স্মার্টফোনের মাধ্যমে অনলাইনে জুয়া খেলা এখন দেশের ছাত্র ও তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। এটি একটি নিছক আর্থিক ক্ষতি নয়, বরং একটি সুগভীর সামাজিক ক্ষত, যা তরুণদের স্বাভাবিক বিকাশ, নৈতিক মূল্যবোধ এবং ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের পথকে রুদ্ধ করে দিচ্ছে। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক জুয়া কোম্পানিগুলো অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন দিয়ে সহজেই তরুণদের লক্ষ্য করছে। এই ফাঁদে পড়ে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী তাদের পড়ালেখা ছেড়ে দিচ্ছে এবং পারিবারিক সহায়তার ওপর নির্ভরতা হারিয়ে ফেলছে। এটি কেবল তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একটি বড় বাধা। এই সমস্যার জাতীয় প্রতিকার হিসেবে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য। প্রথমত, অনলাইন জুয়া সংক্রান্ত বিদ্যমান আইনগুলোকে আরও কঠোর ও যুগোপযোগী করতে হবে, যাতে দোষীরা দ্রুত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়। দ্বিতীয়ত, পুলিশ ও সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে প্রযুক্তিগতভাবে আরও শক্তিশালী করতে হবে, যাতে তারা দ্রুত জুয়ার নেটওয়ার্কগুলো ভেঙে দিতে পারে।
তৃতীয়ত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এই বিষয়ে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। নিয়মিত কর্মশালা ও সেমিনারের আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনলাইন জুয়ার নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাউন্সেলিং বিভাগকে আসক্ত শিক্ষার্থীদের জন্য থেরাপি ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে সৃজনশীল ও গঠনমূলক কাজে নিযুক্ত করার জন্য খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং কারিগরি প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়াতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগই পারে এই ভয়াবহ আসক্তি থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে।