সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইন্দুরকানীতে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে ৯ দিন ধরে অনশনে হিন্দু তরুণী সোনারগাঁয়ে ভূমি সেবা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিলেন এসিল্যান্ড ফাইরুজ তাসনিম,সেবাগ্রহীতাদের সাধুবাদ নড়াইল-২, ‘ভাড়াটিয়া’ বা জোট প্রার্থী: ক্ষুব্ধ জনতা, বাধাগ্রস্ত স্থানীয় রাজনীতি ও উন্নয়ন অভয়নগরের নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদের ওপর অত্যাচার যেন অলিখিত নিয়মে পরিণত লালপুরে ছাত্রলীগ নেতাকে আটকের পর ছেড়ে দিল পুলিশ সাপাহারে শিয়ালের কামড়ে নারী-শিশুসহ আহত ৩ পীরগঞ্জ স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি গ্রেপ্তার মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন তরুণ শিক্ষক ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ

ডিমলায় অবৈধ মিনি পেট্রোল পাম্প বন্ধে প্রশাসনের গাফিলতি। জীবন ঝুঁকিতে সাধারণ মানুষ

জাহিদুল ইসলাম / ২১
Update Time : সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৩ পূর্বাহ্ন

নীলফামারীর ডিমলায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অসংখ্য মিনি পেট্রোল পাম্প গড়ে ওঠায় সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায় সারা ২ টি মিনি পেট্রোল পাম্পে অভিযান চালিয়ে নাম মাত্র জড়িমানা করে দায় এড়ান । প্রশাসনের গাফিলতির কারণে কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ পাম্পগুলো । সে কারনে নিরাপত্তাহীনতা ও চরম জীবনের ঝুঁকিতে ডিমলা বাসী। এগুলো যেন এক একটি  জ্বলন্ত বারুদের স্ফিঙ্গ। এ অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো গোটা উপজেলা দখল করে বসে আছে। উপজেলা জুড়ে অনুমোদনহী অন্তত প্রায় ৭০ টি মিনি পেট্রোল পাম্প রয়েছে । এসব মিনি পাম্পে প্রতিদিন ব্যবহার করা হচ্ছে আত্যাধুনিক ডিসপেনসার মেশিন, বিক্রি হচ্ছে ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেন সহ অন্যান্য দাহ্য পদার্থ । এসব অবৈধ কার্যক্রমের সরকারী ভাবে কোন অনুমোদন, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কিংবা পরিবেশগত ছাড়পত্র।এলাকাবাসী সর্বদাই  আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে, যেকোন সময় ভয়াবহ  দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় করছে তারা । উপজেলা প্রশাসন এসব ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ মিনি পেট্রোল পাম্পগুলো বন্ধ করে দেয়ার কথা বললেও দিনাতিপাত ছাড়া বাস্তবে কোন কার্যকরী ভূৃমিকা রাখছেন না। এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধ মিনি পেট্রোল পাম্পগুলো বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে উপজেলা প্রশাসন।
ইতিমধ্যেই ডিমলা সদর ইউনিয়নের বাবুরহাট বাজারসংলগ্ন টিএনটি সড়কে অবস্থিত ”মেসার্স বক্কর অ্যান্ড সন্স” নামক একটি অনুমোদনহীন মিনি পাম্পে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। আগুনে দগ্ধ হন শ্রাবণ কুমার রায় (১৮) নামের এক তরুণ। সেই সঙ্গে পুড়ে যায় আশপাশের দোকানঘর, একটি মোটরসাইকেল শোরুম ও অন্যান্য স্থাপনা—যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় কোটি টাকা। বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কম্পিত হয়ে  পুরো বাজার জুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়ে মানুষ এদিক সেদিক ছোটা ছুটি করে ভয়াবহ আতঙ্কের সৃষ্টি হয় ।
 জানা যায়,   মিনি পাম্পেগুলোর বেশিরভাগই স্থাপিত হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে জনবহুল ও আবাসিক ভবন নির্মাণ সংলগ্ন এলাকায়। বাজার এলাকার যেখানে বেশি লোকসমাগম , স্কুলের পাশে, সড়কের ধার ঘেঁষে টিনশেড ঘর কিংবা মুদি দোকান । এই সব  স্থানে কোনো ধরনের অগ্নিনির্বাপকের ব্যবস্থা নেই । নেই বালুর বস্তা কিংবা নিরাপদ দূরত্বের ন্যূনতম ব্যবধানও । লোক চলাচলের রাস্তায় রাখা হয় বিশাল তেলের ড্রাম, যেকোনো সময় সিগারেটের আগুন বা অন্য কোন কারনে বিস্ফোরিত হয়ে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনা ঘটে ধ্বংস করে দিতে পারে ঐ সব এলাকা।
  অনেক মোটর সাইকেল আরোহী জানান, এসব পাম্পে বিক্রি হওয়া তেলে বেশির ভাগই  ময়লা মিশ্রিত, নিম্নমানের ও ভেজাল মিশ্রিত । যার কারনে যানবাহনের ইঞ্জিন দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে । এছাড়া পাম্পগুলোতে পরিমাপেও তেল কম দেয়া হয়ে থাকে। এভাবে সাধারণ ভোক্তারা আর্থিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশও হুমকির  মুখে পড়েছে । বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বাতাসে  মিশে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতিও করছে।
