বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার শাহজাহান রোডের ৩২/২/এ নম্বর ‘সেল আমিনাস ড্রিম’ ভবনের ফ্ল্যাটে সংঘটিত হৃৎকম্পকারী হত্যাকাণ্ডে প্রধান আসামি গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চলতি মাসের গত সোমবার সকালে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনায় গৃহবধূ লায়লা আফরোজ ও তার কিশোরী মেয়ে নাফিসা নাওয়াল বিনতে আজিজকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার অবস্থানের খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে ঝালকাঠির নলছিটি থেকে তাকে আটক করে পুলিশ।
এলাকার সবচেয়ে আলোচিত এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসে পুলিশ বিভাগ। পুলিশ বিভাগের বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আয়েশাকে নলছিটি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং দ্রুতই তাকে ঢাকায় এনে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করবে পুলিশ।
বিব্রতকর এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ বিবরণ শোনা মর্মান্তিক। তদন্তকারী সংস্থাগুলির মতে, আয়েশার বিরুদ্ধে যে আকাঙ্ক্ষা ছিল তা অনেকটা অমানবিক। পুলিশের একাধিক বিভাগ যেমন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), র্যাব, সিআইডি এবং পিবিআইসহ আরও সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছেন ঘটনার জট খোলার উদ্দেশ্যে।
শুরুর দিকে আয়েশা পলাতক ছিল। ঘটনার পিছনে কেবল ছিনতাই বা চুরির উদ্দেশ্যে নাকি অন্য কোনো গভীর কারণ রয়েছে, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সুরতহাল প্রতিবেদনে জানানো হয়, লায়লা আফরোজের (৪৮) শরীরের বিভিন্ন অংশে অন্তত ৩০টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা মানুষের বিশ্বাস করার মতো নয়। তার ১৫ বছর বয়সী মেয়ে নাফিসার শরীরে ছয়বার ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
অভিযুক্ত আয়েশার বয়স ২০ বছর। তার পরিচয়ে বেশ কিছু জটিলতা ছিল, কারণ মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত নারী জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় বসবাস করতেন। অনেক বাসিন্দা তাকে ‘আয়েশা’ নামে জানলেও কেউ কেউ ‘আসমা’, আবার কেউ তাকে ‘মুখপোড়া’ হিসেবে চিনতেন। তার সঠিক পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
লায়লা আফরোজের স্বামী এ জেড আজিজুল ইসলাম ফিজিক্সের শিক্ষক ছিলেন, সাধারণত শান্তিপ্রিয় একজন মানুষ হিসেবে পরিচিত। তাদের একমাত্র মেয়ে নাফিসা নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং অত্যন্ত মেধাবী। মা ও মেয়ের দাফন নাটোর সদর থানার দক্ষিণ বড়গাছা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে সম্পন্ন হয়, যা তাদের আত্মীয়স্বজনদের মাঝে কান্নার স্রোত সৃষ্টি করে।