একজন মানুষ একাধিক পরিচয়। দার্শনিক সাহিত্যিক, গবেষক প্রতিটি শাখায় তাঁর অবদান। প্রতিটা মুহূর্তকে বইয়ের সাথে লেখনির সম্পর্ক গড়েছেন। কালিগঞ্জে আদর্শিক ভাবধারা ও উচ্চমানের ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে যে ক’জন প্রখ্যাত ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ ব্যক্তি কাজ করছেন গাজী আজিজুর রহমান স্যার তাদেরর অন্যতম।
২০১৪ সালে একজন কবির পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি বলেন – দূর-গাছে সাধারণ মানুষ দেখে পাখি, আর কবি দেখে ওই পাখির নিচের ছায়া। তিনি আরো বলেন ১০০ লাইন পড়, উপলব্ধি করো, তারপর এক লাইন লেখ। এমন ভঙ্গিমায় লেখ যেন এর আগে আর কেউ লেখে নি।
বয়স বেড়েছে, চুল পেকেছে, শরীরের শক্তি কমেছে, অধ্যাপনা থেকে অবসরে, তবু জানার নেশা কমে নি। প্রচ্ছন্ন এখনো সু-চিন্তাশক্তি। তার প্রতিটা কথার মাঝে আছে সাহিত্যের রূপ-রস। যেন তিনি প্রকৃতির মাঝে অদ্ভুত সাহিত্যের গন্ধ খুঁজে পান।
মৃত্যু, আত্মহত্যা ছাড়াও বিশ্বসাহিত্য, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, আদর্শ ব্যক্তিত্ব, আধুনিকতা ও প্রকৃতি তার লেখনীর উপজীব্য।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ : প্রবন্ধ গবেষণা : বাঙলা ও বাঙালিয়ানা (২০২৫), ভ্রামণিক রবীন্দ্রনাথ (২০১৯), কবিদের কবি : জীবনানন্দ দাশ শামসুর রাহমান আবুল হাসান (২০১০ ও ২০১৮), বাংলার দ্বিতীয় রেনেসাঁ (২০১৮), স্বদেশ ভাবনা ও বঙ্গবন্ধু (২০১৭), সাহিত্যে সমাজবাস্তবতার ধারা (১৯৯২ ও ২০১৪), স্বেচ্ছামৃত্যুর করতলে কবি (১৯৯৬ ও ২০১৫), কালীগঞ্জের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ (২০১৪), সাহিত্য ও সিংহাসন (১৯৯৯), আধুনিক বাংলা উপন্যাসের বিষয় ও শিল্পরূপ (২০০৯), সাতক্ষীরার ভাষা ও শব্দকোষ (২০০৪), নোবেল সাহিত্য পুরস্কারের শতবর্ষ (২০০১); সম্পাদনা : মরণরে তুহু মম (২০০৪) এবং খান আনসার উদ্দীন আহমেদ রচনাবলী (১৯৯৯); উপন্যাস : জায়েদামঙ্গল (২০২০), বজ্রের বাঁশি (১৯৮৯), যোদ্ধার জতুগৃহ (১৯৯১), শামুক (১৯৯৬); নাটক : সক্রেটিস (১৯৯৩), চন্দ্রাবতী (১৯৯৬), কালো সূর্যের নিচে (১৯৯১), অভাজন (১৯৯৯)।
শীঘ্র প্রকাশিত হতে যাচ্ছে-গবেষণাগ্রন্থ : দেশ-বিদেশের সাহিত্য, প্রসঙ্গ : সাহিত্য শিল্প সংস্কৃতি এবং বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের স্বরূপ এই ৩টি গ্রন্থ।
সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন বেশ কয়েকটি পুরস্কার। উল্লেখযোগ্য হলো- সাতক্ষীরা সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার (১৯৯৫), ম্যান অব দি ইয়ার, বায়োগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট (যুক্তরাষ্ট্র, (১৯৯৮), কবি জসীম উদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার (২০০১), শিমুল-পলাশ সাহিত্য পুরস্কার (কলকাতা, ২০০৪), বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র পুরস্কার (২০০৭), লিনট পদক পুরস্কার (২০০৮), সিকানদার আবু জাফর পদক (২০১২) ও কবি সুকান্ত পুরস্কার (কলকাতা, ২০১৫)।
দীর্ঘদিন সম্পাদনা করেছেন ‘নদী’ নামের একটি সাহিত্য পত্রিকা যা তার গাজী প্রিন্টিং প্রেস থেকে প্রকাশিত হতো।
চেতনা রয়েছে যার সে কি পড়ে রয়? কক্ষনো না। চেতনা যার রয়েছে শেষ সময়েও আশার মাঝে বেঁচে থাকে সে।
৭৯ বছরে এসোও এই মানুষটি স্বপ্ন দেখেন আধুনিক কালীগঞ্জের। তাঁর ইচ্ছে জাগে কালিগঞ্জের ইতিহাস, সভ্যতা ও সফলতার গল্প পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে দিতে। খুব শিগ্রই কালীগঞ্জের ইতিহাস লেখার প্রতি ইচ্ছে পোষণ করেছেন রুদ্ধির মাঝে অফুরন্ত শক্তি ধারণকারী গাজী সাহেব।