বাংলাদেশে জ্বালানি তেল সংরক্ষণ ও বিক্রয় ১৯৩৪ সালের এক্সক্লুসিভ আইন এবং ১৯৩৭ সালের  পেট্রোলিয়াম বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যবসার জন্য বিস্ফোরক পরিদপ্তরের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । তাছাড়াও প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা মানদণ্ড পূরণে যথাযথ শর্ত আরোপ করা হলেও  ডিমলায় এগুলোর কোন কিছুই মানা হচ্ছে না । অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, মিনি পেট্রোল পাম্প ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স অথবা স্থানীয় প্রভাবশালী কোন দলীয় নেতার  ছত্রছায়ায়  ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা চালিয়ে বিপদ জনক  পরিবেশ তৈরি করেছে। যেটা সম্পূর্ণ বেআইনি ও প্রচলিত আইনের পরিপন্থী  ।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্র জানায় , ডিমলায় অনুমোদিত ফিলিং স্টেশন রয়েছে মাত্র চারটি—উপজেলা সদরে দুটি এবং খালিশা চাপানি ও ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নে একটি করে। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। উপজেলা জুড়ে ছড়িয়ে আছে অন্তত প্রায় ৭০টির বেশি অবৈধ মিনি পেট্রোল পাম্প।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে  কিছু দিন পূর্বে  ২/১ মিনি পেট্রোল পাম্পে  মোবাইল কোর্ট অভিযান চালানো হলেও তা লোক দেখানো ও দায়সারা মাত্র । এগুলোতে এর তেমন একটা প্রভাব পড়েনি । কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর সেটিও আবার চালু করে দিব্যি ব্যবসা চালাচ্ছেন । প্রশাসনের নীরবতার ও গাফিলতির কারনে ব্যবসায়ীরা আরও বেশী বে-পরোয়া হয়ে উঠছে ।
উপজেলা সদরের ব্যাবসায়ী নুর হোসেন বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত বিস্ফোরণের আশঙ্কা নিয়ে দিন কাটাচ্ছি। মাঝে মাঝে অভিযান হয়, কিন্তু কিছুদিন পর আবার আগের মতোই চলে। অভিযান প্রশাসনের দায় সারা ছাড়া কিছুই না।
 একাধিক সূত্র  ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসব মিনি তেল পাম্পে কোন প্রকার নিয়ম নীতি নেই, গভীর রাত পর্যন্ত খোলা রেখে তেল বিক্রি করা হয়। যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে প্রাণঘাতী সহ বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের দাবী,প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপ ও টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শুধুমাত্র অভিযান নয়, পদ্ধতিগত ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে সমস্যার সমাধান ও বাস্তবায়নের জন্য তারা ৫ টি দাবী উপস্থাপন করছেন  (১) অবৈধ মিনি পাম্পগুলো চিহ্নিত করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
(২) টাস্কফোর্স গঠন করে ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক পরিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তনের সমন্বয়ে নিয়মিত মনিটরিং করা ।
(৩) শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্সের ভিত্তিতে তেল বিক্রিকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।
(৪) জনসচেতনতা মূলক গণমাধ্যম, সামাজিক সংগঠন ও প্রশাসনের যৌথভাবে প্রচার প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করা ।
(৫) বৈধ ফিলিং স্টেশনগুলোর সেবার মান উন্নত করা।
ডিমলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, এসব মিনি পাম্পে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, বালুর বস্তা বা নিরাপদ দূরত্ব কিছুই নেই। আগুন লাগলে তা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে ।
পরিবেশ অধিদপ্তর নীলফামারীর সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ-আল-মামুন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে  পরিদর্শন করে এসব অবৈধ পেট্রোল পাম্প  বন্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেও বাস্তবে এর কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
বিশিষ্টজনদের মতে, ডিমলায় অবৈধ মিনি পাম্পের বিস্তার কেবল আইনের লঙ্ঘন নয়, এটি জননিরাপত্তা ও পরিবেশের জন্য এক মারাত্মক হুমকি। এই সংকট সমাধানে প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগই হতে পারে উত্তরণের একমাত্র উপায়। কঠোর আইন প্রয়োগ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সুশাসনের মাধ্যমেই এই সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধান করতে হবে ।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরানুজ্জামান বলেন, অবৈধ মিনি পাম্পগুলো চিহ্নিত করে কয়েকটিতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।  যত দ্রুত সম্ভব আবারো ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে। জননিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category