খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় আলোচিত ইউপি চেয়ারম্যান বহু অপকর্মের হোতা, শেখ পরিবারের আস্থাভাজন ,দুর্নীতিবাজ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক , হত্যা সহ একাধিক মামলার আসামি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা ফিরোজ হোসেনকে গ্রেফতার করেছে দিঘলিয়া থানা পুলিশ। তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিএনপির নেতা-কর্মীরা ২০২২ সালের ২২ অক্টোবর ফুলতলা শিকিরহাট থেকে ট্রলার যোগে খুলনা মহাসমাবেশে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি ইউনিয়নের চন্দনীমহল কাটাবন নামক স্থানে পৌঁছালে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মীরা আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় কাজী আনোয়ার হোসেন বাপ্পী বাদী হয়ে দিঘলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৩ , তারিখ ০৪/০৯/২০২৪ । দীর্ঘ দিন ধরে মোল্লা ফিরোজ হোসেন আত্মগোপনে ছিলো।
খুলনার দিঘলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ এইচ এম শাহিন এর নির্দেশনায় পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ( ১১ এপ্রিল) শুক্রবার তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।
উল্লেখ্য, মোল্লা ফিরোজ হোসেন ২০১৭ সাথে ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালীন তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তৎকালীন ইউপি সদস্যরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা ও মটর সাইকেল ছিনতাইয়ের অভিযোগ ।
২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ থানার ভ্রক্ষনকাঠী গ্ৰামের মৃত- অকাল উদ্দিন শিকদারের পুত্র আব্দুস সালাম শিকদার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন মামলা নং- -৩ , এ মামলায় ফিরোজ মোল্লা ২ নং আসামি এবং হত্যার পর ছিনতাই হওয়া মটর সাইকেলটি খুলনার দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ডিবি পুলিশ উদ্ধার করে।
ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা ফিরোজ হোসেন
২০১৮ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জামালের উপর হামলা , গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায় এ ঘটনায় দিঘলিয়া থানায় মামলা দায়ের হয় মামলা নং -১ মামলার ২ নং আসামি ফিরোজ মোল্লা।
২০২০সালের এপ্রিল মাসে করোনার সময চেয়ারম্যান থাকাকালীন ফিরোজ মোল্লা দুস্থদের মাঝে বরাদ্দকৃত চাউলের অনিয়মে ৭ ইউপি সদস্য তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
পরবর্তীতে ২০ সালের জুন মাসে চাউল আত্মসাৎ এর বিষয় বিভাগীয় কমিশনারের নিকট লিখিত অভিযোগ দাখিল করলে তদন্তে ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল তারিখ প্রাপ্ত ৩১৩৫ মে. টন চাউল নগদ ২৭৮২৫ টাকা , একই সালের ২১ এপ্রিল ৫৫৬ মে. টন চাউল ৩২৬৪৮ টাকা আত্মসাতে প্রমাণ পাওয়া যায়।
২০২১সালে গভীর নলকূপ বরাদ্দে অনিয়ম ও নলকূপ প্রদান বাবদ অতিরিক্ত অগ্রিম টাকা গ্রহণ করেন ভুক্তভোগীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তে বিষয়টি বেরিয়ে আসে।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ মোল্লার অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা নিতে চাইলে
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার একান্ত সচিব টু (পিএস) ওয়াহিদা আক্তার শিলা ফিরোজ মোল্লার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করার জন্য জেলা প্রশাসককে চাপ প্রয়োগ করেন ফলে তারা বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি তৎকালীন জেলা প্রশাসক বিষয়টি একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
এখানেই ক্ষান্ত হয়নি আলোচিত এই ইউপি চেয়ারম্যান তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন একাধিক প্রকল্পের কাজ না করে বিল উত্তোলন করে নিয়েছেন এর মধ্যে সাবেক দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের জায়গায় মার্কেট নির্মাণের প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ , ফাতেমা মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ওয়াস ব্লকের টাকা আত্মসাৎ সহ একাধিক প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
আওয়ামী লীগের এই নেতার ইজারা প্রাপ্ত খুলনার দিঘলিয়া- রেলিগেট - নগরঘাটা ফেরিতে রশিদ বিহীন অতিরিক্ত টোল আদায় নিয়ে ২০২৩ সাল থেকে অদ্যাবধি উপজেলা ও খুলনা জেলা আইন- শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থিত হলেও ফেরিতে টোলের নামে চাঁদাবাজি প্রশাসনের গাফিলতির কারণে বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।
বর্তমানেও অতিরিক্ত টোলের নামে চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে বলে জানা যায়।