয়ার সময় ঝরে পড়া ধানগুলো। সকাল কিংবা বিকেলের মিষ্টি রোদে হাতে ব্যাগ ও দা আর খুন্তি নিয়ে মাঠে মাঠে ইঁদুরের গর্তগুলো থেকে ধানে ভাগ বসাচ্ছে তারা।ক্ষেতজুড়ে দলবেঁধে ছুটে বেড়ানো শিশুরা ১৫ থেকে ২০ কেজির মতো ধানের শীষ কুড়িয়ে থাকে। যখন ধানের পরিমাণ বেশি হয় তারা বেচে দেয়। অনেকে আবার পিঠাপুলি খাওয়ার জন্য জমিয়ে রাখে সেই ধান। এ ধান কুড়িয়ে কারো আবার বছরের একবেলা খাবার কিংবা বছরে অন্তত একদিন পিঠা খাওয়ার সুযোগ হয়। এ মৌসুমে অনেক শিশু-কিশোর স্কুলে না গিয়ে দিন পার করছে ধান কুড়িয়ে। উপজেলার গোলমুন্ডার ইউনিয়নের শিশু আব্দুল হাকিম (১৩) এর সঙ্গে কথা হলে সে জানায়, কৃষকরা যখন ক্ষেত থেকে ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার পর অনেক ধানের ছড়া এমনিতেই পড়ে থাকে সেগুলো সে কুড়িয়ে নেয়। এছাড়া ক্ষেতে ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে পাওয়া যায় অনেক ধান। যখন তাদের ব্যাগে ধানের পরিমাণ বেশি হবে তখন তা বিক্রি করবে বা বাড়িতে নিয়ে জমিয়ে রাখবে পিঠাপুলির স্বাদ নিতে।কৃষক মিলন বলেন, আগে মাঠজুড়ে ধান কুড়ানি শিশুদের আনাগোনায় বেশি থাকত। তখনকার সময়ে ধান কাটার একটা উৎসব মুখর পরিবেশ ছিল। এখন সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে, শিশুরা নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে। অনেক শিশুদের এখনও মাঠে দেখা যাচ্ছে ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান কুড়াতে। জলঢাকা কৃষি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ বলেন, ক্ষেতে ইঁদুরের গর্তগুলোতে সাপ, ও পোকা-মাকড় থাকতে পারে। এই কাজ শিশুদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে, এতে কৃষকের কোন উপকার নেই। এছাড়া ইঁদুর নিধনে আমরা উপজেলা পর্যায়ে কৃষকদের বিভিন্ন ভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।