আধুনিক যুগেও রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে শনিবার ও বুধবার বসে মানুষ বেচাকেনার হাট। আমরা সবাই জানি গরু, ছাগলের হাট, কাঁচা বাজারের হাট, কাপড় বাজারের হাট, পেঁয়াজ রসুনের হাট, পাট ওধানের হাট হয়ে থাকে। কিন্তু এমন একটি হাটে কথা আমরা কেউ জানিনা সেটি হলো মানুষ বিক্রি ব্যতিক্রমী হাট। অবাক হলেও যে সত্য। গোয়ালন্দে রেলষ্টশন প্লাটফর্ম এর উপর এমন এক ব্যতিক্রমী হাট বসে যেখানে বেচা কিনা হয় শ্রমজীবি মানুষ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আশা দিনমজুররা নিজেদের শ্রম বিক্রি করে থাকেন শক্তির ভিত্তিতে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে,, জীর্ণ পোশাকে আর ব্যাগ হাতে তার মধ্য রয়েছে সরঞ্জামাদি নিজের দরদাম কষছেন শ্রমজীবী মানুষ। নিম্ন আয়ের মানুষ দু’বেলা রুটি রুজির জন্য প্রতিদিন ভোর ও সন্ধ্যায় হাজির হন গোয়ালন্দ প্ল্যাটফর্মে। শনিবার ও বুধবার সকাল থেকেই হাটে আসতে থাকে শ্রমজীবী মানুষ। সারাদিনই হাটে বিক্রি হয় এ সকল শ্রমজীবী মানুষ। দীর্ঘ দিন ধরে এই হাটে শ্রমজীবী মানুষের বেচাকেনা হয়ে থাকে। কখনো ভালো দামে নিজেকে বিক্রি করে, আবার কখনো নিম্ন দামে বিক্রি করা হয়, কখনো আবার হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয় বাড়িতে। কেউ আবার ঋণের দায়ে বাড়িতে যেতে চায় না। সে সকল শ্রমজীবী মানুষ স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম শুয়ে দিন রাত কাটায় কখন যেন নিজেকে বিক্রি করতে পারবেন।কাছে টাকা না থাকায় কোন রকম চিরা রুটি কলা এগুলো খেয়েই প্ল্যাটফর্মে রাত্রিযাপন করে থাকে শ্রমজীবী মানুষ। আজ গোয়ালন্দ শ্রম বাজারের ২ শত শ্রম বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও শ্রমজীবী মানুষ হয়েছে প্রায় ৩ হাজারের উপরে হতাশায় রয়েছে অনেকে শ্রমজীবী মানুষ। বিক্রি হতে না পারলে ঋণের টাকা পরিশোধ করবো কিভাবে পরিবার চালাবো কিভাবে। দুশ্চিন্তায় নিয়ে বসে রয়েছে হাটে। যে দামে নিজেকে বিক্রি করার কথা ছিল সে দামে বিক্রি করতে পারছে না আরো হতাশায় বেড়ে গেছে তাদের মধ্যে। আজ বিক্রি না হতে পারলে কেউ হতাশায় নিয়ে বাড়িতে ফিরবেন। কেউবা আবার ঋণের চাপে বাড়িতে যাবে না, এই প্লাটফর্মে রাত্রিযাপন করবেন। কেউ পাশের আবাসিকে হোটেলে অল্প টাকায় রাত থাকবেন।
শ্রমজীবী মজিবর মিয়া জানান, এই হাটে লোক লাগবে ১০০ সেখানে হয়েছে ৩ হাজারেরও বেশি। তারপর আবার শ্রমের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এ হাটে নিজেকে যদি বিক্রি করতে না পারি তাহলে আর বাড়িতে যাওয়া হবে না।পাওনাদাররা এসে টাকা চাইবে। সেজন্য বাড়িতে যাচ্ছি না। আশেপাশের কোন বোর্ডিং এ থাকবো।
কাল সকালে যদি নিজেকে বিক্রি করতে পারি তাহলে কয়েকদিন কাজ করে টাকা নিয়ে বাড়িতে ফিরবো।
আকাশ শেখ, মোস্তাক,লিয়াকত, কাশেম, বলেন,,কুষ্টিয়া, কুমারখালী, বালিয়াকান্দি, খোকসা, রাজশাহী, দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, জীবননগর সহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন ও প্রতি হাটে আসে শত শত শ্রমিক। কেউ আসে পেঁয়াজ রোপন করতে, কেউ আসে মাটি কাটতে, কেউ আসে রসুন রোপন করতে, কেউ আসে ধান কাটতে তাদের কাজের ধরন অনুযায়ী তাদেরকে পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। কেউ চাইলে ৫ দিন ১০ দিন ১৫ দিন ২০ দিন বা ১ মাসের পর্যন্ত চুক্তিতে কাজ করতে পারেন।
গোয়ালন্দ সাংবাদিক ফোরামের সদস্য সচিব মোজাম্মেল হক জানান, এই হাটে বিক্রি হয় শ্রমজীবী মানুষের ঘাম শ্রম আর জীবিকার সংগ্রাম। এখানে দেখা মিলে জীবনের বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। এ এক ব্যতিক্রম হাট যেখানে জীবিকার প্রয়োজনে তৈরি হয় শ্রম বাজার।