উলিপুরে আট বছর ধরে একটি ব্রিজ ভেঙে পড়ে আছে, কিন্তু আজও এর সংস্কার হয়নি। ফলে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ীসহ কয়েক হাজার মানুষ।
জানা গেছে, উপজেলা শহরের হাসপাতাল মোড় থেকে তবকপুর ইউনিয়নের বড়ুয়া তবকপুর বাজারগামী পাকা সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নির্মাণ করে। সড়কের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বড়ুয়া তবকপুর বাজারের কাছে অবস্থিত ব্রিজটি ২০১৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় পিলার ভেঙে উল্টে যায়। এরপর থেকেই সংযোগ সড়কটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, আর এই এলাকার হাজারো মানুষের একমাত্র যাতায়াতপথ অকেজো হয়ে পড়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রিজের স্থানে এখন বিশাল এক গর্তের মতো জলাশয় তৈরি হয়েছে। দুই পাশের আবাদি জমি প্রায় এক একর এলাকাজুড়ে বিলীন হয়ে গেছে। মানুষজন বাধ্য হয়ে ড্রামের ভেলা বানিয়ে কিংবা কৃষিজমির আইল ধরে বিপজ্জনকভাবে পারাপার হচ্ছেন। নারী-শিশু থেকে শুরু করে রোগী বা ব্যবসায়ী—সবার জন্যই এ পথ হয়ে উঠেছে দুর্ভোগের প্রতীক।
স্থানীয় শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন বলেন, “যখন বেশি পানি থাকে, তখন ভয় লাগে। কখন জানি পানিতে পড়ে যাই। মাঝে মাঝে স্কুলে যাই না।”
রাহেনা বেগম (৫৫) আক্ষেপ করে বলেন, “ব্রিজটা অনেক বছর ধইরা ভাঙা পড়ে আছে, কেউ ঠিক করে না। গর্ভবতী বা অসুস্থ মানুষকে নিতে কষ্ট হয়। অনেকেই হাসপাতালে নিতে নিতে অসুস্থ হয়ে যায়।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী শহিদুর রহমান (৬০) জানান, “ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় মালামাল আনা-নেওয়া করতে খুব কষ্ট হয়। কয়েকবার পানিতে পড়ে গেছি।”
অটোরিকশাচালক আমিনুল ইসলাম (৫০) বলেন, “এই ব্রিজটা আট বছর ধইরা এমনই পড়ে আছে। গাড়ি যায় না, রোগী নিতে অ্যাম্বুলেন্সও আসে না। ১৫-১৬ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। সবাই আসে, দেখে যায়—কাজ করে না।”
বড়ুয়া তবকপুরের আরেক বাসিন্দা শাহাজাহান মিয়া কাছু (৬০) বলেন, “ব্রিজটা থাকলে আর কোনো সমস্যা থাকত না। দুই পাশে পাকা রাস্তা, শুধু এই জায়গাটায় যন্ত্রণা। আট বছর হয়ে গেল, কেউ দেখে না।”
স্কুলশিক্ষক মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, “এই পথে তবকপুর, চিলমারীর থানাহাট ও রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে। আমরা চেয়ারম্যান-এমপিসহ অনেকের কাছে গেছি, তবু কাজ হয়নি। শিক্ষার্থীরা এখনো ড্রামের ভেলা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসে।”
উপজেলা প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বলেন, “ব্রিজটির জন্য নতুন করে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা জানান, “ব্রিজটি সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজ প্রকল্পে ডিপিপি ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে অনুমোদন পাওয়া যাবে।”
স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘ আট বছর ধরে একই অবস্থায় পড়ে থাকা এ ব্রিজটি সংস্কারের মাধ্যমে তাদের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হোক।