সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
দীঘিনালায় অবৈধ ইটভাটায় ইউএনও’র অভিযান ফরিদগঞ্জে দরিদ্র নারীকে ফাঁকি দিয়ে সরকারি চাল চুরির অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ‎দরিদ্র নারীদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে সমাবেশে এনে প্রতারণার অভিযোগ হাসান মামুন ছাড়া কেউ নয়, দশমিনা-গলাচিপা বিএনপির ঐক্যবদ্ধ ঘোষণা আশুলিয়ায় বকেয়া বেতন ও বন্ধ কারখানা চালুর দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ মাগুরায় পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সভা চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনের সমর্থনে প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত মাগুরায় ধানের দাম কম বিপাকে কৃষক বীরগঞ্জে ওয়ার্ল্ড ভিশনের প্রোগ্রাম কোয়ালিটি সেলফ রিভিউ ২ দিনের কর্মশালা অনুষ্ঠিত ফ্যাসিস্ট আ.লীগ পেশাজীবি সংগঠনগুলোকে লেজুড়বৃত্তিক করে রেখেছিলো

আমতলী উপজেলার নৌকার গ্রাম চুনাখালী বছরে কোটি টাকার নৌকা বিক্রি

আব্দুল্লাহ আল নোমান  / ৫৫
Update Time : সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪১ অপরাহ্ন

আমতলীর চুনাখালী গ্রামে নৌকা তৈরি করছেন কারিগররা
গ্রামের ভেতর ঢুকলেই কানে আসে ঠকঠক শব্দ-এ যেন কাঠের সঙ্গে মানুষের জীবনের তালমিলানো এক ছন্দ। সূর্য ওঠার আগেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন কারিগররা, কেউ কাঠ কাটছেন, কেউ পেরেক ঠুকছেন, কেউবা ঘষে দিচ্ছেন নতুন নৌকার গায়ে মসৃণতা।
বছরের বারো মাসই চলে এ কর্মযজ্ঞ। বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের পূর্ব চুনাখালী গ্রাম এখন নৌকা তৈরির প্রাণকেন্দ্র নৌকার গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বহুদূর।
গ্রামের প্রায় ৯ শতাধিক পরিবারের মধ্যে শতাধিক পরিবার বংশপরম্পরায় নৌকা তৈরির পেশায় জড়িত। প্রায় দুই শতাব্দী ধরে এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন তারা। বছরে প্রায় কোটি টাকার নৌকা বিক্রি হয় এখানকার কারিগরদের হাতে তৈরি পণ্যে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘরের পাশে অস্থায়ীভাবে টানানো পলিথিনের নিচে চলছে নৌকা তৈরির ব্যস্ততা। শিশু থেকে বৃদ্ধ -সবাই কোনো না কোনোভাবে যুক্ত এই পেশায়। ভোরে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙতেই শুরু হয় কাজ, চলে গভীর রাত পর্যন্ত।
কারিগররা জানান, এখানকার তৈরি নৌকাকে স্থানীয়ভাবে ডিঙি বলা হয়। অল্প পানিতেও চলতে পারে এসব নৌকা। কৃষিকাজ, মাছ ধরা কিংবা হাটবাজারে যাতায়াত—সব ক্ষেত্রেই এই নৌকার রয়েছে ব্যাপক ব্যবহার। প্রতিটি নৌকার দাম নির্ধারণ হয় আকার ও কাঠের মান অনুযায়ী।
প্রবীণ কারিগর আবদুল বারী ও মুমিন বলেন, প্রায় ২০০ বছর আগে লালু মিস্ত্রি নামে একজন এই গ্রামে প্রথম নৌকা তৈরি শুরু করেন। তাঁর হাত ধরেই গ্রামের অন্য পরিবারগুলো এ পেশায় আসে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম (২৫) জানান, বর্ষা মৌসুমে অর্ডারের চাপ বেড়ে যায়। কৃষক, জেলে এমনকি যাত্রী পরিবহনের জন্যও তখন ব্যাপক চাহিদা থাকে।
তিনি বলেন, এ বছর আমি প্রায় ১৫০টি নৌকা তৈরি করেছি। বিক্রি হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মতো।
একটি ১০-১২ হাত নৌকা তৈরি করতে খরচ পড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা, বিক্রি হয় পাঁচ হাজার টাকায়। খরচ বাদে মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে।
প্রতি মঙ্গলবার পটুয়াখালীর কলাপাড়া, মহিপুরসহ বিভিন্ন বাজারে এসব নৌকা বিক্রি হয়। তাছাড়াও বরগুনার বেতাগী, পাথরঘাটা, বামনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পাইকাররা এখান থেকে নৌকা কিনে নিয়ে যান। মাসে খরচ বাদে করেন ৩০-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয় আমার।
কারিগর নূর জালাল, মবিন ও রিয়াজুল জানান, তারা চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। ৮-৯ হাতের নৌকার জন্য মজুরি পান ৯০০ টাকা, আর ১০-১২ হাতের জন্য ১১০০ টাকা।
চুনাখালী গ্রামের ইউপি সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, গ্রামের প্রায় ৫০টি পরিবার পেশাগতভাবে নৌকা তৈরি করেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আলাদা কোনো বরাদ্দ না থাকলেও ব্যক্তিগতভাবে আমরা সহায়তা করি।
২নং কুকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন আহমেদ মাসুম তালুকদার বলেন, “নৌকা কারিগরদের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। তবে কেউ অসুস্থ হলে বা বিপদে পড়লে আমরা ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করার চেষ্টা করি।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান খান বলেন, এরা আসলে স্থানীয় উদ্যোক্তা। তাদের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে সরকার সহজ শর্তে ঋণ ও প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category